দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কোনো কারণ ছাড়াই মানসিক চাপ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে? তাহলে এর সাবধান কী। অহেতুক চিন্তাভাবনা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে বাড়ছে স্নায়ুর এইসব জটিল রোগ। এটি নিরাময়ের পদ্ধতি এখনও আবিষ্কার হয়নি।
সর্বক্ষণই মাথায় গিজগিজ করছে হাবিজাবি চিন্তা-ভাবনা? অল্পতেই উদ্বেগ বাড়ছে। মন সারাক্ষণই চঞ্চল-অস্থির। দুশ্চিন্তায় মন ও মস্তিষ্ক যেনো কুরে কুরে খায়। মানসিক স্থিতিটাই যেনো শেষ করে দেয়। তলে তলে মনের চাপ আরও বাড়তে থাকে। অহেতুক দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত উদ্বেগ শুধু মানসিক চাপই বাড়াচ্ছে তা না, মারাত্মক মানসিক রোগের কারণও হয়ে উঠতে পারে এটি। আপনি জানেন কী, উদ্বেগ বাড়লে তার থেকে পার্কিনসন্সের মতো অসুখের ঝুঁকিও বাড়ে?
আপনার বিশ্বাস না হলেও এটিই কিন্তু সত্যি। ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডনের গবেষকরা দাবি করেছেন যে, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা যদি কখনও মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তাহলে তা মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলোর উপর প্রভাব ফেলতে শুরু করে। দেখা যায় একটা সময় গিয়ে মস্তিষ্কের সঙ্কেত পাঠানোর ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে থাকে। ধীরে ধীরে পার্কিনসন্সের মতো রোগও তখন জাঁকিয়ে বসতে পারে।
২০০৮ হতে ২০১৮ সাল অবধি প্রায় ১ লাখ মানুষের উপর পরীক্ষা করে দেখে তবেই এমন একটি দাবি করেছে ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডনের গবেষকরা। মুখ্য গবেষক জুয়ান বাজো অ্যাভারেজ় জানিয়েছেন যে, ৫০ বছরের চৌকাঠ পেরিয়েছেন এমন মানুষজনকেই পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। দেখা যায়, মূলত যাদের মানসিক চাপ, উদ্বেগ সবচেয়ে বেশি থাকে, তারাই জটিল স্নায়ুর রোগের শিকার হয়ে থাকেন। দুশ্চিন্তা করতে করতে এই সব মানুষজনের নিজস্ব চিন্তাভাবনা করার শক্তিও হারিয়ে যায়। পোশাক পরিবর্তন থেকে বাথরুম যাওয়া— সব কিছুর জন্যই অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন তারা।
গবেষকরা বলেছেন, মানুষের মস্তিষ্কের ‘সাবস্ট্যান্সিয়া নাইগ্রা’ নামক অংশ হতে ডোপামিন নামে এক ধরনের রাসায়নিক উপাদান নিঃসৃত হয়ে সেটি আমাদের ভাবনাচিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। মন ভালো থাকার পিছনেও এর ভূমিকা রয়েছে। মস্তিষ্কের এই অংশ অকেজো হয়ে গেলেই, ডোপামিন নিঃসরণ তখন কমে যায়। তখনই পার্কিনসন্সের সূচনা হয়ে থাকে। আর যতোদিন যায়, রোগ ক্রমেই মন এবং মস্তিষ্ককে পুরোপুরি অকেজো করে দিতে শুরু করে দেয়। আর তখন হাতের লেখা ছোট হতে হতে প্রায় বিন্দুর মতো হয়ে যায়। কমে যায় হাঁটার গতিও। চোখের সামনে হঠাৎই ভেসে ওঠে নানা রকম ছবি। জীবনের আনন্দও তখন কমতে শুরু করে। প্রথমেই অল্পসল্প হাত কাঁপার লক্ষণ দেখা দেয়। পরে এক সময় হাঁটাচলা করার ক্ষমতাও কমে যেতে থাকে। এই রোগে আক্রান্তদের অনেকেই ক্রমেই স্বাভাবিক কাজ করার শক্তিটুকুও এক সময় হারিয়ে ফেলেন।
এই রোগ হলে সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা গেলে, এই অসুখকে নিয়ন্ত্রণে রাখাও সম্ভব বলে মত দিয়েছেন চিকিৎসকরা। ৫০ বছরের চৌকাঠ পেরোনোর পরেই কোনও রকম উপসর্গ দেখা দিলেই অবিলম্বে স্নায়ুরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। পার্কিনসন্সের পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব কি-না, সেটি নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। মস্তিষ্কের এই জটিল রোগ এক বার ধরা পড়লে সারা জীবন চিকিৎসার মধ্যেই থাকতে হবে। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org