দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা যাকে বলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেটি নিয়ে জাতীয় কৌশলপত্র তৈরি করছে সরকার। ইতিমধ্যেই প্রাথমিক খসড়া তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। চূড়ান্ত খসড়াটি আনা হবে কয়েক মাসের মধ্যেই।
গত মাস অর্থাৎ মার্চের শুরুর দিকে এই খসড়াটি তৈরি শুরু হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্যোগ শুরু হয়ে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে। ওই মাসে ‘ডেভেলমেন্ট অব ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ তৈরিতে পদ্ধতিগতভাবে কাজগুলো শুরু করেছিলো সরকারের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন বা এটুআই।
এটুআইয়ের চীফ টেকনোলজি অফিসার মোহাম্মদ আরফে এলাহী জানিয়েছেন, ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই কৌশলপত্রের প্রাথমিক খসড়া প্রায় তৈরির শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তারা কয়েক মাসের মধ্যেই এটির চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। ‘যতো দ্রুত সম্ভব করা হবে। তবে এখানে সরকারি কিছু পদ্ধতি রয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা হবে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং নিতে হবে, বিভিন্ন পলিসির সঙ্গে একটি যাচাই-বাছাই করতে হবে, প্রয়োজনে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংও লাগতে পারে এখানে’।
এআই কৌশলপত্র নিয়ে দেশের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে এটুআইয়ের সিটিও বলেন, ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশনে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কিংবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে একদিকে মেশিনের কার্যক্রম বাড়বে, আবার বিপরীতে মানুষের কার্যক্রমও কমে আসবে। এতে করে মানুষ চাকরি হারাবে। আবার জনসংখ্যা বাড়লেও মেশিনের কার্যক্রমের জন্য চাকরি বাড়বে না। এতে করে চাকরিও সংকুচিত হয়ে আসবে। যে কারণে মানুষকে রিস্কিলিং কিংবা নতুন করে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। তা না হলে বেকারত্ব বেড়ে যাবে ব্যাপকহারে।
অপরদিকে জনসংখ্যা বাড়ার বিপরীতে ল্যান্ডও দিনে দিনে কমে আসবে। এতেকরে মানুষের খাদ্য সংকটসহ নানা প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে উঠে আসবে। তাহলে সেখানেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন পড়বে’ ‘আবার আমরা ট্রাফিক জ্যামের কথা বলে থাকি। ট্র্যাফিক জ্যামও কমবে না, কারণ মানুষ বাড়বে, গাড়ি বাড়বে সে তুলনায় রাস্তা তো বাড়বে না। তাহলে এখানে এমন কিছু নিয়ে আসতে হবে যেখানে মেশিন ইন্টারভেনশন হবে কিন্তু হিউম্যান ইন্টারভেনশনে কাজ হবে না’ ‘এছাড়াও এই মেশিন ইন্টারভেশনের সঙ্গে মানুষের সাইবার ও বাস্তব জগতে নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোও রয়েছে’ বলেছেন, এই চীফ টেকনোলজি অফিসার।
মোহাম্মদ আরফে এলাহী জানিয়েছেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। সব দেশেই এই মেশিনটি ইন্টারভেশন হচ্ছে। বাংলাদেশেও একটু-আকটু কাজ শুরু করেছে। তবে আমরা কী করবো বা কবে নাগাদ করবো কিংবা কীভাবে করবো এই বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা, গাইডলাইন কিংবা মাইলস্টোন আমাদের হাতে নেই। ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইন ও ফাইভজি নিয়ে পরবর্তী ৫ বছরে প্রমোট করার কথাও বলেছেন। এখন যদি জাতীয় পর্যায়ে একটি স্ট্র্যাটেজি গাইডলাইন থাকে যে পরবর্তী ৫ বছরে আসলে আমরা কী করবো। যেটাকে বেইজ ধরে সরকার পরবর্তী ৫ বছরের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইন্ড্রাস্ট্রিতে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং যে অনুয়ায়ী ফোর্থ ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশনের চ্যালেঞ্জগুলো যেনো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে এপ্রিলের প্রথম দিকেই এটুআইয়ের জাতীয় পর্যায়ের একটি কর্মশালা করার কথা। যেখানে এই কৌশলপত্রের বিষয়টিই মূলত গুরুত্ব পাবে। বাংলাদেশে ইতিমধ্যে দুটি মোবাইল ফোন অপারেটর স্থানীয় কোম্পানির সঙ্গে আইটি ডিভাইস তৈরি করেছে ও গ্রাহক পর্যায়ে সেবাও দিচ্ছে। একটি কোম্পানি দেশের বাইরে এই সংক্রান্ত যন্ত্রপাতিও রপ্তানি করছে। তাছাড়া বিক্ষিপ্তভাবে এই খাতে ছোট পরিসরেও বিভিন্ন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে।