দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন কিংবা টিকার অপেক্ষায় দিন গুনছে বিশ্ববাসী। মাইক্রোসফ্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস কোভিড -১৯-এর টিকা বিশ্ব কখন হাত পেতে সক্ষম হবে সে সম্পর্কে তার চিন্তাভাবনা প্রকাশ করলেন।
এক ব্লগ পোস্টে তিনি লিখেছেন, টিকা তৈরিতে ১৮ মাস সময় লাগবে। এই বিষয়ে গেটসনোটস ওয়েবসাইটে বিল গেটস লিখেছেন যে, তিনি টিকা উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজেসের পরিচালক অ্যান্থনি এস ফাউসির সঙ্গে একেবারে একমত। তিনি বলেছেন, করোনা ভাইরাসের টিকা ১৮ মাসের মধ্যে পাওয়া সম্ভব। তবে বিল গেটস আরেকটু বেশি আশাবাদী হয়ে বলেছেন যে, ৯ মাসের মধ্যেও টিকা হাতে চলে আসতে পারে। আবার তিনি একই সময় বলেছেন, টিকা উদ্ভাবন করতে দুই বছর সময়ও লেগে যেতে পারে।
প্রচলিত কোন পদ্ধতিতে টিকা তৈরি হয় তার ব্যাখ্যা করে বিল গেটস বলেন, ১৮ মাস যদিও অনেক দীর্ঘ সময় মনে হয় তবুও বিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রে এটাই হবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকা উদ্ভাবনের ঘটনা। টিকা তৈরিতে সাধারণত ৫ বছর সময় লেগে যায়। একবার আপনি লক্ষ্য নির্ধারণ করার জন্য কোনও রোগ বাছাই করার পর আপনাকে ভ্যাকসিন তৈরি করতে হবে এবং তা প্রাণীতে পরীক্ষা করতে হবে। তারপর মানুষের ওপর নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার জন্য পরীক্ষা শুরু করা হয়ে থাকে।
বিল গেটস উল্লেখ করেছেন, কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া খুব দ্রুত হয়েছে। প্রথমত: আর্থিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যাই নেই কারণ সরকার ও সংস্থাগুলি ভ্যাকসিনটি খুঁজে পেতে যা কিছু করার প্রয়োজন তা করার জন্য তাদের সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
এ ছাড়াও বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বিভিন্ন রকম পদ্ধতি নিয়ে কাজও করছেন। বিল গেটস বলেন, গত ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ১১৫ ধরনের ভ্যাকসিন উন্নয়নের তথ্য তিনি হাতে পেয়েছেন। যার মধ্যে বিশেষ ৮ থেকে ১০টি সম্ভাবনাময় বলে তিনি মনে করছেন। এ ছাড়াও শুরুতে যেসব টিকা আসবে তা শতভাগ নিখুঁত হবে না বলেও মনে করেন বিল গেটস। তবে টিকাগুলো কাজ করবে।
বিল গেটস আরও বলেছেন, ‘যদি আমরা নিখুঁত ভ্যাকসিন ডিজাইন করে থাকি তবে আমরা সম্পূর্ণ নিরাপদ ও শতভাগ কার্যকর করতে চাই। একটা ডোজ দিলেই সারাজীবন সুরক্ষা দেবে ও এটি সহজে বহনযোগ্য এবং তা সংরক্ষণযোগ্য হবে। আমি আশা করি যে, কোভিড ১৯ ভ্যাকসিনে সব গুণাবলীই থাকবে। তবে আমরা যে ধরাবাঁধা সময় কাজ করছি তাতে শতভাগ সফলতা আশা করা যাবে না।’
নিজের ব্লগ পোস্টে বিল গেটস উল্লেখ করেছেন যে, শতভাগ নিখুঁত না হলেও টিকা উৎপাদন কোনো মতেই থামানো যাবে না। এ ছাড়াও এটি সবার জন্য অবশ্যই সমানভাবে বন্টনের বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে। বাস্তবতা হলো প্রত্যেকেই একই সময় ভ্যাকসিনটি পেতে সক্ষম হবে না। ৭০০ কোটি ডোজ তৈরি করতে কয়েক মাস – এমনকি কয়েক বছর সময়ও লাগবে। প্রথম ব্যাচটি প্রস্তুত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বিতরণ শুরু করা দরকার।
আসন্ন সমস্ত চ্যালেঞ্জ তালিকাভুক্ত করা সত্ত্বেও গেটস বলেছেন, ‘টানেলের শেষে আলো রয়েছে। আমরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য সঠিকভাবে নিরলসভাবে কাজ করছি। এর মধ্যে আমি অনুরোধ করছি আপনার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা নির্ধারিত নিয়মকানুনগুলো অবশ্যই অনুসরণ করুন। এই মহামারি থেকে উদ্ধার পেতে হলে পরস্পরকে নিরাপদ রাখতে প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে।’
তথ্যসূত্র : deshebideshe.com
করোনা সংক্রান্ত আরও কয়েকটি খবর:
সাংবাদিক ইকবাল আহমদ ছেলেসহ ঘরে চিকিৎসা নিয়ে করোনা জয় করলেন
প্রমাণ রয়েছে উহানের ল্যাব হতেই ছড়িয়েছে করোনা: ডোনাল্ড ট্রাম্প
সৌদি আরব এবার পাসপোর্টে স্টাম্পকৃত ভিসা বাতিল করলো
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।