দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আশুলিয়ার জিরাবোতে এডিসন গ্রুপের একটি কারখানায় তৈরি করা হয় সিম্ফনি মোবাইল। এখানে ভেতরে প্রবেশের সময় পলিথিন কভারে জুতা ঢেকে নেওয়া বাধ্যতামূলক। পোশাক ধুলাবালিমুক্ত করার জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা।
নানা নিয়ম মেনেই পৌঁছানো যায় কারখানার কেন্দ্রে। এই কারখানার সব কর্মীই বাংলাদেশের। তবে চীন থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এখানেই সংযোজন করা হচ্ছে মোবাইল ফোনসেটের স্থানীয় জনপ্রিয় ব্র্যান্ড সিম্ফনির ফিচার এবং স্মার্টফোনের যন্ত্রাংশ।
গুণগত মানের ক্ষেত্রে কোনো আপস করে না সিম্ফনি। ডিসপ্লে স্ক্রিন কতোটা ধকল সইতে পারবে এর পেনসিল হার্ডনেস টেস্টসহ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে প্রস্তুত করে তারপর ফোনসেটগুলো বাজারে ছাড়ার জন্য প্যাকেটজাত করা হচ্ছে। দেশে আরও কয়েকটি ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোনসেট সংযোজন করা হয়ে থাকে। তবে এডিসন গ্রুপের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন যে, সিম্ফনিই হচ্ছে ‘ট্রু মেড ইন বাংলাদেশ’।
সম্প্রতি কারখানাটি পরিদর্শনকালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, জিরাবোতে সিম্ফনির এই কারখানা উদ্বোধন করা হয় ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর। একই বছরের ডিসেম্বর হতে সিম্ফনি ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ফোনসেট বাজারজাত শুরু করে। কারখানায় সব মিলিয়ে এখন প্রায় এক হাজার মানুষ কাজ করছেন। তবে আগামী জুনেই কর্মীর সংখ্যা দুই হাজারে পৌঁছে যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
প্রায় ৫৭ হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে এই কারখানা বা অ্যাসেম্বলিং প্লান্ট। বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে প্রায় ৮ দশমিক ১৬ একর ও আশুলিয়ায় নিজস্ব ১ লাখ ৭২ হাজার ৮০০ বর্গফুট জমির ওপর আরও দুটি কারখানা তৈরি করছে সিম্ফনি। এই ৩টি কারখানায় এখন পর্যন্ত সিম্ফনির খরচ হয়েছে ১০০ কোটি টাকার মতোই। উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগের পরিমাণও বাড়বে।
২০০৮ সালে সিম্ফনির যাত্রা শুরু হয় । ৩ হতে সাড়ে ৩ হাজার টাকায় মানসম্পন্ন মোবাইল ফোনসেট গ্রাহকের হাতে তুলে দিয়ে বাংলাদেশের বাজারে উত্থান শুরু হয় সিম্ফনির। প্রকৃত অর্থে ২০১০-১১ সময়টি ছিল সিম্ফনির উত্থানের বছর। এই সময়কালে বিক্রির দিক থেকে দেশের ১ নম্বর ফোনসেটের স্বীকৃতি অর্জন করেছিলো সিম্ফনি। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এটি বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম কর্তৃক মোবাইল ফোনসেট ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ ব্র্যান্ডও নির্বাচিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের শেষ দিকে এসে বাংলাদেশেই স্মার্টফোন উৎপাদন শুরু করে সিম্ফনি।
এডিসন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকারিয়া শহীদ জানিয়েছেন, দেশের চাহিদা পূরণ করে সিম্ফনি আগামী ২০২২ সালে মোবাইল ফোনসেট রপ্তানিও করবে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও ভারতের সেভেন সিস্টার্সে এই ফোনসেট রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে সিম্ফনি ভিয়েতনাম এবং শ্রীলঙ্কায় ব্যবসার প্রসার ঘটিয়েছে।
জাকারিয়া শহীদ জানিয়েছেন, ‘দেশে মোবাইল ফোনসেট তৈরির জন্য সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা আমরা পুরোপুরি কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। ব্যাটারি, চার্জার, হেডফোন—এগুলো তৈরির কাজও শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। আমরা সফটওয়্যার ডেভেলপ নিয়েও কাজ করছি।’
বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে জাকারিয়া শহীদ আরও বলেন, দেশে প্রতি মাসে স্মার্টফোনের চাহিদা প্রায় ১০ লাখ। এর ৭০ শতাংশই এখন দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। বাকি ৩০ শতাংশের মধ্যে ২৫ শতাংশই অসাধু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে সরবরাহ করছে। এতে সরকার রাজস্ব হতে বঞ্চিত হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মোবাইল ফোনসেটের বৈধ ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তারা। এই অবস্থার মধ্যেও দেশের বাজারে মাসে এক লাখ হতে এক লাখ ২৫ হাজারের মতো সিম্ফনি স্মার্টফোনের চাহিদা এখনও রয়েছে। এর পুরোটাই সিম্ফনি স্থানীয়ভাবেই দিচ্ছে।
কোম্পানিটির সিনিয়র ডিরেক্টর মাকসুদুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাদের কর্মীদের প্রায় সবাই পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট হতে পাস করে বেরিয়ে আসা শিক্ষার্থী। সূত্র: কালের কণ্ঠ