দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ভিটামিন সি কী আসলেও কার্যকর? এই প্রশ্ন এখন মানুষের মনে দেখা দিয়েছে।
দুই কারণে এটি হতে পারে- প্রথমত, ফ্লু ঠেকাতে ভিটামিন সি-এর ভূমিকা রয়েছে বলে অনেকের ধারণা। যদিও ধারণাটা কখনই সঠিক নয়। কারণ ভিটামিন সি সাধারণ ফ্লু ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে পারে না। রোগ হওয়ার পর তার প্রকোপ কম রাখতে কিছুটা সাহায্য করে। এটি সাহায্য করে ভোগান্তির সময়কাল কমাতে। কোভিড ১৯ও যেহেতু এক ধরনের ফ্লু, মানুষ তাই ভাবতে শুরু করেছেন যে, ভালো করে ভিটামিন সি খেলেই একে ঠেকানো যেতে পারে। বিষয়টি কতোটুকু কার্যকর হতে পারে তুলে ধরেছে কোলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা।
সংবাদপত্রটি জানিয়েছে, মানুষের এই ভাবনাটাকেই আরও উস্কে দিয়েছে সাংহাই মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের তরফ হতে চাইনিজ জার্নাল অব ইনফেকশাস ডিজিজ-এ প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ। যেখানে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে, কোভিড-১৯ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীকে যদি খুব বেশি মাত্রায় ভিটামিন সি দেওয়া যায়, শিরার মাধ্যমে, তাঁর ফুসফুসের কার্যকারিতা কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাতে কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র তথা ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন কিছুটা হলেও কমতে পারে।
এই কিছুটা মানে কতোটুকু তা কী আপনি জানেন? এক রিভিউ স্টাডি হতে জানা গিয়েছে যে, তার ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে থাকার প্রয়োজনীয়তা মাত্র ৮ শতাংশ কমতে পারে। ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন কমতে পারে ১৮ শতাংশ। তবে এ সবই রয়েছে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়েই। অর্থাৎ ভিটামিন সি দিয়ে চিকিৎসা করলে আদতে কতোটা কাজ হবে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে তা নিয়েও।
একটি সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, শিরার মধ্যে দিয়ে বেশি মাত্রায় ভিটামিন সি দিলে সোয়াইন ফ্লু এবং অন্য আরও কিছু ভাইরাস সংক্রমণে ফুসফুসে যে প্রদাহ সৃষ্টি হয় তার প্রকোপ কিছুটা কমতে পারে। এই স্টাডিও রয়েছে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে। অর্থাৎ পশুর পর এখন মানুষের শরীরে প্রয়োগ করে এর ভালোমন্দ যাচাই করা হচ্ছে। তবে কোভিডের ক্ষেত্রেও সেই একই ভাবে কাজ করবে কিনা সে গবেষণা এখনও সেভাবে হয়নি।
এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘এই রকম পরিস্থিতিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি খাওয়ার কোনই যুক্তি নেই। কারণ খেয়াল করে দেখুন, গবেষণাপত্রে মোটেও খাওয়ার কথা বলা হয়নি। বলা হয়েছে যে, শিরার মাধ্যমে দেওয়ার জন্য। তা-ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীকে। কাজেই ভিটামিন সি আপনি অবশ্যই খাবেন। তবে সেটা মাপমতোই খাবেন। বেশি খেলে ইউরিনের মধ্যে দিয়ে তা বেরিয়ে যেতে পারে। উল্টো পেট খারাপও হতে পারে।’
কতোটা ভিটামিন সি খাওয়া উচিত
সুষম খাবারের অঙ্গ হিসেবে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে ৯০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি খাওয়া দরকার। ধূমপায়ী হলে বা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ালে আরও ৩০-৩৫ মি গ্রা প্রয়োজন পড়ে। তবে ওটুকু ভিটামিন সি নিয়ে টেনশন করার কিছুই নেই। মাঝারি একটা কমলালেবু খেলেই প্রয়োজনের ৭৭ শতাংশ পূরণ হয়ে যেতে পারে। এককাপ রান্না করা ব্রকোলি খেলেও তো কথাই নেই। পাওয়া যাবে প্রয়োজনের চেয়েও অনেক বেশি। প্রায় ১১০ শতাংশ মতো। তবে শুধু এটুকুই তা নয়। অন্য শাক-সব্জি-ফলও আপনি খাবেন। ভিটামিন সি রয়েছে সবেতেই।
ছোট্ট একটা হিসেব মতে, ভাতের পাতে স্রেফ একটা কাঁচা লঙ্কা খেয়ে ফেলেন, তাতে পাবেন ১২১ শতাংশ। একটা পেয়ারা খেলে তাতে পাবেন ১৪০ শতাংশ, আধাকাপ হলুপ বেলপেপার দেবে ১৫২ শতাংশ। সকালে খালিপেটে পাতিলেবুর রস খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সারা দিনের প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশ ওখান থেকেই চলে আসবে। কাজেই ভিটামিন সি নিয়ে আলাদা করে ভাবার কোনোই প্রয়োজন নেই। ওটুকুতেই আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অটুট থাকবে তাতে সন্দেহ নেই, যার সাহায্যে আপনি এই দুর্দিনে লড়াই চালাবেন আপনি। এতে কম থাকবে শরীরে প্রদাহের প্রবণতা। উপরি পাওনা হিসেবে পাবেন স্বাস্থ্যবান ত্বক এবং চুল।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।