ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ নিত্যপণ্যের দাম সামপ্রতিক সময়ে বেড়েছে আকাশ ছোঁয়া। যেভাবে জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়েছে, সেই তুলনায় আয় বাড়েনি। যে কারণে বিশেষ করে নিম্ন মধ্যবিত্তের জন্য দিনাতিপাত বড়ই কঠিন হয়ে দেখা দিয়েছে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার বয়স হয়েছে তিন বছরের উপরে। এই সময়ে অন্ততপক্ষে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৫৫%।
অথচ যেভাবে ব্যয় বেড়েছে- সেভাবে আয় বাড়েনি। যদিও বর্তমানে জীবন যাত্রার মান বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, আগে অনেকেই না খেয়ে দিনাতিপাত করতেন, এখন কাওকেই না খেয়ে থাকতে হয় না। এ বিষয়ে আমরা কথা বলেছে সাধারণ মানুষের সঙ্গে। একজন খুব গরিব অর্থাৎ ভিক্ষা বৃত্তিই যার পেশা এমন একজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ১০/১৫ বছর আগে এক বেলা খেয়ে না খেয়ে দিন যেত, কিন্তু এখন কোন দিন না খেয়ে থাকতে হয় না। তিনি জানালেন, এখন জিনিসপত্রের দাম বেশি এটা ঠিক কিন্তু তাওতো না খেয়ে থাকতে হয় না।
বর্তমানে জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলাপ করেও একই মত পাওয়া যায়। একজন রিক্সাওয়ালার সঙ্গে আলাপ হয়। তার বাড়ি গাইবান্ধায়। প্রায় ২০ বছর ধরে রাজধানী ঢাকাতে রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। শুধু যখন ধান ওঠে সে সময় এলাকায় চলে যান। এলাকায় গিয়ে ধান কাটেন। তখন সেখান থেকে যে ধান পান তাতে বছরের অন্তত ৬ মাস তাতে চলে যায়। বাকি সময় রিক্সা চালিয়ে যা পান তা পাঠিয়ে দেন বাড়িতে। তিনি জানালেন, জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি চলতে একটু কষ্ট হয়। তবে খারাপ নয়- ভালই তো আছি।
নিম্ন মধ্যবিত্তের অবস্থা এখন বড়ই কঠিন। যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে তাতে চলা বড়ই কঠিন হয়ে গেছে। এ বিষযে আলাপ হয় একজন গার্মেন্ট শ্রমিকের সঙ্গে। তিনি আগে অর্থাৎ ৫/৬ বছর আগে বেতন পেতেন ৪ হাজার টাকা। তা দিয়ে বাসা ভাড়া ও খাওয়া খরচ মোটামুটি হয়ে যেত। কিন্তু এখন ৬/৭ হাজার টাকা বেতন পেয়েও সংসার চালানো বড়ই কঠিন হয়ে গেছে বলে জানান। তিনি জানালেন, ২/৩ হাজার টাকা বেতন বাড়লেও জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক। বাসা ভাড়া বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত। যে কারণে ব্যয়ের থেকে আয়ের মধ্যে ফারাকটা এখন ব্যাপক। চলা বড়ই কঠিন হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আলাপ হয় পাবনার ঈশ্বরদী’র একজন পৌরসভার কর্মচারির সঙ্গে। তিনি জানালেন তার বেতন বেড়েছে মাত্র দুই হাজার টাকা। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে বেতন ডাবল হলে হয়তো তিনি মেকাব দিতে পারতেন।
আমরা বিভিন্নভাবে আলাপ-আলোচনা করে এটাই পেয়েছি আর তা হলো, মানুষের জীবন যাত্রার মান বেড়েছে এটা ঠিক। কিন্তু জিনিসপত্রের অস্বাভাবিকতায় মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। তবে একটি বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, আর তা হলো- জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে একেবারে নিম্ন শ্রেণী অর্থাৎ শ্রমিক শ্রেণীদের তেমন কোন সমস্যা হয়নি। এবং উচ্চ শ্রেণীর মানুষদেরও কোন সমস্যা হয়নি। সমস্যায় পড়েছে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত গোছের মানুষগুলো। তেল-গ্যাসের দাম বেড়েছে, যে কারণে গাড়ি ভাড়া বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। চাল, ডাল, তেল, পেয়াজ, রসুন, কাঁচা তরিতরকারি থেকে শুরু করে এমন কোন পণ্য সামগ্রী নাই যার দাম বাড়েনি। সোয়াবিন তেল ছিল ৩ বছর আগে ৫৫-৬০ টাকা কেজি এখন তার দাম ডবলেরও বেশি। চালের দাম বেশি একটা পার্থক্য না হলেও তখন ছিল ২৫-৩০ মধ্যেই এখন ৩৫-৪০। তবে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর চালের দাম মাঝে বেশ কমেছিল।
এই অবস্থা চলতে থাকলে দেশে এক নীরব হাহাকার লেগে যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারকে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। নিত্যপণ্যের দাম জনগণের নাগালের মধ্যে রাখতে সরকারকে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। ঘন ঘন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। সরকারি অপ্রয়োজনীয় ব্যয় সংকোচন করাও এখন জরুরি হয়ে পড়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
।