দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক॥ ১০০,০০০ এরও বেশী সংখ্যক মানুষ পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারবেন না এটা জেনেও মঙ্গলে বসতি গড়তে ইচ্ছুক! তারা তাদের বাকী জীবন পৃথিবীর আলো বাতাসের বাইরে ভিন্ন গ্রহ মঙ্গলে কাটাতে চান। সম্প্রতি একটি সংগঠনের মঙ্গলে বসতি গড়ার এক প্রকল্পে মঙ্গলে যেতে উৎসুক এ বিপুল সংখ্যক মানুষ তাদের আবেদন জমা দেয়।
মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর এ প্রকল্প নিয়ে ইতোমধ্যে সবার মাঝে একটি বিশেষ আলোড়ন তৈরি হয়েছে। যদিও এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যে বিশাল অংকের অর্থ প্রয়োজন হবে তাঁর উৎস নিয়েও আয়োজক প্রতিষ্ঠান কোন সঠিক তথ্য প্রদান করতে এখনো পারেনি এছাড়া আরও অনেক অনিশ্চয়তা তো রয়েছেই কিন্তু তারপরও মানুষের লোহিত গ্রহ মঙ্গলে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশে কোনরূপ ভাটা দেখা যাচ্ছেনা। এর আগে প্রকল্প শুরুর পর পর দি ঢাকা টাইমস একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছিল “মঙ্গলে বসতি গড়তে ইচ্ছুক ৭৮ হাজার মানুষ” সেই সংখ্যাই এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লক্ষাধিকের উপরে!
মার্স ওয়ান নামে মঙ্গলে মানুষ পাঠানর এই প্রকল্পের প্রধান ল্যান্সড্রপ জানান, “আপনি হয়ত আমাদের ওয়েব সাইটে অনেক আগ্রহী আবেদনকারীকে দেখে থাকবেন! তবে এরা প্রকৃত সংখ্যা নয়, এর বাইরেও একটা বিশাল অংশ রয়েছে যাদের পাবলিক প্রোফাইল এখনো তৈরি হয়নি যারা কেবল তাদের বায়ো ডাটা পাঠিয়েছেন মাত্র। এরা এদের ফী প্রদান করার পর তাদের বায়ো ডাটা পাবলিক করে দেয়া হবে“
ল্যান্সড্রপ অবশ্য এখনো জানাননি যে ঠিক কত সংখ্যক মানুষ মঙ্গলে যেতে আবেদনের জন্য প্রাথমিক ফী পরিশোধ করেছেন। এদিকে মঙ্গলে যেতে প্রাথমিক ফী এর পরিমাণ সবার জন্য নির্দিষ্ট নয়। ফী নির্ধারিত হয় আবেদনকারী কোন দেশের নাগরিক তাঁর উপর, যেমন অ্যামেরিকার নাগরিকদের জন্য ফী ধরা হয়েছে ৩৮ ডলার!
ফী নির্ধারণের বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ল্যান্সড্রপ জানান, “ আমরা এটা নিশ্চিত করতে চাই আমাদের প্রকল্পের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর থেকে সব জাতিসত্ত্বার মানুষ যেন আবেদন করতে পারে। ফলে সকল দেশের অর্থনীতিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে আমরা ফী নির্ধারণ করেছি। ১৮ বছরের বেশী যেকেও আবেদন করতে পারবেন“
এদিকে মার্স ওয়ান প্রকল্প থেকে জানানো হয়েছে এ প্রকল্পের মাধ্যমে সারা পৃথিবী থেকে মাত্র ৪ জন মানুষ মঙ্গলে যেতে পারবেন এক্ষেত্রে ২জন নারী ও ২জন পুরুষ মঙ্গলে যেতে সুযোগ পাবেন। ৪ জন নভোচারী নিয়ে মহাকাশ যান যাত্রা করবে ২০২২ সালে এবং সেটি মঙ্গলে অবতরণ করবে ২০২৩ সালে। কিন্তু এদের মাঝে কাউই আর পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারবেন না বলে নিশ্চিত করেছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান!
নির্বাচিত সকল আবেদনকারীকে টানা ৮ বছর একটি বিশেষ প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যেতে হবে সেখানে তাদের দাঁতের, হাড়ের, পেশীর এবং শরীর তত্ত্বীয় নানান প্রশিক্ষণ দেয়া হবে যাতে করে মঙ্গলে গিয়ে নানান প্রতিবন্ধকতার সাথে তারা খাপ খাওয়াতে পারেন।
ল্যান্সড্রপ বলেন, “আমাদের প্রকল্পের মাধ্যমে যারা মঙ্গলে যাবে এবং সেখানে বসতী গরবেন তাদের মাধ্যমে সেখানে মানব সভ্যতার বিকাশ হবে সেখানেই তারা নতুন পৃথিবী গড়বেন! বিষয়টি সত্যি গুরুত্বপূর্ণ তাই আমরা আমাদের গল্প সবাইকে শুনাতে চাই। সবাই জানুক এবং প্রকৃত সাহসীরা আবেদন করুক।“
মঙ্গলে যেতে পারবেন এমন ৪জন মানুষ প্রত্যেকের সাথে দেয়া হবে ৫,৫১১ পাউন্ড ওজনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী। নভোচারীরা নিজ নিজ ক্যাপস্যুলে করে নিজের জন্য এসব প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে যাবেন।
প্রত্যেকের জন্য আলাদা ভাবে খাবার ও সোলার প্যানেল দেয়া হবে কারণ মঙ্গলে পৃথিবীর মত খাবার বা পানি নেই।
যদিও মার্স ওয়ান নামের এ প্রতিষ্ঠান মঙ্গলে মানুষ পাঠাবেন বলে ঠিক করেছেন সেখাত্রে তাদের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে স্পেস রেডিয়েশান। এক টানা ৫০০ দিনের বেশী কোন মানুষ বা নভোচারী মহাকাশে অবস্থান করতে গেলে সেখাত্রে আরও ৫০০ দিন বা ৫০০ দিনের বেশী মহাকাশে অবস্থান অত্যন্ত ঝুঁকির কাজ কারণ এক্ষেত্রে অভিযাত্রীদের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। যদিও মার্স ওয়ান থেকে জানানো হয়েছে যেখানে মঙ্গলে মানুষ পাঠানোটাই সবচেয়ে বেশী ঝুঁকির কাজ সেখানে স্পেস রেডিয়েশান তেমন কোন ঝুঁকি নয়।
ঘটনা যাই হোক! শেষ পর্যন্ত ২০২২ সালে মঙ্গলে যদি বসবাসের জন্য মানুষ পাঠানোও হয় এবং তারা সেখানে যদি নতুন এক পৃথিবীর ভিত্তি স্থাপন করেন সেখেত্রে বিষয়টা মন্দ হবেনা।