দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মোবাইরের ব্যবহার দিনকে দিন বাড়ছে। ক্রমেই আমরা পুরোপুরিভাবে মোবাইলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। এমন এক সময় গবেষকরা বলেছেন, বেশি মোবাইল ব্যবহারে ক্যান্সার অনিবার্য!
দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণা চলছিলো। মোবাইলের যথেচ্ছা ব্যবহারের মানব দেহের যে সব ক্ষতি হতে পারে তা নিয়েই মূলত গবেষণা চলছিলো। গবেষকদের আশঙ্কাও ছিলো জোরদার। এতোদিনে একেবারে হাতেনাতে পরীক্ষামূলকভাবে সেটি প্রমাণিত হয়ে গেলো। গবেষকরা বলেছেন, মোবাইল ফোন বড়ই বিপজ্জনক।
গবেষকরা বলেছেন, মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় যে রেডিও-তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে, তা হতে ম্যালিগন্যান্ট ক্যান্সার অনিবার্যই। এমনকী, তা আমাদের ব্রেন ক্যান্সার কিংবা ব্রেন টিউমারের সম্ভাবনাও বহু গুণ বাড়িয়ে দেয়।
তাছাড়া সব সময় চালু টেলিভিশন সেটের সামনে বসে থাকলেও ছড়িয়ে পড়া রেডিও-তরঙ্গ আমাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাকে অনেক গুণ বাড়িয়ে তুলতে পারে।
আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’-এর তত্ত্বাবধানে হালের একটি গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী ওই তথ্য দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ওই ফলাফল প্রকাশিত হয় ‘নেচার’ জার্নালে।
এরপর বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোড়ন শুরু হয় গোটা মার্কিন মুলুকে। ওয়াশিংটনে, ‘ফেডারাল কমিউনিকেশন্স কমিশন’ (এফসিসি) একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলেছে, তারা এ ব্যাপারে শীঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
আড়াই কোটি ডলার খরচ করে ওই গবেষণাটি চালানো হয় ‘ন্যাশনাল টক্সিকোলজি প্রোগ্রামে’।
ওই গবেষণায় দেখা যায় যে, রেডিও-তরঙ্গে মার্কিন মুলুকে টেলিভিশন সম্প্রচার করা হয় কিংবা চালানো হয় উপগ্রহ মারফত যোগাযোগ ব্যবস্থায়, সেই রেডিও-তরঙ্গ অনিবার্যভাবেই ম্যালিগন্যান্ট ক্যান্সারের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়।
ওই গবেষণায় পরীক্ষা চালানো হয় ইঁদুরের ওপর। তাতে দেখা গেছে, ওই বিশেষ রেডিও-তরঙ্গ পুরুষ ইঁদুরের শরীরে দু’ধরনের ম্যালিগন্যান্ট ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে।
মূল গবেষক ক্রিস্টোফার পোর্টিয়ার তাঁর গবেষণাপত্রে বলেছেন, যে রেডিও-তরঙ্গ হতে পুরুষ ইঁদুররা ম্যালিগন্যান্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে, আমাদের রোজকার ব্যবহার করা মোবাইল ফোন হতে সেই রেডিও-তরঙ্গই ছড়িয়ে পড়ে নিয়মিতভাবে। সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তিতে বানানো মোবাইল ফোন হতেও ছড়িয়ে পড়ে ওই একই রকম রেডিও-তরঙ্গ!
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী গবেষক, ক্যান্সার রোগ বিশেষজ্ঞ, অনাবাসী ভারতীয় তরুণ অগ্রবাল ই-মেলে আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন, ‘‘ওই বিশেষ রেডিও-তরঙ্গের মাত্রা বাড়ানো হলে, ইঁদুররা আরও বিরল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে, খুব দ্রুতহারে। সেই ক্যান্সার কিংবা টিউমারটি হচ্ছে তাদের মস্তিষ্কে। এটিকে বলে ‘গিওমাস’।
তারা আক্রান্ত হচ্ছে আরও নানা ধরনের ক্যান্সারে। তাদের হৃদযন্ত্রের ওই ক্যান্সারকে বলা হয় ‘শোয়্যানোমাস’। তবে ওই রেডিও-তরঙ্গের স্বাভাবিক মাত্রায় (যা প্রতিদিন মোবাইল ফোন হতে ছড়িয়ে পড়ে) ওই দুই ধরনের ক্যান্সারে ইঁদুরগুলো আক্রান্ত হচ্ছে না।
গবেষকরা বলেছেন, মানুষের ক্ষেত্রেও ওই রেডিও-তরঙ্গের প্রভাব একই রকম হবে। পৃথক হওয়ার অন্তত কোনও বৈজ্ঞানিক কারণ নেই।’’
ওই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর তুমুল হই চই পড়ে গেছে মার্কিন মুলুকে। যে কারণে যারা সব সময় মোবাইল ব্যবহার করেন, তাঁদেরকে সাবধানে থাকতে হবে!