দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রযুক্তিকে আরও সহজলভ্য করার জন্য বিজ্ঞানীদের গবেষণার শেষ নেই। তাঁরা নিত্যদিন গবেষণায় ব্যস্ত। এমনই এক আবিষ্কার হলো এবার মল থেকে চার্জ হবে মোবাইল!
লাইপসিগের বিজ্ঞানীরা এমন একটি গবেষণা চালাচ্ছেন যাতে ময়লা থেকেই চার্জ হবে মোবাইল। লাইপসিগের হেল্মহলটস
হলো পরিবেশ গবেষণা কেন্দ্রের একটি শৌচাগার। এই শৌচাগারে যা জমা হয়, তা ব্যবহার করা হয় গবেষণার কাজে। এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির নাম ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্টাল মাইক্রোবায়োলজি। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখছেন যে, এই ইলেক্ট্রোঅ্যাকটিভ ব্যাকটেরিয়া দিয়ে মল হতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব কি-না।
জানা গেছে, এক্সপেরিমেন্টের পূর্বে স্যাম্পল নিতে হয়। লাইপজিগের জার্মান বায়োমাস গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক ইয়র্গ ক্রেটসমার বলেছেন, গোড়ায় কিছুটা ঘেন্না হতো। তবে দু-তিনবার করার পর অভ্যেসে পরিণত হয়েছে। আমরা এটাকে বলি সাবস্ট্রেট, এক্সপেরিমেন্টে যা কাজে আসে। আমাদের সহকর্মীরা নিয়মিতভাবে এই পায়খানা ব্যবহার করে। যে কারণে আমরা পর্যাপ্ত সাবস্ট্রেট পেয়ে থাকি।
গবেষকরা জানিয়েছেন, মানুষের মলে প্রধানত পানি, খাবার-দাবারের যে অংশ হজম হয়নি, সেই` অংশ, ‘রাফেজ` বা ডায়েটারি ফাইবার, স্নেহজাতীয় পদার্থ এবং স্বভাবতই জীবাণুও থাকে। এইসব জীবাণুরা এরসঙ্গে ভাসা সব পদার্থ হতে পুষ্টি সংগ্রহ করে। সেক্ষেত্রে কিছু কিছু জীবাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনও করে!
বিজ্ঞানীরা জানান যে, বিশেষ বিশেষ জীবাণুগুলো যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে, সেটি একশ বছরের বেশি সময় ধরেই জানা। গত শতাব্দীর ষাটের দশকে নাসা মহাশূন্যে জীবাণুর মাধ্যমেই প্রস্রাব হতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার চেষ্টা করেছিলো। সে জন্য জীবাণুদের ইলেকট্রন নি:সরণ করার ক্ষমতা থাকা দরকার।
হেল্মহলটস পরিবেশ গবেষণা কেন্দ্রের ড. ফাল্ক হার্নিশ বলেছেন, জীবাণুরা সর্বত্রই রয়েছে, যেমন- পাকস্থলী বা মলে, যে কারণে খাটা পায়খানাতেও জীবাণুরা থাকে। তবে এই জীবাণুগুলোর বিশেষত্ব হলো, তারা নিজের অভ্যন্তর হতে ইলেকট্রন বের করে তা কোষের ঝিল্লির মাধ্যমে বাইরে পাঠাতে সক্ষম।
ওই বিজ্ঞানী বলেছেন, জীবাণুগুলো যেসব ইলেকট্রন ছাড়ে, সেগুলোকে একটি ইলেক্ট্রোডে ধরা হয়ে থাকে। জীবাণুরা ভাসা পদার্থগুলো খেয়ে ফেলে। অর্থাৎ বর্জ্য অপসারণ করে পানিকে পরিশোধন করে। অন্যদিকে তারা ইলেকট্রন ছাড়ে, অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এভাবে যে বিদ্যুৎ তৈরি হয়ে থাকে, তা পরিমাণে খুব কম হলেও, ল্যাবরেটরিতে তার পরিমাপ করা সম্ভব।
বায়ো-ইলেকট্রো-কেমিস্ট ড. ফাল্ক হার্নিশ বলেছেন, বর্তমানে আমরা মাত্র কয়েক মিলিঅ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারি। তবে বাইরে যে শৌচাগার দেখছেন, তার কথা ভাবলে বলতে হবে, আমরা একটা মোবাইল টেলিফোনের ব্যাটারি ১২ ঘণ্টার মধ্যে রি-চার্জ করে দিতে পারি খুব সহজেই।
তিনি জানান, নেগেটিভ চার্জযুক্ত ইলেকট্রনগুলো পজিটিভ চার্জ যুক্ত ইলেক্ট্রোডের দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে থাকে। এর থেকে যে কারেন্ট বা বিদ্যুৎপ্রবাহ সৃষ্টি হয়, সেটি মোবাইল ফোন চার্জ করে। আর মাইনাস পোলে তৈরি হয় পানি। জীবাণুরা আরও ভাসা পদার্থ খাওয়ার কারণে পানি ক্রমেই আরও পরিষ্কার হয়ে ওঠে। জীবাণুরা এই পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ সৃষ্টি করলে তাকে বলা হয় একটি মাইক্রোবিয়াল ফুয়েল সেল। অর্থাৎ যাকে বলে জীবাণু-পরিচালিত-জ্বালানি-কোষ। এটি অপেক্ষাকৃত অনুন্নত দেশেও সম্ভব হয়, সেজন্য লাইপসিগের বিজ্ঞানীরা এই সংক্রান্ত প্রযুক্তিকে যতদূর সম্ভব সহজ করে রেখেছেন।