দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ হংকংয়ের চিকিৎসকরা করোনা চিকিৎসায় নতুন একটি ‘ট্রিক্স’ উদ্ভাবনের কথা জানিয়েছেন। তাদের এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কিত জার্নাল ‘ল্যানসেট’ এ।
সম্প্রতি এই চিকিৎসক দলটি জানিয়েছে, ৩টি অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগের সঙ্গে ইমিউন সিস্টেম বাড়ানোর ওষুধের সংমিশ্রণ- রোগীদের করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হতে দ্রুত সুস্থ করে তুলতে পারে।
তারা বলেছেন যে, যদিও পদ্ধতির আরও পরীক্ষার প্রয়োজন তবে কোভিড -১৯ রোগীদের জন্য এটি একটা নতুন চিকিৎসা যা সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে। বর্তমানে করোনা চিকিৎসায় একমাত্র অনুমোদিত অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ হচ্ছে রেমডিসিভির। বলা হচ্ছে যে, এটা রোগীর অসুস্থতার সময়কাল আরও কমিয়ে দেয়। তবে ওষুধটি পর্যাপ্ত না থাকার কারণে সরবরাহের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
গবেষণার সারসংক্ষেপ হলো :
হংকং ইউনিভার্সিটির ডা. কোভাক-ইয়ুং ইউয়েন (Dr. Kwok-Yung Yuen) এবং সহকর্মীরা রিটোনভির এবং লোপানিভির নামক এইচআইভি/এইডসের ওষুধের সঙ্গে সাধারণ অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ রিবাভিরিন ও বিটা ইন্টারফেরন নামক ওষুধ যা মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসে ব্যবহার করা হয়ে থাকে – এই ৩টি ওষুধ একত্রে করোনা রোগীদের উপর পরীক্ষা করেছিলেন।
ওই গবেষণায় থাকা সমস্ত রোগীদের করোনার আক্রমণের লক্ষণ হালকা থেকে মাঝারি ধরণের ছিল এবং পজেটিভ টেস্টের ৭ দিনের মধ্যে তাদের চিকিৎসা শুরু করা হয়। কিছু চিকিৎসক মনে করেন যে সংক্রমণ শুরুর দিকেই এই ওষুধ ব্যবহার করে রোগীদের চিকিৎসা করা হলে আরও ভালো ফল পাওয়া সম্ভব হতে পারে।
ডা. ইউয়েনের এই দলটি কিছু রোগীদের শুধুমাত্র এইচআইভিতে ব্যবহৃত ওষুধ দুটোর সংমিশ্রণ দেন। অন্যদের এইচআইভি/এইডসের ওষুধের এর সঙ্গে অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ রিবাভিরিন ও বিটা ইন্টারফেরন ইঞ্জেকশন ব্যবহার করা হয়েছিলো।
দেখা গেছে যে, যারা একত্রে ৩টি ওষুধ পেয়েছেন এমন রোগীরা গড়ে ৭ দিন পরেই করোনা ভাইরাস পরীক্ষায় নেগেটিভ হয়েছেন। তবে যারা শুধু এইচআইভির ওষুধ পেয়েছেন তাদের দেখা গেছে, পরীক্ষায় তারা গড়ে ১২ দিন পরে নেগেটিভ হন।
গবেষণা আরেও বলছে যে, ৩টি ওষুধ একত্রে পাওয়া রোগীরা ওষুধ শুরু করার ৪ দিনের মধ্যেই সুস্থতা অনুভব করতে শুরু করেন।
গবেষকরা লিখেছেন যে, ‘প্রাথমিকভাবে এই ৩টি অ্যান্টিভাইরাল থেরাপি শুধু এইচআইভিতে ব্যবহৃত লোপানিভির-রিটোনভিরের চেয়েও এককভাবে নিরাপদ ও উন্নততর বলা যায়। এই যৌথ ওষুধগুলো করোনার লক্ষণ আরও কমিয়ে দেয়। হাসপাতালের থাকার সময়কালও কমিয়ে দিতে পারে এই ওষুধ।’
হালকা হতে মাঝারি কোভিড-১৯ উপসর্গে যারা ভুগছেন সেসব রোগীদের জন্য এই ওষুধ কার্যকর হতে পারে বলেও উল্লেখ করেছেন গবেষকরা।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।