দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ হিরণ পয়েন্ট। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের দক্ষিণাংশে খুলনা রেঞ্জে প্রমত্তা কুঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত একটি সংরক্ষিত অভয়ারণ্যের নামই হলো হিরণ পয়েন্ট।
ইউনেস্কো ঘোষিত অন্যতম বিশ্ব ঐতিহ্য হিরণ পয়েন্টের অপর নাম নীলকমল। অভয়ারণ্য হওয়ার কারণে হিরণ পয়েন্ট খুব সহজেই বানর, হরিণ, বাঘ সহ নানা প্রজাতি বন্যপ্রাণী, সরীসৃপ এবং পাখির নিরাপদ প্রাকৃতিক আবসস্থলে পরিণত হয়েছে। যে কারণে এখানে সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, কাঁদা খোঁচা, লার্জ এগ্রেট, ধ্যানী বক ইত্যাদি পশুপাখির দর্শন পাওয়া যায়।
যারা এখানে বেড়াতে যান তারা হিরণ পয়েন্টের কাঠের তৈরি সুন্দর রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হরহামেশাই হরিণ, বানর, গুইসাপ, কুমির প্রভৃতি প্রাণী দেখতে পান। তাছাড়াও হিরণ পয়েন্ট হতে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে কেওড়াসুঠি নামক স্থানে একটি ওয়াচ টাওয়ারও রয়েছে। ওয়াচ টাওয়ার হতে হিরণ পয়েন্ট সহ সুন্দরবনের একাংশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব।
কেমন খরচ হবে
অভয়ারণ্য এলাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিদিনের জন্য জনপ্রতি ভ্রমণ ফি– ৩০ টাকা, সাধারণ দেশি পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ ফি– ১৫০ টাকা, বিদেশী পর্যটকদের ভ্রমণ ফি– ১৫০০ টাকা দিতে হয়। অভয়ারণ্যের বাইরে ছাত্র-ছাত্রীদের ভ্রমণ ফি– ২০ টাকা, এখানে সাধারণ পর্যটকদের ফি– ৭০ টাকা, বিদেশী পর্যটকদের ভ্রমণ ফি – ১০০০ টাকা ও গবেষকদের ভ্রমণ ফি– মাত্র ৪০ টাকা।
জানা গেছে, বন বিভাগের ভ্রমণ ফি ছাড়াও অন্যান্য খরচের মধ্যে রয়েছে প্রতিদিন ৫০০ টাকা গাইড ফি, নিরাপত্তা গার্ড ফি ৩০০ টাকা, লঞ্চের ক্রুর ফি ৭০ টাকা ও টেলিকমিউনিকেশন ফি ২০০ টাকা। এছাড়া দেশি পর্যটকদের জন্য ভিডিও ক্যামেরা ফি ২০০ টাকা এবং বিদেশিদের জন্য ৩০০ টাকা।
অপরদিকে সুন্দরবনে রাস পূর্ণিমার সময় তীর্থযাত্রীদের ৩ দিনের জন্য জনপ্রতি ফি দিতে হয় ৫০ টাকা, নিবন্ধনকৃত ট্রলার ফি দিতে হয় ২০০ টাকা, অনিবন্ধনকৃত ট্রলারের ফি দিতে হয় ৮০০ টাকা এবং প্রতিদিন অবস্থানের জন্য ট্রলারের ফি ২০০ টাকা দিতে হয়।
যাবেন কিভাবে
প্রায় শতাধিক প্রতিষ্ঠান বর্তমানে সুন্দরবনে পর্যটন ব্যবসায় নিয়োজিত। ভালো নির্ভরযোগ্য ট্যুর ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহজেই সুন্দরবন ঘুরে আসতে পারবেন। ঢাকার গাবতলী এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল হতে বাগেরহাটগামী বিভিন্ন বাস চলাচল করে থাকে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল হতে ছেড়ে যায় মেঘনা পরিবহন (ফোন: ০১৭১৭-৩৮৮৫৫৩) এবং পর্যটক পরিবহন (০১৭১১-১৩১০৭৮) এর বাস। অপরদিকে গাবতলী বাস টার্মিনাল হতে রয়েছে সাকুরা পরিবহন (ফোন: ০১৭১১-০১০৪৫০) এবং আরও রয়েছে সোহাগ পরিবহন (০১৭১৮-৬৭৯৩০২) এর বাস। চাইলেই কমলাপুর থেকে ট্রেনের মাধ্যমেও আপনি খুলনা যেতে পারেন। খুলনা হতে রূপসা বা বাগেরহাটের মংলা বন্দর হতে সুন্দরবন হিরণ পয়েন্ট যাওয়ার লঞ্চও পাবেন। আবার বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা থেকেও সুন্দরবনে যাওয়ার বিভিন্ন নৌযান ভাড়া পাওয়া যায়, সেখান দিয়েও যেতে পারেন।
থাকবেন কোথায়
সুন্দরবনে থাকার জন্য টাইগার পয়েন্টের কচিখালী, হিরণ পয়েন্টের নীলকমল ও কাটকায় বন বিভাগের রেস্টহাউজে থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে। নীলকমলে থাকতে চাইলে দেশী পর্যটকদের প্রতি কক্ষের জন্য দিতে হবে ৩০০০ টাকা এবং বিদেশীদের জন্য ৫০০০ টাকা। কচিখালী প্রতি কক্ষের জন্য দিতে হবে ৩০০০ টাকা এবং বিদেশীদের জন্য লাগবে ৫০০০ টাকা। কটকাতে প্রতি কক্ষ নিতে লাগবে ২০০০ টাকা ও বিদেশীদের জন্য রুম প্রতি ৫০০০ টাকা দিতে হবে।
তবে মংলায় থাকার জন্যে পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল রয়েছে এবং পশুর বন্দরে সাধারণ মানের আবাসিক হোটেলও পাবেন। সাতক্ষীরা ও খুলনা নগরীতে অবস্থিত বিভিন্ন মানের হোটেলে রাত্রিযাপনের সুযোগও থাকছে আপনার জন্য।
তথ্যসূত্র: https://vromonguide.com