দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেক রকম বৃষ্টির কথা শুনেছি, কিন্তু এবার শোনা গেলো মাছ বৃষ্টির কথা! বৃষ্টির পানির সাথে মাছ পড়ে এমন আজব খবর পাওয়া গেছে অনলাইন সূত্রে।
২০১০ সালের কথা। অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলের লাজামানুতে এক পশলা বৃষ্টি হয়েছিল ফেব্রুয়ারির ২৫ ও ২৬ তারিখের মাঝামাঝি এবং মাঝরাতে। আর ওই বৃষ্টিতে আকাশ থেকে নেমে এল হাজার হাজার ছোট ছোট সাদা মাছ। লাজামানুর যেসব মানুষ সে রাতে জেগে ছিল আর বৃষ্টিতে ভিজেছিল, তাদের তো দারুণ মজা হয়েছিল। মনের আনন্দে মাছ কুড়িয়ে ঝুড়ি ভরিয়ে ফেলেছিল। তবে মাছগুলো কিন্তু জ্যান্ত ছিল না। মনে হচ্ছিল ফ্রিজে রাখা মাছ কেও উপুড় করে ঢেলে দিয়েছে আকাশ থেকে!
এর আগের এক কাহিনী, ১৮৬১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিঙ্গাপুরে হয়েছিল মাছবৃষ্টি। তবে এর কারণ ছিল ভূমিকম্প। আর এই মাছবৃষ্টি নিয়ে রীতিমতো উৎসব। এবার মাছবৃষ্টি উৎসবের গল্প। বিশ্বাস হচ্ছে না সত্যি সত্যি মাছবৃষ্টি উৎসব হয় হন্ডুরাসে। ১৯৮৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার ইপসউচ ও ১৯৬৬ সালে নর্থ সিডনিতেও মাছবৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৮৯ সালে হয়েছিল প্রায় ৮০০ সার্ডিন মাছের বৃষ্টি।
দক্ষিণ আর উত্তর আমেরিকা- এই দুই মহাদেশের ঠিক মাঝের দেশটি হন্ডুরাস। দেশটির ইয়োরো ডিপার্টমেন্টের রাজধানী ইয়োরো। প্রতিবছর মে আর জুলাই মাসে ইয়োরোর আকাশ ঢাকা থাকে কালো মেঘে। প্রচুর বজ্রপাত হয়। সঙ্গে তুমুল বৃষ্টিও। বৃষ্টি থামার পর ইয়োরোর মানুষজন দেখে মাটির উপর পড়ে আছে প্রচুর জ্যান্ত মাছ। গ্রামবাসীরা ওসব মাছ তুলে নিয়ে রান্না করেও খায়। এমন মাছবৃষ্টিতে উৎসব না করে পারা যায় সেজন্যই ১৯৯৮ সাল থেকে মাছবৃষ্টি উৎসব পালন করে আসছে হন্ডুরাসের ইয়োরোর মানুষ। ২০০৬ সালের ১৬ জুলাই হন্ডুরাসের জাতীয় টেলিভিশনের রিপোর্টেও বলা হয়, বছরে কমপক্ষে দু’বার মাছবৃষ্টির কথা। এর আগে ১৯৭০ সালে মাছবৃষ্টির খবর নেওয়ার জন্য ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি প্রতিনিধি পাঠায় হন্ডুরাসে। আর তাদের রিপোর্টে জানা যায় মাছবৃষ্টির খবরটি সঠিক। বৃষ্টি হয়ে যেসব মাছ আকাশ থেকে পড়ে সেগুলো লম্বায় কোনওটাই ছয় ইঞ্চির বেশি নয়। মাছবৃষ্টির এই উৎসবের নাম ‘ফেস্টিভাল ডি লুভিয়া পেসেস’।
হন্ডুরাসের মাছবৃষ্টি নিয়ে গবেষকরাও কিন্তু নড়েচড়ে বসেছেন। খুব সাদামাটা একটা ব্যাখ্যাও পাওয়া গেছে। আর সেটা হচ্ছে আবহাওয়ার প্রভাবেই এমনটা হয়।
ইয়োরো থেকে আটলান্টিক মহাসাগরের দূরত্ব মাত্র ১৪০ মাইল। আটলান্টিক থেকেই সাগরের পানি বাষ্পীভূত হয়ে আকাশে ওঠার সময় ছোট ছোট মাছও তুলে নেয় আকাশে। তারপর মেঘের সঙ্গে বাতাসে ভেসে চলে আসে ইয়োরোর আকাশে। আর বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে ইয়োরোর মাটিতে। তবে অন্য এক ব্যাখ্যায় বলা হয়, স্বাদু পানির মাছেরা জোয়ারের সময় নদী থেকে সাঁতরে চলে আসে। তারপর বৃষ্টির সময় বাতাসের সঙ্গে ভাসতে ভাসতে এসে পড়ে ইয়োরোতে।
হণ্ডুরাসের এই মাছবৃষ্টি হচ্ছে অনেক বছর ধরে। তবে কবে থেকে হচ্ছে, সেটা সঠিক জানা যায়নি। মাছবৃষ্টি নিয়ে কিছু হন্ডুরাসবাসীর রয়েছে এক লৌকিক বিশ্বাস। আঠার শতকে হন্ডুরাসে এসেছিলেন ক্যাথলিক মিশনারি যাজক ফাদার জোসে ম্যানুয়েল সুবিরানা। এসেই তিনি দেখেন হন্ডুরাসের এ অঞ্চলের মানুষ ভীষণ দরিদ্র। খাবারের বড্ড অভাব তাদের। সৃষ্টিকর্তার কাছে তাদের এই দারিদ্র ঘোচানোর জন্য আকুল প্রার্থনা জানালেন যাজকবাবা। আর তাতেই ঘটে গেল অদ্ভুত ব্যাপার। শুরু হল মাছবৃষ্টি। সৃষ্টিকর্তাই বৃষ্টির মতো করে মাছ পাঠিয়েছেন আকাশ থেকে।
১৯৪৭ সালের অক্টোবরের ২৩ তারিখ যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানায় মাছবৃষ্টি হয় গালফ অব মেক্সিকোয়। ১৩০ কিলোমিটারের চেয়েও লম্বা এলাকায়। ১৯৯৫ সালের গিনেস বুক অব অডিটিসে এর উল্লেখ আছে। এসব মজার মজার কাহিনী আসলে পড়তে ভালই লাগে। তথ্যসূত্র- অনলাইন