দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আগামীকাল বুধবার। এ রায়ের প্রতিবাদে আগামীকাল সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জামায়াত।
গত ৫ জুন বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়ায় যে কোনো দিন মুজাহিদের মামলার রায় দেওয়ার জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) বলে রেখে দিয়েছিলেন চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।
মামলার কার্যক্রম যেভাবে শুরু
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগের মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে গ্রেফতার করা হয়। ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।
২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মুজাহিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল-১ এ ১০৯ পৃষ্ঠার ৩৪টি বিভিন্ন ঘটনাসহ মোট ছয় হাজার ৬৮০ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগে মুক্তিযুদ্ধের সময় ফরিদপুর ও ঢাকাসহ সারা দেশে সাধারণ মানুষকে হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয় মুজাহিদের বিরুদ্ধে। ২৬ জানুয়ারি এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ এপ্রিল ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক মামলাটি দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করেন।
গত বছরের ২১ জুন মুজাহিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ৭টি অভিযোগে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল-২। ১৯ জুলাই মুজাহিদের বিরুদ্ধে ২৯ পৃষ্ঠার ওপেনিং স্টেটমেন্ট (সূচনা বক্তব্য) উত্থাপন করেন রাষ্ট্রেপক্ষের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও মীর ইকবাল হোসেন। মুজাহিদের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাকসহ রাষ্ট্রপক্ষের ১৭ জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।
তাদের মধ্যে ঘটনার সাক্ষীরা হলেন, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, মুক্তিযুদ্ধকালে গেরিলা বাহিনীর সদস্য জহিরউদ্দিন জালাল ওরফে বিচ্ছু জালাল, সাংবাদিক মাহবুব কামাল, শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের ছেলে সাংবাদিক শাহীন রেজা নূর, মো. রুস্তম আলী মোল্লা, আব্দুল মালেক মিয়া, রঞ্জিত কুমার নাথ ওরফে বাবুনাথ, মোঃ আবু ইউসুফ পাখি, মীর লুৎফর রহমান, একেএম হাবিবুল হক মুন্নু, ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ, চিত্তরঞ্জন সাহা ও শক্তি সাহা। আর জব্দ তালিকার সাক্ষীরা হলেন, বাংলা একাডেমীর সহকারী গ্রন্থাগারিক মো. এজাব উদ্দিন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রধান ডকুমেন্টশন কর্মকর্তা আমেনা খাতুন ও জাতীয় জাদুঘরের সংরক্ষক স্বপন কুমার। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাদের জেরা সম্পন্ন করেছেন।
অন্যদিকে গত ৫ মে মুজাহিদের পক্ষে একমাত্র সাক্ষী হিসেবে সাফাই সাক্ষ্য দেন তার ছোট ছেলে আলী আহমাদ মাবরুর। ট্রাইব্যুনাল সাফাই সাক্ষীর সংখ্যা ৩ জন নির্ধারণ করে দিলেও আর কোনো সাক্ষী হাজির করতে পারেননি আসামিপক্ষ।
গত ৬ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত এবং ৪ ও ৫ জুন মোট ৬ কার্যদিবস রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর ড. তুরিন আফরোজ ও প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল। আর ২২ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত ৬ কার্যদিবসে মুজাহিদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তার প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, আইনজীবী মুন্সী আহসান কবির ও অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান। তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ নিউজ২৪ডটকম।
এদিকে জামায়াতে ইসলামী এই রায়ের প্রতিবাদ জানাতে আগামীকাল দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে।