দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সঠিক সময়ে নানা ব্যস্ততার জন্য আমাদের নামাজ ‘কাজা’ হয়ে যায়। আমরা অনেকেই জানিনা কিভাবে এই ‘কাজা’ নামাজ পড়তে হয়। আজ জেনে নিন ‘কাজা’ নামাজ পড়ার নিয়ম।
নামাজ হলো আল্লাহ তাআলা কর্তৃক একটি ফরজ ইবাদত। প্রিয়নবী (সা:) বলেছেন, ‘ইসলাম ও কুফরির মধ্যে পার্থক্যকারী হচ্ছে নামাজ।’ তাই তিনি আরও বলেছেন, ‘ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দেওয়া কুফরি।’ নবী করীম (সা:) এর এই বক্তব্য হতে বোঝা যাচ্ছে নামাজ কখনও ছাড়া যাবে না।
অপরদিকে নামাজ যথা সময়ে আদায়ের ব্যাপারে প্রিয়নবী (সা:) কর্তৃক এতো সতর্কতা ও ফজিলত বর্ণনার পরও বিভিন্ন কারণে মানুষের নামাজ ছুটে যায়। কারণবশত: যদি যথা সময়ে নামাজ পড়তে না পারা যায় ওই নামাজ অন্য নামাজের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আগেই আদায় করাকে ‘কাজা’ বলা হয়। নামাজের ‘কাজা’ আদায়ের সুবিধার্থে ফউত হওয়া নামাজকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেটি তাহলো- ফাওয়ায়েতে কালিল ও ফাওয়ায়েতে কাছির
ফাওয়ায়েতে কালিল :
৫ ওয়াক্তের কম নামাজ তরক (‘কাজা’) হওয়া। এ অল্পসংখ্যক নামাজ তরককে ফাওয়ায়েতে কালিল বা অল্প কাজা বলে বিবেচিত হয়।
ফাওয়ায়েতে কাছির :
বেশি ওয়াক্ত নামাজ তরক (‘কাজা’) হওয়া। অর্থাৎ ৫ ওয়াক্তের অধিক নামাজ ছুটে যাওয়া; তা যতোদিনের নামাজই হোক না কেনো তাকে ফাওয়ায়েতে কাছির’ বা অধিক কাজা বলা হয়ে থাকে।
নামাজের কাজা আদায়ের নিয়ম :
৫ ওয়াক্তের কম তথা অল্প কাজা নামাজ ওয়াক্তিয়া (প্রত্যেক ওয়াক্তের) নামাজের ধারাবাহিকতায় ওই ওয়াক্তের নামাজের সঙ্গেই আদায় করা। ৫ ওয়াক্তের বেশি তথা ফাওয়ায়েতে কাছির বা বেশি নামাজের ‘কাজা’ প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজের আগেই পড়া।
‘কাজা’ আদায়ে যে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে তা হলো :
# নামাজের ‘কাজা’ আদায়ের কথা ভুলে গেলে বা
# নির্ধারিত ওয়াক্তের নামাজের সময় সংকীর্ণ হলে বা
# নামাজের ‘কাজা’ ৫ ওয়াক্তের বেশি হলে ওই নামাজের ‘কাজা’ পরেও পড়া যাবে।
# ৫ ওয়াক্ত বা তার কম ওয়াক্তের নামাজ ছুটে গেলে তা ধারাবাহিকভাবে ‘কাজা’ আদায় করতে হবে। আগের নামাজগুলো আগে, পরের নামাজ পরে পড়তে হবে। যেমন- কোনো ব্যক্তির ফজর ও জোহরের নামাজ তরক (‘কাজা’) হলে, আছরের নামাজ আদায়ের পূর্বে প্রথম ফজরের নামাজ ‘কাজা’ আদায় করবে; অতপর জোহরের নামাজ ‘কাজা’ আদায় করতে হবে। তারপর আছরের ওয়াক্তিয়া নামাজ আদায় করতে হবে।
কাজা আদায়ে যে বিষয়টি জানা থাকা আবশ্যক :
# ফরজ নামাজের ‘কাজা’ আদায় করা হলো ফরজ।
# ওয়াজিব নামাজের ‘কাজা’ আদায় করা হলো ওয়াজিব।
# তবে সুন্নাত নামাজের ‘কাজা’ পড়তে হয় না। তবে ফজরের সুন্নাত নামাজের ‘কাজা’ আদায় করতে হবে; ‘কাজা’ আদায়ের সময় হলো জোহরের নামাজের আগমুহূর্ত পর্যন্ত। যদি জোহরের ওয়াক্ত হয়ে যায় তাহলে তা আর পড়তে হবে না।
# বলা হয়েছে যে, নামাজের ‘কাজা’ যদি জামাআতের আদায় করে তাহলে ইমাম ক্বেরাআত জোরে পড়বে। তবে জোহর ও আছরের ক্বেরাআত চুপে চুপেই পড়বে।
# এক মাস বা তার চেয়েও বেশিদিনের নামাজের ‘কাজা’ হয়ে গেলে এই নামাজের ‘কাজা’ নির্ধারিত ওয়াক্তের সঙ্গে সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আদায় করে নিতে হবে।
# জীবনে যে ব্যক্তি কোনো দিন নামাজই পড়েনি বা কতো ওয়াক্ত নামাজ তরক ‘কাজা’ হয়েছে সেই হিসাবও যার নাই; ওই ব্যক্তি যখন তরক ‘কাজা’ হওয়া নামাজের ‘কাজা’ আদায় করতে চায়; তবে সে ব্যক্তি প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজের সঙ্গে সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজের ‘কাজা’ একের পর এক আদায় করতে থাকবে। এভাবে নামাজ আদায়কে ‘ওমরি কাজা’ বলা হয়। এভাবে নামাজের ‘কাজা’ আদায়ে রয়েছে অনেক সাওয়াবও।
তবে একটি বিষয় হলো নামাজকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষের জন্য ফরজ করেছেন। সেই নামাজ কখনও ‘কাজা’ করা যাবে না। বিশেষ কারণে নামাজ ‘কাজা’ হতে পারে যেমন অসুস্থ্য থাকলে নামাজ ‘কাজা’ হতে পারে। কিন্তু যে ব্যক্তি সুস্থ্য আছেন তার জন্য সব সময় নামাজ ফরজ। এমনও বলা হয়েছে যে কোনো ব্যক্তি যদি সমুদ্রের ভিতর পানিতে পড়ে যায়, এক চিলতে কাঠ ধরে কোনো মতে বেঁচে থাকেন তখনও তার জন্য নামাজ ফরজ। আরও বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তিকে জঙ্গলের মধ্যে একটি বাঘ তাড়া করেছে জীবন বাঁচাতে তিনি ছুটছেন, তখন যদি নামাজের সময় হয় তখনও তার জন্য নামাজ ফরজ। অর্থাৎ হাদিস শরীফ হতে যে সব তথ্য পাওয়া যায় নামাজ সব সময় ফরজ। সেটি কখনও ‘কাজা’ করা যাবে না।