দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ করোনা নিয়ে মানুষের যেনো কোনো কিছুই বাদ যাচ্ছে না। এবার এই করোনা ভাইরাস দিলো বহু তারার সন্ধান! কীভাবে? তাকি আপনি জানেন?
এই কথাটা সত্যিই অবাক করার মতো কথা। অবিশ্বাস্য এবং অবাক করার মতো হলেও ঠিক তাই। বিশাল আকাশে লুকিয়ে রয়েছে এমন বহু তারা যাপর সন্ধান দিলো এই প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস! যে তারাগুলোর সঙ্গে আগে কখনই মানুষ একেবারেই পরিচিত ছিল না। তারাগুলো নিজেরাই কি লুকিয়ে ছিল কোথায় যেনো। নাকি প্রকৃতিই মানুষের সঙ্গে তাদের পরিচিত হতে দেয়নি তাও অজানা! আসল কথা হলো মানুষ নিজেরাই নিজেদের অপকর্মের কারণে এতো দিন হয়তো এই তারাগুলোর সঙ্গে অপরিচিত ছিল। ভারি করে তুলেছিল বাতাসকে। যে কারণে তারাদের সঙ্গে এতোদিন পরিচিত হতে পারেনি মানুষ। শুধু তারাই নয়! এমন আরও অনেক প্রকৃতির সঙ্গেই মানুষ অপরিচিত রয়েছে শুধু নিজেদের অপকর্মের কারণেই।
করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউন বর্তমানে বিশ্বের সবখানেইা। প্রকৃতির অন্যতম প্রধান শত্রু মানুষ এখন ঘরে লুকিয়ে রয়েছে করোনা ভাইরাসের ভয়ে। তাইতো এই সময় যেনো সব উজার করে দিচ্ছে প্রকৃতি। এই সুযোগেই তারকারা দেখা দিলো এবার মানুষকে। দেশ ভিন্ন হলেও পৃথিবীর আকাশ তো একটাই। বাংলাদেশের দূষিত বাতাস গিয়ে এক হয় পশ্চিমাদের বাতাসের সঙ্গে। আবার পশ্চিমাদের বাতাস এসে মিলিত হয় বাংলাদেশের বাতাসের সঙ্গে। মানুষের তৈরি যে আবর্জনা বাতাসে ভারি করে তুলেছিল এতোদিনে। যে বাতাসকে ভেদ করে তারকাদের সন্ধান এতোদিন হাতছাড়া হয়েছিল আমাদের থেকে। এখন তাদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে খুব সহজেই। তারা এতো দূরে যে, তাদের কোনোটাই আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিরই অন্য এক প্রান্তে। কোনোটা বা আরও অনেক অনেক দূরের কোনো গ্যালাক্সির মধ্যে।
খুব দূরে রয়েছে বলে বড় টেলিস্কোপেও এতোদিন যাদের দেখা পাওয়া যায়নি। ভারতের মেদিনীপুরের সীতাপুরের মাত্র ২৪ ইঞ্চি লেন্সের টেলিস্কোপে এবার ধরা দিরো সেই ‘অচেনা অতিথিরা। কোলকাতার ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স (আইসিএসপি)’-এর বাঙালি গবেষকরা খুঁজে বের করলেন এইসব তারাদের।
ঠিক ৭৫ বছর পূর্বে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার সেই দুঃস্বপ্নের রাতেও ছিল এরকমই একটি সুখকর স্মৃতি! রাতের আকাশে এক রোমাঞ্চকর জ্যোতির (যাকে বলে এয়ার গ্লো) প্রথম হদিশ পেয়েছিলেন ভারতেরই অধ্যাপক শিশির কুমার মিত্র। যুদ্ধের সময় কোলকাতায় পড়েছিল এক জাপানি বোমা। কোলকাতার আকাশে রাতে অবিরত যুদ্ধবিমানের টহলে কোলকাতায় তখন আক্ষরিক অর্থেই ‘ব্ল্যাক আউট’ ছিলো। তাই বিশ্বে প্রথম এয়ার গ্লো আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন অধ্যাপক ও তার ছাত্র সত্যেন্দ্রনাথ ঘোষ।
তিনি আবিষ্কার করেছিলেন যে, দিনভর সূর্যের আলো গায়ে আছড়ে পড়ায় তেতে ওঠা বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন অণুরা সন্ধ্যা নামার পর হতেই লাল, নীল নানা রঙের আলো বিকিরণ করতে শুরু করে ঠাণ্ডা হবে বলেই। যে কারণে, সন্ধ্যার অনেক পরেও জমাট বাঁধা অন্ধকারে লাল, নীল নানা রঙের আলোয় রঙীন হয়ে থাকে সেই আকাশ। সেই আবিষ্কারের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছিল আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার’-এ।
দূষণমুক্ত আকাশে নতুন তারার সন্ধান পাওয়া গেছে
এই বিষেয়ে আইসিএসপি-র প্রধান বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘আমরা অনেকগুলো নতুন তারার হদিশ পেয়েছি। যাদের অনেকের কথাই আগে আমাদের জানা ছিল না। তাই তাদের নিয়ে এর আগে তেমন কোনো গবেষণাও হয়নি। আগে কেও এই তারাদের হদিশ পেলে তাদের নামকরণ করা হতো। তবে এখন পর্যন্ত কোনো রেকর্ডেই এদের নামধাম বা কতোটা দূরে রয়েছে তারা, তার কোনোই উল্লেখ নেই। আগে যদি আমরা সত্যিই এমন কোনো তারার সন্ধান পেতাম যে তারাগুলো ১০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে। লকডাউনের আকাশ তাহলে আমাদের সামনে ২০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে থাকা তারাকেও দৃশ্যমান করে তুলেছে! করে তুলেছে অনেক বেশিই উজ্জ্বল।’’ গবেষকদলে সন্দীপের সঙ্গে রয়েছেন তিন ছাত্র অসীম সরকার, শ্যাম সরকার এবং পবিত্র শীল।
সন্দীপ জানিয়েছেন, ‘নতুন অতিথিদের মধ্যে যারা অধিক উজ্জল সেগুলোতে রয়েছে আমাদের থেকে প্রায় ১৬০০ আলোকবর্ষ দূরে। যেগুলোর আলো মূলত খুবই ক্ষীণ, সেগুলো রয়েছে হয়তো আরও দূরের কোনো গ্যালাক্সিতে।
সন্দীপ আরও বলেছেন, ‘‘মনে হচ্ছে, যেগুলো থেকে আমাদের দিকে খুব কম আলো আসছে, সেগুলো হয়তো কোনো তারা না-ও হতে পারে। হতে পারে অন্য কোনো কিছুও। তবে সেগুলো কী? তা এখনও আমরা বুঝে উঠতে পারছি না। সামনেই পূর্ণিমা। তাই আকাশ আলোয় ভরে থাকবে বলে এই অচেনাদের চেনার সুযোগ তখন হয়তো পাবো না। তবে পূর্ণিমা থেকে অমাবস্যার মধ্যে তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত জানবার সুযোগ আমরা হয়তো পাবো বলেই মনে হচ্ছে আমাদের। তখনও তো থাকবে লকডাউন!’’
শেষ কথা এই দাঁড়াচ্ছে যে, মানুষের আধিপত্যের কারণেই প্রকৃতি ছেড়ে লুকিয়েছে অনেক প্রাকৃতিক উপাদান। মানুষ যদি কিছুদিন ঘরে থাকে তাহলে হয়তো এমন আরও অনেক কিছুর সঙ্গে আমাদের দেখা হবে। আবিষ্কার হবে হয়তো এক নতুন পৃথিবীর। যে পৃথিবীতে ধুলো ময়লার আকাশে নয়! পড়ে থাকবে পুরোপুরি মাটিতে। মাটিতে লুটিয়ে পড়া সৃষ্টিগুলো তখন মাথা উচু করে দাঁড়াবে আকাশ পানে। আমরা সেই অপেক্ষা রইলাম। তথ্যসূত্র: দৈনিক ভোরের কাগজ।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।