দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমাদের দেশে ডেন্টাল চিকিৎসা এখনও ততটা এগুতে পারেনি। কারণ ওই প্রবাদ বাক্যটিই হয়তো ঠিক, ‘দাঁত থাকতে কেও দাঁতের মর্ম বোঝেনা’, আর তাছাড়া দাঁতের চিকিৎসায় অনেকেই ভয় পেয়ে থাকেন। তবে দাঁতের চিকিৎসায় ভয়ের কিছুই নেই।
ধারণা করা হয় ১৭৭০ সালে জন গ্রিন উড সর্বপ্রথম পা দ্বারা চালিত ডেন্টাল চিকিৎসায় ব্যবহূত যন্ত্র তৈরি করেন। সময়টি অনেক পুরনো হলেও আমাদের দেশে ডেন্টাল চিকিৎসায় আধুনিকতা এসেছে খুব বেশি দিন নয়। মাত্র সাত হাজারের মতো অনুমোদিত ডেন্টাল চিকিৎসক এ বিশাল জনগোষ্ঠীর ডেন্টাল সেবা প্রদান করছেন। ‘ডেন্টাল’ শব্দের প্রকৃত অর্থ কিন্তু ‘দাঁত সম্পর্কীয়’, এখানে ছোটদের ২০টি ও বড়দের স্থায়ী ৩২টি দাঁতের পাশাপাশি চোয়াল ও চোয়ালের হাড় ও হাড়ের সন্ধি, মাড়ি, তালু, ঠোঁট, লালা ও লালাগ্রন্থি, জিহ্বাসহ মুখের স্নায়ু পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে ডেন্টাল চিকিৎসায় আমাদের দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাই শুধু প্রবাসীরা নয়, ভিনদেশী রোগীও এখন বাংলাদেশে আসছেন ডেন্টাল চিকিৎসা গ্রহণ করতে। দেশের ডেন্টাল চিকিৎসকরা নিশ্চিত করছেন উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি ও সর্বনিম্ন চিকিৎসার খবর যা রোগীদের আস্থাকে সুদৃঢ় করছে। তারপরও কিছু মানুষ ডেন্টাল চিকিৎসাকে ভয় পায়। ভয়ের প্রধান কারণগুলো চিহ্নিত করে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা করছি।
পরিবার থেকে ভয়
চিকিৎসা গবেষকরা প্রমাণ করেছেন ডেন্টাল চিকিৎসায় যে কোনও ভয়ের বড় অংশ আসে বাবা-মার কাছ থেকে। সেজন্য শিশুর বাবা-মাকেই সচেষ্ট থাকতে হবে, চিকিৎসা ভীতি দূর করতে। ছোটবেলা থেকেই বন্ধুসুলভ ডাক্তারের কাছে শিশুকে নিয়ে যেতে হবে, খাবার না খেলে বা পড়ালেখা না করলে ডাক্তার বা ইনজেকশনের ভয় দেখানো চলবে না। পরিবার থেকেই ডাক্তার ভীতি কাটাতে হবে।
ব্যথার ভয়
প্রায় সব মানুষই নিজ বা প্রিয়জনের অভিজ্ঞতা থেকে বিশ্বাস করেন যে ডেন্টাল চিকিৎসা অনেক কষ্টদায়ক। এমন অযৌক্তিক ধারণা থেকে ডেন্টাল সমস্যা পুষে রাখলে জটিলতা বাড়বে। সমস্যার শুরুতেই চিকিৎসা গ্রহণ করলে তা হবে সহজ, ব্যথাহীন ও স্বল্পসময়ে আরোগ্য লাভ সম্ভব। বর্তমানে অবশকরণের নানা সহজ মাধ্যম আছে যা রোগীকে অসহনীয় কষ্ট দেয় না। ব্যবহূত যন্ত্রপাতিতেও এসেছে আধুনিকতা, যা রোগীকে আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করছে।
চিকিৎসার সফলতা নিয়ে ভয়
দাঁতের চিকিৎসা নিয়ে আমরা যখন গর্ব করি তখন একশ্রেণীর মানুষ এখনও ডেন্টাল চিকিৎসার সফলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তারা ধারণা করে ফিলিং করালে তা ভেঙে যাবে, রুট ক্যানেল চিকিৎসা শেষে দাঁতকে ফেলে দিতে হবে, স্কেলিং করালে দাঁতসহ চোখের বা মস্তিষ্কের ক্ষতি হবে- এমন হাজারো অহেতুক সংশয় কাজ করছে। আমরা আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি গতানুগতিক চিকিৎসার পাশাপাশি ডেন্টাল ক্যান্সার, টুথ ইমপ্ল্যান্ট, কসমেটিক ডেন্টাল চিকিৎসাসহ যুগোপযোগী সব ধরনের চিকিৎসা আমাদের দেশে সফলভাবে হচ্ছে। সুতরাং সফলতা নিয়ে প্রশ্ন এক ধরনের বোকামি।
রোগী সংক্রমণ নিয়ে ভয়
চিকিৎসা গ্রহণের এক মাসের মধ্যে রোগী নতুন কোনও জীবাণুর সংক্রমণে পড়লে খতিয়ে দেখার সুযোগ থাকে- এটি সেই হাসপাতালের অসতর্কতা বা অবহেলার কারণে হয়েছে কি না। পর্যাপ্ত জীবাণুমুক্তকরণ পদ্ধতির অভাবে যেমন রোগ সংক্রমিত হতে পারে তেমনি অটোক্লেভসহ অন্যান্য জীবাণুমুক্তকরণ যন্ত্রের সহজলভ্যতার কারণে এ আশা থাকার কোনও কারণ আছে বলে মনে হয় না। প্রকৃত ডেন্টাল চিকিৎসক এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকেন।
ডেন্টাল সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ ছাড়া ওষুধ সেবন করা যাবে না। দাঁত খুব ছোট হলেও এর সঙ্গে শরীরের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। শরীরের যে কোনও সমস্যার কোনও অননুমোদিত তথাকথিত চিকিৎসকের পরামর্শ থেকে বিরত থেকে সঠিক স্থানে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি নিয়মিত ও নিয়ম অনুযায়ী দাঁত ও মুখ পরিষ্কারের নিয়ম জেনে মেনে চলে মুখকে সুস্থ রাখা যায়। সুস্থ দাঁত সুস্থ শরীরের অন্যতম শর্ত।
# ডা. মোঃ আসাফুজ্জোহা রাজ, রাজ ডেন্টাল সেন্টার, কলাবাগান, ঢাকা।