দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ যে কোন দেশের চলচ্চিত্র জগতে ‘রাজনৈতিক ছবি’ বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং আগ্রহ উদ্দীপক। কেননা, সেসব ছবির মাধ্যমে সেই দেশের রাজনৈতিক কাঠামো এবং রাষ্ট্রের আইন, শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ ‘ভারত’ এর চলচ্চিত্র জগত ‘বলিউড’ এ তৈরি হয়েছে প্রচুর রাজনৈতিক ছবি। চলুন জেনে নেয়া যাক, কাহিনী এবং অভিনয়ের ভিত্তিতে সেসব ছবি থেকে সেরা দশ রাজনৈতিক ছবি সম্পর্কে।
১) আন্ধি ( ১৯৭৫ ): ধারণা করা হয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জীবনীর উপর ভিত্তি করে গীতিকার এবং পরিচালক গুলজার ‘আন্ধি’ ছবি নির্মাণ করেন। যদিও বাস্তবে ছবিটি রাজনীতিবিদ তার্কেস্বরী শর্মার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার থেকে অনুপ্রেরণায় নির্মিত। ছবিটি একইসাথে রোমান্টিক এবং রাজনৈতিক ঘরোনার। ছবির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে একজন রাজনীতিবিদ এবং একজন সাধারণ নারীর প্রেমের মধ্য দিয়ে। এই ছবিতে অভিনয় করেছেন সুচিত্রা সেন এবং সঞ্জীব কুমার। ছবিটি ১৯৭৫ সালেই নিষিদ্ধ হয়েছিলো, যদিও জনতা পার্টি ক্ষমতায় আসার পর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
২) কালযুগ ( ১৯৮১ ): শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত কালযুগ ছবিটি সরাসরি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে না হলেও প্রতিবেশী দুই ব্যবসায়ী পরিবারের দ্বন্দ্ব, ক্ষমতার অপব্যবহার, সংঘাত – সব মিলিয়ে স্বার্থক রাজনৈতিক ছবি হিসাবেই আখ্যায়িত করা যায়। এই ছবিতে অভিনয় করেন শশী কাপুর, সুপ্রিয়া পাঠক, রেখা প্রমুখ এবং ১৯৮২ সালে সেরা ছবি হিসাবে এই ছবিটি ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার লাভ করে।
৩) শূল ( ১৯৯৯): রাম গোপাল ভার্মা পরিচালিত জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত এই ছবিটিতে বিহার রাজ্যের রাজনীতি ও অপরাধের যোগসূত্র এবং রাজনীতির অপরাধীকরণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ছবিতে মানোজ বাজপেয়ী অভিনয় করেছেন একজন পুলিশ অফিসার হিসাবে এবং একজন সাইকোপ্যাথ অপরাধী এবং রাজনীতিবীদ বাচ্চু যাদব চরিতে অভিনয় করেন সায়াজী সিন্দে।
৪) সত্য ( ২০০৩ ): একজন খারাপ রাজনীতিবীদের জেলে যাওয়ার পর তার জায়গা নেয় তার নিগৃহীত স্ত্রী এবং রাজনীতির সাথে আন্ডারওয়ার্ল্ড, ব্যবসায়ী স্বার্থ এবং অপরাধের যোগসূত্র আবিষ্কার করে তার স্ত্রী। যদিও তার স্ত্রী তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে থাকে, তবুও ক্ষমতার দ্বন্দ্বের বিপদ নিয়ে আশংকিত থাকে সবসময়। রাজনীতিবিদের স্ত্রী হিসাবে অভিনেত্রী রাবিনা ট্যান্ডন তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে পাওয়ারফুল অভিনয় করেছেন এই ছবিতে।
৫) যুবা (২০০৪): বিখ্যাত পরিচালক মনি রত্নম পরিচালিত যুবা সিনেমাটির মাধ্যমে শিক্ষিত যুবকদের রাজনীতিতে আসার প্রেরণা দেওয়া হয়েছে। ছবিতে তিনজন যুবক সমাজের আলাদা আলাদা জায়গার এবং আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্যের, যারা কলকাতার হাওড়া ব্রীজে একটি ঘটনার সম্মুখীন হয় এবং নিজেদের জীবন বদলে ফেলে। এই তিন চরিত্রে অভিনয় করেন অভিষেক বচ্চন, অজয় দেবগন এবং বিবেক ওবেরয়। রাণী মুখার্জী এই ছবিতে অভিনয় করে ফিল্ম ফেয়ার শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেত্রী পুরষ্কার পান।
৬) হাজারো খুয়াইস অ্যায়সে ( ২০০৫): তিনজন যুবকের আশা, উচ্চাকাঙ্ক্ষার পারদের উপর ভিত্তি করে তাদের আদর্শ, সমাজতান্ত্রিক মতামত এবং নকশালবাদ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন যে দৃষ্টিভঙ্গি পরিচালক এই ছবিতে ফুটিয়ে তুলেছেন তাতে ছবিটি সেরা রাজনৈতিক ছবির মর্যাদা পেয়েছে! ছবিটি মুক্তির ছয় মাসেই ১২ টি ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রদর্শিত হয়।
৭) সরকার রাজ ( ২০০৮): ‘দ্য গডফাদার’ ছবির অনুপ্রেরণায় রামগোপাল ভার্মার ‘সরকার রাজ’ ছবিটিতে শক্তিশালী রাজনৈতিক পরিবারের অপরাধ, আত্মীয়করণ, লবিজম এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এতে অভিনয় করেছেন অমিতাভ বচ্চন, অভিষেক বচ্চন, ঐশ্বরিয়া রায় বচ্চন প্রমুখ।
৮) গুলাল ( ২০০৯ ) : অনুরাগ কাশ্যপ পরিচালক এই ছবিটি ছাত্ররাজনীতির উপর নির্মিত। একই সাথে রাজনৈতিক নেতার ক্ষমতার অপব্যবহার, অবিচার এবং ভন্ডামীর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে। নেগেটিভ চরিত্রে কে কে মেনন IIFA পুরষ্কার প্রাপ্ত হন এই ছবিতে অভিনয় করে।
৯) রান ( ২০১০ ): রাম গোপাল ভার্মা পরিচালিত এবং সুপারস্টার অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ‘রান’ ছবিটিতে মিডিয়া জগতের সাথে রাজনৈতিক সংগঠনের যোগসূত্র, অপরাধ, স্ক্যান্ডাল এবং ক্ষমতার লড়াইয়ে মিডিয়ার দৌড় ফুটিয়ে তুলা হয়েছে। ছবিতে বিগ বি একটি সংবাদ চ্যানেল প্রধানের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
১০) রাজনীতি (২০১০): প্রকাশ ঝা পরিচালিত রাজনীতি ছবিটি একটি রাজনৈতিক থ্রিলার। এক ঝাঁক সুপারস্টার রণবীর কাপুর, অজয় দেবগন, নানা পাটেকর, ক্যাটরিনা কাইফ প্রমুখ অভিনীত ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক শত্রুতা নিয়ে জটিল প্লটের এই ছবিটি ঐ বছরে অনেকগুলো ক্যাটাগরীতে ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার প্রাপ্ত হয়।
তথ্যসূত্রঃ ম্যানস এক্সপি