দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে পুড়ে যাওয়া তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডের শ্রমিকরা বকেয়া বেতন পরিশোধসহ বিভিন্ন দাবিতে শনিবার ১ ডিসেম্বর সকালেও বিক্ষোভ করেছেন। দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করার পর তাঁরা আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল মহাসড়কের জিরাবো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে সড়কটি অবরোধ করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
এ সংঘর্ষের সময় অন্তত ১৫ শ্রমিক আহত হন। পরে শ্রমিকরা কারখানার পাশের একটি স্কুলমাঠে গিয়ে দিনভর তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি বিজিএমইএর প্রতিনিধিদলের প্রস্তুতকৃত নামের তালিকায় নিজ নিজ নাম অন্তর্ভুক্ত করলেও বেতনের দেখা পাননি। বিজিএমইএ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তাঁদের সমঝোতা না হওয়ায় তাঁরা শনিবার বেতন পাননি বলে জানিয়েছেন বিজিএমএর এক কর্মকর্তা।
কি কারণে শ্রমিক বিক্ষোভ
১ ডিসেম্বর শনিবার সকাল ৯টার দিকে তাজরীন ফ্যাশনস কারখানাটির বেঁচে যাওয়া শ্রমিকরা কারখানার সামনে জড়ো হতে থাকেন। এরপর তাঁরা নভেম্বর মাসের বেতন ও পরবর্তী তিন মাসের বেতনসহ মোট চার মাসের বেতন এবং শ্রমিকদের পুনর্বাসনের দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে দফায় দফায় বিক্ষোভ করতে থাকেন। তাঁরা ওই কারখানার মালিকসহ আগুনের ঘটনায় জড়িত দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারেরও দাবি জানান।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ১ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাজরীন ফ্যাশনসের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শ্রমিকরা বাইপাইল-আবদুলস্নাহপুর মহাসড়ক অবরোধ করার লক্ষ্যে অগ্রসর হতে থাকেন। এ সময় পুলিশ তাঁদের বাধা দিলে শ্রমিকরা ফিরে এসে পাশের নিট এশিয়া কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে ওই কারখানার শ্রমিকদেরও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু ওই কারখানার শ্রমিকরা তাঁদের আহ্বানে সাড়া দেননি। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সকাল ১০টার দিকে শ্রমিকরা স্থানীয় নিশ্চিন্তপুর বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়মাঠে অবস্থান নেন। এ সময় পুলিশ তাঁদের ঘিরে রাখে। একপর্যায়ে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিলসহ আবদুলস্নাহপুর-বাইপাইল মহাসড়কের জিরাবো বাসস্ট্যান্ডের অদূরে প্যাঙ্কো এবং নিউ এ্যাজ অ্যাপারেলস লিমিটেডের কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন এবং ওই প্রতিষ্ঠান দুটির শ্রমিকদের তাঁদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় নিউ এ্যাজ কারখানার শ্রমিকরা তাঁদের সঙ্গে যোগ দিলে হাজারখানেক শ্রমিক আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল মহাসড়কটি অবরোধ করেন। প্রায় আধা ঘণ্টা অবরোধ করে রাখার পর পুলিশ শ্রমিকদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে শ্রমিকদের লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করলে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ হয়। এ সময় অন্তত ১৫ শ্রমিক আহত হন। একপর্যায়ে শ্রমিকরা পিছু হটে ফের নিশ্চিন্তপুর প্রাথমিক স্কুলমাঠে চলে যান।
কয়েকজন শ্রমিক জানান, শনিবার ১ ডিসেম্বর তাঁদের বেতন দেওয়া হবে শুনে তাঁরা কারখানার সামনে এসেছেন। এসে তাঁরা জানতে পারেন, বিজিএমইএ টঙ্গীতে তাদের একটি অফিসে সব শ্রমিককে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু তাঁরা সেখানে যেতে নারাজ।
তাজরীন ফ্যাশনসের জোহরা বেগম নামের এক শ্রমিক জানান, শ্রমিকদের নভেম্বর মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। আর স্টাফদের দুই মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। কবে কারখানা চালু হবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই আগামী তিন মাসের বেতনসহ নভেম্বর মাসের বেতন প্রদানের দাবিতে তাঁরা মিছিল করছেন।
বিজিএমইএ কর্মকর্তার বক্তব্য
গতকাল ১ ডিসেম্বর তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডের শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার উদ্দেশে নিশ্চিন্তপুর এলাকায় আসে বিজিএমইএর একটি প্রতিনিধিদল। ওই দলে ছিলেন বিজিএমইএর পরিচালক আবদুল আহাদ আনসারী। তিনি বলেন, দিনভর তাঁরা তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডে যাঁরা চাকরি করতেন তাঁদের একটি তালিকা তৈরি করেছেন। তালিকাভুক্ত হয়েছেন প্রায় এক হাজার ১৫০ জন শ্রমিক-কর্মচারী। কিন্তু এ তালিকায় এমন অনেক শ্রমিক রয়েছেন, যাঁরা কয়েক মাস আগে চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। বিষয়টি যাচাই-বাছাই শেষে বেতন দিতে কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়েছে। দুপুরে শ্রমিকদের টঙ্গী এলাকায় বিজিএমইএর আইআরআই অফিসে নিয়ে বেতন দিতে চাওয়ায় তাঁদের সঙ্গে সমঝোতা হয়নি। তাঁদের টঙ্গী নিয়ে যাওয়ার জন্য বিজিএমইএ ১০টি বাসও প্রস্তুত রেখেছিল নিশ্চিন্তপুর এলাকায়। তিনি আরো বলেন, বিকেলে সিদ্ধান্ত হয়েছে রবিবার ২ ডিসেম্বর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি, দুজন প্রতিনিধি, একজন সুপারভাইজার, একজন লাইন চিফ, বিভিন্ন প্রশাসনসহ কয়েকজন ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধিদল বিজিএমইএর ঢাকার অফিসে যাবে। তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে বেতন দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ঈশ্বরদী ইপিজেডের দুটি পোশাকশিল্প বন্ধ ঘোষণা
আমাদের ঈশ্বরদী প্রতিনিধি জানান, শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা কারণে অবশেষে ঈশ্বরদী ইপিজেডের রোশিতা নিটওয়্যার ও মেগাটেক্স প্রাইভেট লিমিটেড নামের দুটি কারখানা অনির্দিষ্ট কালের জন্য কর্তৃপক্ষ বন্ধ ঘোষণা করেছে। চায়নার এ দুটো সোয়েটার কারখানা গতকাল শনিবার থেকে বন্ধের ঘোষণা জানিয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই কারখানা দুটির প্রধান ফটকে নোটিশ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। আকস্মিকভাবে কারখানা দুটি বন্ধ ঘোষণা করায় প্রায় সাড়ে ছয় হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়লেন। এতে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে আকস্মিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করায় কারখানা দুটির শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কারখানা দুটিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।