দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ চীনের উহানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত যেসব রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তাদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগেরই ফুসফুসে মারাত্মক ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। ওই ক্ষত নিয়েই তারা বেঁচে আছেন।
জানা গেছে, তাদের ফুসফুসের ভেন্টিলেশন বা শ্বাস-প্রশ্বাস এখনও সুস্থ মানুষের পর্যায়ে পৌঁছেনি। সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে এ কথা বলা হয়। রিপোর্টে বলা হয়, উহান ইউনিভার্সিটির ঝোংনান হাসপাতালের একটি টিম রোগীদের ওপর ফলোআপ রিপোর্ট করেন। এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন ওই হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটের পরিচালক পেং ঝিয়োং।
এনডিটিভির এক খবরে বলা হয়, এপ্রিল হতে সুস্থ হওয়া রোগীর ওপর তারা ফলোআপ রিপোর্ট করেছেন। এক বছরের এই কর্মসূচির প্রথম দফার পর্যবেক্ষণ শেষ হয়েছে জুলাই মাসে। এ সময় যেসব রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে তাদের গড় বয়স হলো ৫৯ বছর। প্রথম দফার এই পর্যবেক্ষণের ফল অনুযায়ী দেখা যায়, রোগীদের শতকরা ৯০ ভাগের ফুসফুসে এখনও বড় রকম ক্ষত বিদ্যমান। চীনের রাষ্ট্র পরিচালিত গ্লোবাল টাইমসে এ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।
খবরে আরও বলা হয়, পেং ঝিয়োংয়ের টিম রোগীদের ৬ মিনিটের একটি হাঁটার পরীক্ষা করেছেন। তাতে তারা দেখেছেন যে, করোনা থেকে সুস্থ হওয়া রোগীরা ৬ মিনিটের মধ্যে মাত্র ৪০০ মিটার হাঁটতে পারেন, যেখানে একই সময় একজন সুস্থ মানুষ হাঁটতে পারেন অন্তত ৫০০ মিটার।
বেইজিং ইউনিভার্সিটির ডঙ্গঝিমেন হাসপাতালের চিকিৎসক লিয়াং টেঙসিয়াও বলেছেন যে, হাসপাতাল হতে তিন মাস আগে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এমন অনেক মানুষ এখনও অক্সিজেন মেশিনের ওপর নির্ভর করে থাকেন। অর্থাৎ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য তাদের অক্সিজেন মেশিনের সাহায্য নিতে হয়। তাছাড়া তার টিম ৬৫ বছরের ওপরে বয়স এমন সুস্থ করোনা রোগীদের ওপরও ফলোআপ রিপোর্ট করেন। তাতে দেখা গেছে যে, নোভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেহে যে এন্টিবডি সেটি শতকরা ১০০ রোগীর মধ্যে শতকরা ১০ ভাগই এখনই অদৃশ্য হয়ে গেছে। কোভিড-১৯ নিউক্লিক এসিড টেস্টে তাদের শতকরা ৫ ভাগ নেগেটিভ ফল দেখায়। তবে ইমিউনোগ্লোবিন এম (আইজিএম) টেস্টে তারা পজেটিভ রেজাল্টই দেখিয়েছেন। যে কারণে তাদেরকে আবার কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়।
করোনা ভাইরাস যখন আক্রমণ করে তখন প্রথম যে এন্টিবডি তৈরি করে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় তা হলো আইজিএম। পরীক্ষায় যদি কারও দেহে আইজিএম পজেটিভ আসে তাহলেই বুঝতে হবে যে, তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। তবে এটি স্পষ্ট নয় যে, যেসব মানুষের দেহে আইজিএম পরীক্ষা পজেটিভ এসেছে তারা আবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কিনা। ১০০ রোগীর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে ফিরে আসেনি। তাদের দেহে খুব কম মাত্রায় বি সেল দেখা দিয়েছে। মানবদেহে করোনা ভাইরাসকে হত্যার জন্য প্রাথমিক শক্তিই হলো এই বি সেল। ওইসব রোগীর দেহে উচ্চমাত্রায় টি-সেল দেখা দিয়েছে, যা আক্রান্ত কোষের বাইরে ভাইরালি এন্টিজেনসকে শনাক্তও করতে পারে।
পেং আরও বলেছেন, পরীক্ষালব্ধ ফল বলছে যে, এখনও রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আগের অবস্থায় ফিরেই আসেনি। যে কারণে রোগীরা বিষণ্নতা এবং হতাশায় ভোগেন। করোনা হতে সুস্থ হওয়া বেশির ভাগ রোগী গবেষক দলকে বলেছেন যে, একই টেবিলে তাদের সঙ্গে রাতের খাবার খেতে রাজি নন তাদের পরিবারের সদস্যরাও। করোনা হতে সুস্থ হওয়া অর্ধেকেরও কম মানুষই কাজে ফিরেছেন।
উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাস সর্বপ্রথম ধরা পড়ে চীনের উহান শহরে। সেখানে যেহেতু এই পর্যবেক্ষণ চালানো হয়, তাই এই গবেষণালব্ধ রিপোর্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর
অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।