দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মোহাম্মদ খালেদ হোসেন। বীরদর্পে যাঁর দেশে ফেরার কথা কিন্তু মৃত্যুর কাছে হেরে যাওয়া খালেদের মরদেহ উদ্ধারে ব্যস্ত সবাই! এভারেস্টে গিয়ে অনেকেই মৃত্যুবরণ করেন কিন্তু খালেদের মৃত্যুটা ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। কারণ এভারেস্ট জয় করে ফেরার পথে মৃত্যু হয় এই এভারেস্ট জয়ী বাংলাদেশীর।
কিভাবে, কি প্রতিকূল অবস্থা পাড়ি দিয়ে মোহাম্মদ খালেদ হোসেন এই এভারেস্ট জয় করলেন তার ইতিহাস বাঙালিদের কাছে অজানায় রয়ে গেল। কারণ বীরের মতো এভারেস্ট জয় করলেও ফিরে আসার পথে তিনি মৃত্যুর কাছে হেরে গেছেন। খালেদের দূর্ভেদ্য সেই এভারেস্ট জয় এখন শুধুই ইতিহাস। তাঁর পরম নিকটতম সহধর্মিণী তাহমিনা শৈলী আর দেড় বছরের পুত্র সুম্মিও জানলেন না সেই অজানা কাহিনী। তারাও হয়ে গেলেন ইতিহাসের স্বাক্ষী।
এদিকে এভারেস্ট জয় করে ফেরার পথে নিহত বাংলাদেশী পর্বতারোহী খালেদের মরদেহ নামিয়ে আনতে ১০ শেরপা এখন সাউথ সামিটের পথে রয়েছেন। গতকাল উদ্ধারকারী দলটি চতুর্থ বেস ক্যাম্পে পৌঁছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এই ক্যাম্পের উচ্চতা প্রায় ৬ হাজার ৮০০ মিটার।
হিমালয়ের সাউথ সামিটের যেখানে সজলের মৃতদেহ শেরপারা দেখে এসেছেন তার উচ্চতা প্রায় ২৮ হাজার ৭৫০ ফুট। পরশু নাগাদ উদ্ধারকারী শেরপারা সেখানে পৌঁছাবেন বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে। গতকাল শনিবার সকালে ১০ সদস্যের শেরপা দল হিমালয়ের বেস ক্যাম্প থেকে খালেদের মৃতদেহ ফিরিয়ে আনার এ অভিযান শুরু করেন। নেপালে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস বিষয়টি সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে বলে জানা গেছে। এছাড়া সজল খালেদের পরিবারের পক্ষে কয়েকজন শুভাকাঙড়্গীও এ প্রক্রিয়ায় সম্পৃত্ত রয়েছেন।
জানা গেছে, শেরপারা চতুর্থ বেস ক্যাম্প পর্যনত্ম পৌঁছেছেন। সকালে রওনা হওয়ার পর পথে কোথাও বিশ্রাম না নিয়ে সেখানে পৌঁছেন তারা। চতুর্থ বেস ক্যাম্পে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আজ রোববার ভোর নাগাদ আবারও যাত্রা শুরু করার কথা শেরপা দলটির। আশা করা হচ্ছে পরশু নাগাদ তারা সজলের মৃতদেহের কাছে হিমালয়ের সাউথ সামিটে পৌঁছাতে পারবে।
উল্লেখ্য, খালেদের মরদেহ নামিয়ে আনতে নেপালের বেসরকারি সংস্থা সেভেন সামিট ট্র্যাকিং লিমিটেডকে নিয়োগ করা হয়। ২৪ মে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি আধাঘণ্টা পর পর উদ্ধার তৎপরতার সর্বশেষ অবস্থা ও ভিডিও চিত্র সরবরাহের পাশাপাশি স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করবে সেভেন সামিট।
শেরপারা খালেদের মৃতদেহ বেস ক্যাম্প-২ পর্যন্ত নামিয়ে আনবেন। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে করে তার লাশ কাঠমান্ডুতে আনা হবে বলে জানান দূতাবাসের কর্মকর্তারা। উদ্ধার অভিযানের পুরো খরচ সরকার বহন করবে। খালেদের মৃতদেহ ফিরিয়ে আনতে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে।
সর্বশেষ এভারেস্ট অভিযানে বেরিয়ে গত ১০ এপ্রিল ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু পৌঁছান খালেদ। ২৫ এপ্রিল কাঠমান্ডু থেকে এভারেস্টের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। খালেদ এর আগে সিকিমের ফ্রে পর্বত (২০০৬), নেপালের মাকালু (২০০৯), হিমালয়ের বাংলাদেশ-নেপাল ফ্রেন্ডশিপ পিক (২০১০), অন্নপূর্ণা রেঞ্জের সিংগুচুলি পর্বত (২০১১) জয় করেন।