ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ আর কতবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়বে তা একমাত্র উপরওয়ালায় জানেন। বার বার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রভাব পড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের উপর, যে কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে হু হু করে।
মহাজোট সরকারের আমলে পঞ্চমবারের মতো সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম ফের বাড়ানো হচ্ছে। লিটারপ্রতি ২ টাকা থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। চলতি মাসের শেষে অথবা আগামী মাসের শুরুতে সরকারের নির্বাহী আদেশে দাম বৃদ্ধির ঘোষণা আসতে পারে বলে জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। এর আগে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সারাংশ অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে বলেও ওই সূত্র নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, ৮ মার্চ সংশ্লিষ্ট দফতরে শীর্ষ তিন কর্মকর্তার এক বৈঠকে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর আগে চারবার জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানো হয়। খবর দৈনিক যুগান্তরের।
জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কিছুই জানেন না জানিয়ে বলেন, আপনারা হাওয়া থেকে শুনে এসব প্রশ্ন করলে তো হবে না। ৮ মার্চ বৈঠক সম্পর্কে তিনি বলেন, উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে অনেক বিষয় নিয়ে কথা হয়। তাই বলে ওই বৈঠকে তেলের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে কিছু হয়েছে এমন কথা আপনারা কিভাবে জানলেন। সম্প্রতি সংসদে অর্থমন্ত্রী জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে যে কথা বলেছেন সে সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা অর্থমন্ত্রী জানেন তিনি কি বলেছেন। আর উনার কথার ওপর আমার কোন মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তিনি বলেন, আমি মুখপাত্র নই। প্রতিমন্ত্রী মুখপাত্র। তাকে জিজ্ঞেস করুন।
জ্বালানি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ তিন কর্মকর্তা ৮ মার্চ সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টার দফতরে বৈঠক করেন। এই বৈঠকে উপস্থিত অপর কর্মকর্তারা হচ্ছেন প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক ও জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ওই বৈঠকে জ্বালানি তেলে ভতুর্কি কমাতে মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করা হয়। একই বৈঠকে লিটারপ্রতি জ্বালানি তেলের মূল্য ২ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাশাপাশি চলতি মাসের শেষে বা আগামী মাসের শুরুতে মূল্য বৃদ্ধি করার আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব পাঠানোরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, বোরো মৌসুম চলার কারণে এই মাসে আগামী মাসের শুরুতে মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা আসার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে জ্বালানি তেলে ভর্তুকি ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে জ্বালানি তেলে সরকার ৮ হাজার ২শ’ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। এদিকে, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়াতে প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) আমলে নেয়া হবে না বলে জানা গেছে। সরকারের নির্বাহী আদেশেই মূল্য বৃদ্ধি কার্যকর করা হবে।
২০১১ সালে সরকার ভর্তুকির দোহাই দিয়ে মোট চারবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। গত এক বছরে প্রতি লিটার ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রল ও অকটেনের দাম বেড়েছে ১৭ টাকা করে। কোন ধরনের গণশুনানি ছাড়াই ২০১১ সালের ৫ মে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম ২ টাকা বাড়ানো হয়। ১৯ সেপ্টেম্বর ফার্নেস অয়েলের দাম ৪২ টাকা থেকে ৮ টাকা বাড়িয়ে ৫০ টাকা পুনঃনির্ধারণ করা হয়। এছাড়া ডিজেল, পেট্রল, অকটেন ও কেরোসিনে ৫ টাকা করে বাড়ানো হয়। এর দু’মাসের মাথায় ১০ নভেম্বর সরকার সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম ৫ টাকা করে বাড়ায়। সর্বশেষ ২৯ ডিসেম্বর আবার সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম ৫ টাকা বাড়ানো হয়। নতুন মূল্যহার অনুযায়ী প্রতি লিটার ডিজেল ৬১ টাকা, কেরোসিন ৬১ টাকা, পেট্রল ৯১ টাকা, অকটেন ৯৪ টাকা ও ফার্নেস অয়েল ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে এখন। গত বছরও প্রতি লিটার ডিজেল ৪৪ টাকা, কেরোসিন ৪৪ টাকা, পেট্রল ৭৪ টাকা, অকটেন ৭৭ টাকা এবং ফার্নেস অয়েল ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর চলতি বছরের মার্চ বা এপ্রিলে আরও একবার জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে পঞ্চমবারের মতো মূল্য বৃদ্ধি হবে।