দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ঘুর্ণিঝড় হাইয়ানের তাণ্ডবে এক মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয়েছে ফিলিপাইন। যেদিকে তাকানো যাচ্ছে সেদিকেই শুধু ধ্বংস লীলা। এমন পরিস্থিতি মনে হয় আর কখনও বিশ্ববাসী দেখেনি।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সুপার টাইফুন হাইয়ানের ছোবলে মৃত্যুপূরিতে রূপ নিয়েছে ফিলিপাইনের বিস্তীর্ণ এলাকা। পূর্ব সতর্কতা সত্ত্বেও নজিরবিহীন ঘুর্ণিঝড়ের এই তাণ্ডবে ১০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে বলে আশংকা করা হচ্ছে। পুরোপুরি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে উপকূলীয় অঞ্চল। দেশটিতে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে সামরিক সহায়তা দেয়ার অঙ্গীকার করেছে। একই সঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনও জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাগুলো শিগগিরই দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তাকলোবানে স্থানীয় পুলিশ প্রধানের উদ্বৃতি দিয়ে সংবাদ মাধ্যম বলেছে, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত লেইতি প্রদেশে প্রায় ১০ হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছে। পুলিশ প্রধান বলেন, গত রাতে গভর্নরের সাথে এ বিষয়ে আমাদের বৈঠক হয়েছে। এ প্রদেশে ১০ হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটেছে এবং ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বাড়িঘর ও স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, লেইতি প্রদেশের রাজধানী তাকলোবানে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার লোকের বসবাস। তাকলোবানসহ উপকূলীয় আরো কয়েকটি শহর ঝড়ে এতো বেশি লণ্ডভণ্ড হয়েছে যে মনে হচ্ছে সেখানে ধ্বংসলীলা সাধিত হয়েছে। অধিকাংশ বাড়িঘরের কেবল পিলারগুলো দাঁড়িয়ে আছে। ধ্বংসের দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে রাস্তায় যানবাহনগুলো খেলনার মতো উল্টে পড়ে আছে।
জাতিসংঘের দুর্যোগ পর্যালোচনা ও সমন্বয়কারী দলের প্রধান সেবাস্তিয়ান রোডেস স্টেম্পা বলেন, চারদিকে কেবলই ধ্বংসের চিহ্ন। তিনি বলেন, সর্বশেষ আমি এতোটা ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছি ভারত মহাসাগরের সৃষ্ট সুনামির পর। ২০০৪ সালে সুনামির এ আঘাতে ২ লাখ ২০ হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটে। ফিলিপাইনে লেইতি ও এর প্রতিবেশী দ্বীপে শুক্রবার ভোরে ৩৮৯ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা টাইফুন হাইওয়ান আঘাত হানে। এ সময়ে বিশাল বিশাল ঢেউ ওই এলাকাগুলো ভাসিয়ে নিয়ে যায়। হতাহতের পূর্নাঙ্গ তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। আরো হতাহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে গুয়ান অঞ্চল এখনও যোগাযোগহীন রয়ে গেছে। সেখানকার সামার দ্বীপে প্রায় ৪০ হাজার জেলে বাস করে। এ দ্বীপেই প্রথম আঘাত হানে হাইয়ান। যুক্তরাষ্ট্র ফিলিপাইনের অনুরোধে সামরিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ঘুর্ণিঝড় হাইয়ান ফিলিপাইনে আঘাত হানে। অক্টোবরে একই এলাকায় ভূমিকম্পের আঘাতে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই আঘাত হানল হাইয়ান। ফিলিপাইনে প্রতিবছর গড়ে ২০টি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। গত বছর আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় বোফার আঘাতে দক্ষিণাঞ্চলের ১ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।