দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রযুক্তি মানুষের জীবন যাত্রার অনেক উন্নতি করেছে সেটি যেমন সত্যি। পাশাপাশি আরও একটি সত্য হলো প্রযুক্তি ক্রমেই মানুষকে অন্ধকার জগতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অন্ধকার জগতের দিকে নিয়ে যাওয়া প্রযুক্তির একটি হলো মোবাইল।
আমরা সকলেই জানি প্রযুক্তির অনেক সুযোগ সুবিধা রয়েছে। প্রযুক্তির সুবাদে আজ বিশ্ব হাতের মুঠোয়। তবে অবাধ প্রবাহের কারণে এইসব প্রযুক্তি আবার মানুষের জন্য অনেক বিড়ম্বনা ও নানা সমস্যার কারণে পরিণত হয়েছে। যাকে বলা যায় মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে অনেক বিপদও ডেকে নিয়ে আসতে পারে। যেমনটি হয়েছে মোবাইলের ক্ষেত্রে।
সত্তরের দশকে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক ব্যাপক পরিবর্তন এনে দিয়েছিল মোবাইল ফোনের আবিষ্কার। তারপর সময় যতো গড়িয়ে যাচ্ছে ততোই মোবাইলের রূপ বদলেছে, বদলেছে তার কাজ করার ধরন।
বর্তমানে মোবাইল মানে শুধু কথা বলার প্রযুক্তি নয়, এটি এখন বলা যায় আমাদের সারা দুনিয়া। আজকের দিনে টিকে থাকতে গেলে মোবাইলের দরকার অত্যাবশ্যক। তবে বিপদটা কোথায় তা জানেন কি?
আমরা যেভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছি, তাতে আমাদের চোখের ওপর মারাত্মকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যে কারণে কমছে দৃষ্টিশক্তি। শুধু তাই নয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো দৃষ্টিশক্তি একেবারে কমে গিয়ে অন্ধত্বের সমস্যাও দেখা দিচ্ছে।
বিগত এক দশকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, মোবাইলের কারণে চোখের ক্ষতি যে শুধুমাত্র প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যেই আটকে থাকছে, তা কিন্তু নয়। ছোটরাও বাদ পড়ছে না এমন ক্ষতি থেকে। তবে প্রশ্নটা হলো, কীভাবে মোবাইল আমাদের চোখকে নষ্ট করছে?
এ বিষয়ে বলা হয়েছে, নীল আলোই ক্ষতির মূল কারণ। মোবাইলের পর্দা হতে যে নীল আলো বরিয়ে আসে, সেটি আমাদের চোখের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সাধন করে। ১০ হতে ১৫ মিনিট টানা এই আলো সরাসরি চোখের উপর পড়লে, তা চোখের অন্দরে থাকা পানির স্তর শুকিয়ে যেতে শুরু করে। সেইসঙ্গে ক্রমান্বয়ে চাপ বাড়তে থাকে রেটিনার ওপর। যে কারণে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে থাকে।
মোবাইল শরীরেরও মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। নীল আলোর প্রভাবে শরীরের অন্দরে মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ মারাত্মকভাবে কমে যায়। যে কারণে ঘুম কমতে শুরু করে। আমাদের প্রায় সকলের জানা আছে যে, ঘুম ঠিক মতে না হলে হার্ট ও মস্তিষ্কের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে।
এই মস্তিষ্কের চাপের কারণে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। এখন নিশ্চয় আপনাদের বুঝতে বাকি নেই যে, মোবাইল একদিকে যেমন আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে দিচ্ছে, ঠিক তেমনি ধীরে ধীরে এটি মানুষকে মৃত্যুর মুখেও ঠেলে দিচ্ছে।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে কিভাবে এটি থেকে বাঁচবেন। এখন যে পরিস্থিতি তাতে মোবাইল ছাড়া দিন পার করা এক কথায় অসম্ভব ব্যাপার। তাই কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা ছাড়া উপায় নেই। যেমন ভুলেও অন্ধকারে কখনও মোবাইল ব্যবহার করবেন না। এমনটা করলে চোখের মারাত্মক ক্ষতি হবে।
ঘুমাতে যাওয়ার আগে মোবাইল ব্যবহার করা চলবে না। সেইসঙ্গে সেটিং-এ গিয়ে মোবাইল স্কিণের ব্রাইটনেস কিছুটা কমিয়ে রাখবেন, তাতে নীল আলোর প্রভাব কিছুটা হলেও কম পড়বে।
আবার কিছু কিছু মোবাইল ফোনে দেখবেন ‘লাইট রিডাকশ’ বলে একটা অপশন রয়েছে, সেটা অন করে দিলেই দেখবেন স্ক্রিণের ব্রাইটনেস অনেকটা কমে যাবে। এক্ষেত্রে আরেকটি জিনিস আপনাকে মাথায় রাখতে হবে, আর তা হলো যতোটা সম্ভব মোবাইল ফোনের ব্যবহার কম করার চেষ্টা করতে হবে। তাতে করে কিছুটা হলেও ক্ষতির আশঙ্কা কমবে।
আপনি কখনই টানা মোবাইল ব্যবহার করবেন না। বরং কিছু সময় পর পর কয়েক মিনিট চোখটা মোবাইলের স্ক্রিণের থেকে সরিয়ে নিন। যেমন ২০ মিনিট মোবাইল ঘাঁটলে, আবার ২০ সেকেন্ড চোখকে আরাম দিন। তাতে করে ড্রাই আইয়ের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা কমে আসবে।
এভাবে মোবাইলের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে আমাদের সতর্ক হতে হবে এবং সেইসঙ্গে মোবাইল ব্যবহারে আরও সতর্ক হতে হবে। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া মোবাইল যতোটা সম্ভব কম ব্যবহার করতে হবে। তবেই এই ক্ষতিকর প্রভাব থেকে কিছুটা হলেও রেহায় পাওয়া যাবে।