দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সকল নারীরই মাসে একটি নির্দিষ্ট সময়ে শারীরিক স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় নানা রকম যন্ত্রণা পোহাতে হয়। আর এই যন্ত্রণা যতটাই না স্বাভাবিক ততটাই অসহ্যকর। এবার সেই পিরিয়ডের যন্ত্রণা থেকে মুক্তিলাভ কিভাবে করবেন তা জেনে নিন।
নারীরা ওই পিরিয়ডকালীন সমস্যা চলাকালিন সময়ে পড়ে থাকে নানাবিধ জটিল পরিস্থিতিতে। নারীর এই সমস্যা সাময়িক কিছুদিন চলাকালীন হলেও এটি প্রভাব ফেলে নারীর বিকাশেও। যাকে সহজ ভাষায় আমরা মাসিক বলে থাকি মাসিকের সময় কিংবা কারও ক্ষেত্রে মাসিকের আগে থেকে নারীদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। মাসিক চলাকালীন অথবা বা তার আগে শারীরিক জটিলতার মধ্যে মাথাব্যথা তলপেটে ব্যথা কোমরে ও পায়ের প্রচন্ড ব্যথা যা খুবই স্বাভাবিক ভাবে অনেকেরই হয়ে থাকে। এই মাসিকের যন্ত্রণা নিবারণের জন্য অনেক নারীরাই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে থাকে এবং পাশাপাশি অনেকেই ট্যাবলেটের পাশাপাশি অনেক ঔষধ সেবন করে থাকে যার ফলে তাদের শারীরিক পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
পিরিয়ড চলাকালীন নারীদের কোমরের ও বিভিন্ন পেশীতে নানা ধরনের সমস্যা বা ক্লান্তি দেখা যেতে পারে যার ফলে শরীর অসাড় হয়ে পড়ে তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলতে পারে।
তাহলে আসুন আমরা জেনে নেই খুব সহজে ঘরোয়া পদ্ধতিতে কি করে পিরিয়ডের এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি লাভ করা যায়ঃ
পানি পান করুন
পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে শরীরের পানির পরিমাণ ক্রমেই হ্রাস পেতে থাকে তাই এসময় পানির পান করার কোনো বিকল্প নেই। মাসিক চলাকালীন সময় প্রত্যেক নারীরই যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
প্রচুর পরিমাণ পানি গ্রহণের ফলে মাসিকের যন্ত্রণা ক্ষীণ হতে থাকে এবং বিভিন্ন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী একজন নারীর পিরিয়ড বা মাসিক চলাকালীন সময়ে প্রচুর পানি গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। এছাড়া শারীরিক সতেজতা লাভের জন্যেও পিরিয়ড শেষ হউয়ার কিছুদিন যাবত নারীদের প্রচুর পানি পান করার কথা বলা হয়ে থাকে।
ক্যাফেইন
মাসিক চলাকালীন সময়ে ক্যাফেইন থেকে যথেষ্ট পরিমাণ দূরত্ব বজায় রাখার উপদেশ দিয়ে থাকেন ডাক্তাররা। গরম চা শরীরের মাংসপেশিকে আরাম দেয় এবং ক্লান্তি দূর করে থাকে যার ফলে অনেক বিশেষজ্ঞরাই গরম চামাসিক চলাকালে গ্রহণ করার কথা বলে থাকেন। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো এ সময় ক্যাফেইন থেকে যথেষ্ট পরিমাণ দূরত্ব বজায় রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। চা কফিতে ব্যবহৃত ক্যাফেইন আমাদের শরীরের শিরা উপশিরা যা দিয়ে আমাদের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে ওই সকল অংশকে সংকুচিত করে ফেলে যার ফলে শারীরিক যন্ত্রণা ও ব্যথার পরিমাণ ক্রমশই বাড়তে থাকে। এজন্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আমাদের সকলকে মাসিক চলাকালীন ক্যাফেইন থেকে দূরত্ব বজায় রাখা বাঞ্ছনীয়। চা গ্রহণের ক্ষেত্রে আমরা লেমন টি, জিনজার টি, পিপারমেন্ট টি, চামোমাইল টি, ল্যাভেন্ডার টি ইত্যাদি ধরনের উপকার চা গ্রহণ করতে পারি।
দারুচিনি
দারুচিনি আমাদের শারীরিক ব্যথা উপশমে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। পিরিয়ড চলাকালীন সময় অথবা মাসিক যন্ত্রণা থেকে উপশম লাভের ক্ষেত্রে দারুচিনির অবদান খুবই চমৎকার যা আমাদের সকলের চোখে লক্ষণীয়। ব্যথা উপশমের ক্ষেত্রে দারুচিনিতে থাকা উপাদান সমূহের মধ্যে ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এর পাশাপাশি ফাইবার ও আয়রন এর মত উপকারী উপাদান রয়েছে যার ফলে দারুচিনি আমাদের শরীরের ব্যথা উপশমের পাশাপাশি শরীরের নানা রোগ ও জটিলতা উপশমে খুবই উপকারী মাধ্যম হিসেবে কাজ করে থাকে। মাসিক শুরু হওয়ার ২ থেকে ৩ দিন আগে থেকে ১ টেবিল চামচ পরিমাণ দারুচিনি কে পিসে গুড়ো করে গরম চায়ের সাথে পাঁচ মিনিট ফুটিয়ে তা যদি মধুর সাথে মিশ্রিত করে সেবন করা হয় তাহলে পিরিওড অথবা মাসিকের যন্ত্রণা থাকেনা।
আদা
স্বাস্থ্য সেবায় আদা খুবই উপকারী এবং কার্যকরী ঔষধ। ব্যথা নিবারণের ক্ষেত্রে আদার কোন জুড়ি নেই। আদা ব্যথা নিবারণের সাথে সাথে আমাদের শারীরিক অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে থাকে। পিরিয়ড চলাকালীন সময় নিয়মিত আদা গ্রহণ করে মাসিকের যন্ত্রণা নিবারণ করা সম্ভব। আদা শরীরের ব্যথা উদ্রেককারী প্রোস্টাগ্লাডিয়ানসকে নিয়ন্ত্রণ রাখে যার ফলে সহজে ব্যথা সৃষ্টি হতে পারেনা। আদা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে পরিমাণমতো গরম পানির সাথে এক টুকরো আদা ছেঁচে নিতে হবে। তাতে সামান্য পরিমাণ মধু মেশাতে হবে। মধুর সাথে আদার মিশ্রণটি ভালোভাবে নেড়ে তাতে পরিমাণমতো লেবুর রস মিশিয়ে নিয়মিত গ্রহণ করতে হবে যার ফলে খুব অল্প সময়ে নারীদের মাসিকের যন্ত্রণা কমে আসবে।
অর্গাজম
আনন্দময় যৌনতা অথবা অর্গাজম মাসিকের ব্যথা দূর করতে বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে থাকে। অর্গাজম এর ফলে দেহের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় যার ফলে আমাদের দেহ থেকে বহু ধরনের হরমোন নির্গত হয়ে থাকে। এতে করে আমাদের নানান শারীরিক জটিলতার পাশাপাশি শারীরিক ব্যথাও উপশম হয়ে যায়। রক্ত চলাচল বৃদ্ধির পাশাপাশি হরমোনে নির্গমনের ফলে মাসিকের ব্যথা অনেকাংশেই কমতে থাকে যার ফলে মাসিকের চলাকালীন সময় অর্গাজম ব্যথা নিবারণের একটি অন্যতম পন্থা বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এছাড়া মাসিক চলাকালীন সময়ে চর্বিযুক্ত খাবার থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখা খুবই জরুরি। মাসিক চলাকালীন সময়ে ক্ষতিকর উপাদান লবণ থেকে যথেষ্ট পরিমাণ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে কারণ লবণ এর দ্বারা মাসিকের অথবা পিরিয়ডের ব্যথা বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া ব্যথার সময় তলপেটে গরম অথবা হট ওয়াটার ব্যাগ দ্বারা যন্ত্রণাকে বহুলাংশে কমিয়ে আনা যেতে পারে। মাসিক চলাকালীন যথেষ্ট পরিমাণে পানি ও খাবার গ্রহণ করতে হবে। কলা খাওয়া যেতে পারে কলা শরীরের লৌহ বৃদ্ধির পাশাপাশি পটাশিয়ামের ঘাটতি দূর করে থাকে।