দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কথাটি কারো বিশ্বাস নাও হতে পারে। মানুষের মাথাতেই আছে ২২টি হাড়! দীর্ঘদিনের গবেষণা শেষে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, মানুষের মাথাতেই আছে ২২টি হাড়। এর মধ্যে অবশ্য মুখমণ্ডলের হাড়ও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। মাথার খুলিতে আছে ৮টি হাড়। এই ৮টি হাড়ের মধ্যে সামনে একটি, মধ্যকপালে দুটি, দুটি অস্থায়ী, মাথার খুলির পিছনে একটি, নাকের পিছনে একটি এথময়েড হাড় এবং একটি স্ফেনয়েড হাড়। মুখমণ্ডলে আছে ১৪টি হাড়। এর মধ্যে উপরের পাটি ও নিচের পাটির হাড়ও ধরা হয়েছে।
মাথার খুলি যে কোনো আঘাত থেকে মানুষের মস্তিষ্ক রক্ষা করে। পুরুষদের মস্তিষ্কের গড় ওজন ১৩৭৫ গ্রাম। এর মধ্যে ব্যতিক্রমও আছে। রুশ ঔপন্যাসিক তুর্গেনেভের মস্তিষ্কের ওজন ছিল ২০২১ গ্রাম, বিসমার্কের মস্তিষ্কের ওজন ছিল ১৮০৭ গ্রাম। অথচ বিখ্যাত ফরাসী রাজনীতিবিদ গ্যামবেট্টার মস্তিষ্কের ওজন ছিল মাত্র ১২৯৪ গ্রাম। মেয়েদের মস্তিষ্কের ওজন পুরুষদের তুলনায় কম। কারণ মেয়েদের মস্তিষ্ক আকারে ছোট। সবচেয়ে বড় নারী মস্তিষ্ক রেকর্ড করা হয় ১৭৪২ গ্রাম। আর বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক ছিল স্বাভাবিক ওজনের।
পশুদের মধ্যে হাতির মস্তিষ্ক ৫ কেজি, তিমির ১০ কেজি। শরীরের আনুপাতিক হারে মানুষের মস্তিষ্কের তুলনায় তিমির মস্তিষ্ক অনেক ছোট। ডর্ফ বানরের মস্তিষ্কের আনুপাতিক হার হচ্ছে শরীরের প্রতি ২৭ গ্রাম ওজনের অনুপাতে ১ গ্রাম মস্তিষ্ক, ক্যাপুচিন বানরের ১৭.৫ গ্রাম শরীরের অনুপাতে ১ গ্রাম। যেখানে মানুষের শরীরের প্রতি ৪৪ গ্রামের জন্য মস্তিষ্কের ওজন ১ গ্রাম।
মস্তিষ্কের ক্ষমতা
মানুষের মস্তিষ্কে আছে ১০০ বিলিয়নেরও বেশি নিউরন বা নার্ভ সেল। মস্তিষ্কের আদেশ এসব নিউরনের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক তরঙ্গের আকারে পৌঁছায়। এসব তরঙ্গের গতি ঘণ্টায় ৪০০ কিলোমিটার বা তারও বেশি। যা একটি বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালাতে যে পরিমাণ শক্তি দরকার তার চেয়েও বেশি। আর শরীরের যে কোনো অঙ্গের চেয়ে মস্তিষ্কে অনেক বেশি পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়। আমরা শরীরের প্রয়োজনে যে খাবার খাই, তার পাঁচ ভাগের একভাগই খরচ হয় মস্তিষ্কের শক্তি উৎপাদনের পিছনে।
একটি ১০০ বছর বয়স্ক মানুষের মস্তিষ্কে যে পরিমাণ ধারণ ক্ষমতা, তা যদি কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়, তাহলে ১০ থেকে ১৫ বিট ক্ষমতা কেবল প্রকাশ করা যাবে। আর যে হারে কম্পিউটার উন্নত হচ্ছে, এ হারে যদি কম্পিউটারের চিপ উন্নত করা যায়, তাহলে মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতায় পৌঁছতে সময় লাগবে পঁয়ত্রিশ বছর। তবে এখানে কেবল মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতার কথা বিবেচনায় আনা হয়েছে। অর্থাৎ তথ্য ভাণ্ডারের দিক থেকে মস্তিষ্কের মান হতে পারবে। বাকি রইল জটিল চিন্তা, সৃজনশীলতা ও আবেগ। সেটা পাওয়ার আশা করা যাবে না কোনোভাবেই। তবে যত জটিলই হোক না কেন, এক মুহূর্তে কেবল একটি চিন্তাই করা সম্ভব।
# জন্মের সময় আমাদের শরীরে ছিল ৩০০ টি হাড়। পরিণত বয়সে আমাদের শরীরের হাড়ের সংখ্যা হয়ে যায় ২০৬টি। প্রশ্ন জাগতে পারে, বাকি হাড় কোথায় যায় আসলে বয়স যত বাড়তে থাকে, ততই একটার সঙ্গে আরেকটি হাড় জোড়া লাগতে শুরু করে। একসময় ২০৬টি হাড় হয়ে যায়।
# মস্তিষ্কের তিনভাগের একভাগ ব্যবহূত হয় চোখ নিয়ন্ত্রণে। আসলে আমরা মস্তিষ্কের মাধ্যমেই দেখি। আমাদের চোখজোড়া কেবল ক্যামেরা হিসেবে কাজ করে।
# বেশিরভাগ বিজ্ঞানী মনে করেন ‘ফটোগ্রাফিক মেমোরি’ বলতে কিছু নেই, আসলে এটি একটি মিথ। তবে চালাক-চতুর মানুষ ভালোমতো মনে রাখার জন্য তাদের মস্তিষ্ক চর্চা করেন।
# মাথার খুলিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ছোট ছোট ছিদ্র। এই ছিদ্র পথেই করোটির নার্ভ যাতায়াত করে তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে।
# আকার অনুপাতে মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতার বিচার করা যায় না। এটা মানুষ বা পশু- যে কোনো প্রাণীর বেলাতেই প্রযোজ্য। তথ্যসূত্র: দৈনিক যুগান্তর।