দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ চীনের রহস্যময় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশটির উহান শহরে এ পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এছাড়া ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৪০-এরও বেশি। যে কারণে বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া ইতিমধ্যেই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে আরও প্রায় ৭টি দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে।
গতকাল (বুধবার) পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল মাত্র ৯ জন এবং ৪৪০ জন আক্রান্ত বলে জানা যায়। এর ঠিক একদিনেই সরকারি হিসাবে আরও ৮ জনের মৃত্যু ও ১০০ জন এতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর বেরিয়েছে। চীনের এই করোনা ভাইরাসটি নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। মানুষ হতে মানুষে সংক্রমিত এই ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও করছে সংস্থাটি।
নেতৃস্থানীয় বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, উহানের এই ভাইরাসে অনুমানের তুলনায় দ্বিগুণ আক্রান্ত হয়েছেন মানুষ। চীন জানায়, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ৪৮৩ জন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত বলে নিশ্চিত হয়েছেন তারা। তবে চীন এও জানিয়েছে যে, আরও ২ হাজার ১৯৭ রোগী আছেন যারা আক্রান্ত কিনা তা এখনও নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, গত বছরের শেষের দিকে হুবেই প্রদেশের রাজধানী শহর উহানে প্রথম এই ফ্লু টাইপের এই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা যায়। পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকায় চীন কর্তৃপক্ষ, গতকাল উহান হতে চলাচলকারী সকল যানবহন বন্ধ ঘোষণা করেছে। হুবেই প্রদেশ এবং তার রাজধানী উহান ভ্রমণে কড়া সতর্কতাও জারি করেছে চীন সরকার।
উহান শহরে প্রায় ৮৯ লাখ মানুষের বসবাস। মূলত ওই শহর হতে উৎপত্তির পর ভাইরাসটি রাজধানী বেইজিংসহ অন্যান্য প্রদেশেও ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও প্রতিবেশী দেশ তাইওয়ান, জাপান, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, ম্যাকাও ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়াতেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভারপ্রাপ্ত প্রধান ভ্যান কেরখোভে এই বিষয়ে জানিয়েছেন, চীন হতে নতুন যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে তার সংক্রমণ, প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে বিশ্বের সমস্ত হাসপাতালকে নির্দেশনা দিয়েছেন তারা। এছাড়াও ভাইরাসটির সংক্রমণ এড়াতে বিশ্বের অনেক দেশ বিমানবন্দরে চীনা নাগরিকদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে বলেও জানা যায়। বাংলাদেশেও বিমান বন্দরে সেই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
চীনের অন্তত ১৫ জন মেডিকেল কর্মী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো হলো জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট। সেভার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) ঘরানার এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়ে থাকে, যা থেকে নিউমোনিয়ার মতো অসুখও হতে পারে।
উল্লেখ্য যে, ২০০২-০৩ সালে চীনে এক সার্স ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছিলো। তখন ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শত শত মানুষের মৃত্যু ঘটে। এবারের ভাইরাসটি মহামারি আকার ধারণ করবে কিনা তা এখনও সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে প্রতিদিন যে হারে এই রোগে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন ও যেভাবে এর বিস্তার ঘটছে তাতে করে মৃতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছে। যে কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বেশ তৎপর হয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে চলেছে।