দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। যদিও ঠাকুরগাঁওয়ের বন্যা পরিস্থিতি গত দু’দিনে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে কুড়িগ্রামে ধরলা ও দিনাজপুরে পুনর্ভবা নদীর পানি বেশ খানিকটা কমলেও দুটি জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি।
দিনাজপুর
এদিকে দিনাজপুরের নদীগুলোর পানি বিপদসীমার নিচে থাকলেও এর মধ্যে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৫টি উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার।
পুনর্ভবা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও নদীসংলগ্ন সমগ্র নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। দিনাজপুর সদর, বিরল, বোচাগঞ্জ, কাহারোল, চিরিরবন্দর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি পস্নাবিত হয়েছে। এসব এলাকার পানিবন্দী মানুষ স্কুল, মাদ্রাসা ও বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দিনাজপুর পয়েন্টে পুনর্ভবা নদীর পানি ৯ সে.মি. বেড়ে বিপদসীমার ১৩ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল জাকির জানান, বোচাগঞ্জ উপজেলার তেতরা, পরমেশ্বরপুর, নড়াইল, ষাটপুকুর, ফাঁচপাড়া, শুকদেবপুর ও কুকরাডাঙ্গা গ্রামের প্রায় ৪৮০টি পরিবারের ঘরবাড়ি পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
অপরদিকে চিরিরবন্দর উপজেলার তেঁতুলিয়া, আব্দুলপুর, আউলিয়াপুকুর ও ভিয়াইল ইউনিয়নের ৯টি গ্রামের নিচু এলাকা জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। বিরলের রাজারামপুর, হঠাৎপাড়া, শহরগ্রাম, দহগ্রাম, খোপড়া, মানিকপাড়া, ঠনঠনিয়া, রসুলপুর গ্রামের প্রায় এক হাজার পরিবারের বাড়িঘর পানিতে ডুবে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাসমূহে গত দুদিনে ৯৮ টন চাল বিতরণ করা ছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শুকনা খাবার ও খিচুড়ি বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক শামীম আল রাজী জানান, পানিবন্দী ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৫ লাখ টাকা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রাম
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দেয়া গতকাল ১২ জুলাই ভোর ৬টার তথ্য অনুযায়ী, যমুনা নদী বাহাদুরাবাদে ১৮ সে.মি. ও ধরলা নদী কুড়িগ্রামে ২ সে.মি. বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল থাকলেও গঙ্গা-পদ্মা ও মেঘনা নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তাহের জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা নদীর পানি ১৪ সেন্টিমিটার কমেছে। কিন্তু ব্রহ্মপুত্রের পানি ২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি এবং উজানের ঢলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি হলেও কুড়িগ্রাম জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। চর এলাকার রাসত্মা তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে বন্যা দুর্গত মানুষ। বানভাসি মানুষের খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছে। জেলায় সরকারি বা বেসরকারি কোনো পক্ষ থেকেই ত্রাণ সহায়তার কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার অববাহিকার সাতটি উপজেলার ৩৬টি ইউনিয়নের আড়াই শতাধিক চর, দ্বীপচর ও নদীসংলগ্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে আছে প্রায় সোয়া লাখ মানুষ। আর নদী ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে প্রায় এক হাজার ৪৭টি পরিবার। বরাদ্দ না পাওয়ায় বন্যাদুর্গত মানুষদের সরকারিভাবে সাহায্য দেয়ার কোনো উদ্যোগ নেয়া যায়নি বলে জানান আনোয়ার।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রতীপ কুমার ম-ল জানান, বন্যায় কুড়িগ্রামে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির আমন বীজতলা, শাক-সবজি, কাউন ও বাদাম ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
ঠাকুরগাঁও
গত তিনদিন বৃষ্টি না হওয়ায় ঠাকুরগাঁও জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। টাঙ্গন, সেনুয়া, শুক, নাগর ও কুলিক নদীর পানি কমতে শুরম্ন করেছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় পানি কমে গেলেও বাড়িঘর মেরামত করতে না পারায় ঘরে ফিরতে পারছে না বন্যাদুর্গতরা। ক্ষতিগ্রসত্ম অধিকাংশ লোকই বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। অনেকে ঘরবাড়ি মেরামত করতে হিমশিম খাচ্ছে। এদিকে বেশ কয়েকটি এলাকায় পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে পানিবন্দী হয়ে আছেন অনেকে।