দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কাঁঠালে কেমিক্যাল দেওয়া যায় এমন কথা কেও স্বপ্নেও ভাবেনি। কিন্তু এবার কেমিক্যালের হাত থেকে রেহাই পায়নি দেশের জাতীয় ফল কাঁঠালও। পাকাতে ও পচনরোধে নানা বিষাক্ত কেমিক্যাল এবং ফরমালিনমিশ্রিত পানিতে চুবানো হচ্ছে কাঁঠাল!
ইতিপূর্বে অন্যান্য ফলে ফরমালিন ও কেমিক্যাল মেশানো হলেও কাঁঠাল ছিল মুক্ত। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে কাঁঠালেও বিষাক্ত কেমিক্যাল ও ফরমালিনের ব্যবহার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকরা। তারা বলেন, এর ফলে অনেকদিন রেখে কাঁঠাল বিক্রি করা যায়। পচন ধরে না। লাভও বেশি। এ কারণে কাঁঠাল বাগানের মালিক, ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা কেমিক্যাল এবং ফরমালিন মেশাচ্ছেন। এমন খবর দিয়েছে দৈনিক ইত্তেফাক।
যাত্রাবাড়ী, বাদামতলী, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও কাওরানবাজারে ১৫টি কাঁঠালের আড়তে গিয়ে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, অল্প কিছু দিন হলো কেমিক্যাল দিয়ে কাঁঠাল পাকানো ও পচন রোধে ফরমালিন ব্যবহার হচ্ছে। বাজারের প্রায় সব ফলই কেমিক্যাল ও ফরমালিন দিয়ে অনেকদিন ধরে বিক্রি হচ্ছে। এতে ফল থাকে টাটকা। খেতে স্বাদ না লাগলেও ক্রেতারা এই ফল কিনে এবং খায়। এসব কারণে তারা কাঁঠালেও বিভিন্ন কেমিক্যাল দিয়ে পাকাচ্ছেন। অনেক ব্যবসায়ী জানান, আগে পাকা কাঁঠালের ঘ্রাণে চারপাশে মাছি ভন ভন করতো। কিন্তু আজকাল কাঁঠালে মাছি পর্যন্ত বসে না।
বিষাক্ত কেমিক্যাল মানবদেহে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের জিজ্ঞেস করা হলে তারা বলেন, কেমিক্যাল কিংবা ফরমালিনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। জানেন এতে লাভ হয় বেশি।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মবিন খান বলেন, কেমিক্যালযুক্ত কাঁঠাল খেলে লিভার নষ্ট, লিভার ক্যান্সার, কিডনিসহ বিভিন্ন ধরনের জটিল ও মরণব্যাধি হওয়ার আশংকা থাকে। মরণব্যাধি আশংকাজনক হারে বৃদ্ধির এটাই অন্যতম কারণ।
অপরদিকে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম বলেছেন, কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো ও ফরমালিন মেশানো কাঁঠাল খেলে স্নায়ু দুর্বল হয়ে নিউরোপ্যাথি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কেমিক্যালের টক্সিনের প্রভাব পড়ে স্নায়ুতে। এর ফলে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর মারাত্মক ক্ষতি হয়। বুদ্ধি কমে যায়। বিকলাঙ্গ শিশু জন্মের হার বেড়ে যাওয়ার এটাও একটা কারণ।
কিডনি, শিশু বিশেষজ্ঞ, গাইনি বিশেষজ্ঞ ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও একই ধরনের মতামত পোষণ করে বলেন, খাদ্যে বিষ মেশানো থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হলে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের মৃত্যুদণ্ডই একমাত্র উপায়। কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এসব ভেজাল রোধ করতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।