দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারের পর তাকে আদালতে হাজির করলে আদালত ৫ দিনের রিমাণ্ডে দিয়েছে।
শনিবার রাতে তাকে নিজের বাসার সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল রবিবার তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। আদিলুর রহমান খান বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার আমলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, তথ্য বিকৃতির অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে গতকাল আদালত তার রিমান্ড মঞ্জুরের পাশাপাশি মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে তার বাসা ও অফিস তল্লাশির আবেদনও মঞ্জুর করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অমিত কুমার দে এ আবেদন দুটি মঞ্জুর করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আশরাফুল ইসলাম।
আদালতে দাখিল করা পুলিশের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, গত ৫ মে রাতে হেফাজত কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করার সময় কোন প্রাণহানী হয়নি। ওইদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দিনব্যাপী হেফাজত কর্মীদের হামলা ও সংঘর্ষে মোট ১১ জন নিহত হয়। কিন্তু আসামি আদিলুর রহমান ‘অধিকার’ নামক একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পুলিশ বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে উক্ত ঘটনায় ৬১ জন নিহতের তালিকা তৈরি করে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় কাল্পনিক তথ্য প্রকাশ করেন। রিমান্ড আবেদনের পুলিশ দাবি করে ওইদিন রাতে হেফাজত কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করার সময় কোন প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেনি।
গতকাল আদালতে আদিলের পক্ষে রিমান্ডের বিরোধিতা করে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও ‘বিএনপিপন্থি’ আইনজীবীদের নেতা এ জে মোহাম্মদ আলী। নেদারল্যান্ডস ও সুইডেন দূতাবাসের দুই কর্মকর্তাও এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালত আদিলুর রহমানের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী জিজ্ঞাসাবাদ করতে বলেন। আদিলকে আদালতে নেয়ার আগে মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে অধিকারের সেক্রেটারির বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তুলে ধরেন ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, মতিঝিল অভিযান নিয়ে বিকৃত তথ্য ও ছবি প্রচারের মাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে আদিলুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অধিকারের ওই প্রতিবেদনের পর সরকারের পক্ষ থেকে অধিকারের কাছে বক্তব্যের সপক্ষে প্রমাণ চেয়ে গত মাসে চিঠি দেয়া হয়। তথ্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো ওই চিঠিতে কথিত নিহত ৬১ জনের পূর্ণাঙ্গ পরিচয়, নাম, ঠিকানা চেয়ে বলা হয়, ৫ মে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার কোথাও ১৬ জনের বেশি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া না গেলেও প্রতিবেদনে ৬১ জন নিহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এরপর অধিকার মন্ত্রণালয়ে ওই চিঠির জবাব পাঠিয়ে মতিঝিল অভিযান নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়। কিন্তু সরকারকে তারা কোন তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করেনি।
বিভিন্ন ব্যক্তি সংগঠনের নিন্দা
মানবাধিকার সংস্থা অধিকার-এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে গ্রেফতারের ঘটনায় বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তিনি আদিলুরের মুক্তির দাবি করেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ঘটনার নিন্দা জানিয়ে আদিলুরের মুক্তির দাবি করেন। এছাড়া বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন এবং মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানও এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, তিনি উদ্বিগ্ন। মানবাধিকারের কর্মীদের মানবাধিকার রক্ষা করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) অধিকারের সম্পাদককে গ্রেফতার করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন আদিলুরের গ্রেফতারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আদিলুর রহমান খানের গ্রেফতারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে তাকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
অধিকারের কার্যালয়ে তল্লাশি করে ল্যাপটপ ও সিপিইউ জব্দ
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের গুলশানের কার্যালয়ে গোয়েন্দা পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। এ সময় তারা তিনটি ল্যাপটপ ও দুটি সিপিইউ জব্দ করেছে। রোববার রাত পৌনে নয়টায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল তল্লাশি অভিযান শুরু করে।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল আলম তল্লাশির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আদালতের নির্দেশে আমরা মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর গুলশান অফিসে তল্লাশি চালিয়েছি।”
গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, “গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার ক্রাইম টিমের সহকারী কমিশনার ওবায়েদের নেতৃত্বে একটি দল গুলশানে অধিকারের কার্যালয়ে তল্লাশি চালায়।”
অধিকারের অফিস সহকারী রফিকুল ইসলাম জানান, “গুলশানের ১১৭ নম্বর সড়কের ৩৫ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলায় অধিকার’র কার্যালয়ে অভিযান চালায়। এ সময় তারা তিনটি ল্যাপটপ এবং দুইটি সিপিইউ নিয়ে যায়।” এ অভিযানে ডিবি পুলিশের ৬ সদস্য অংশ নেয় বলেও জানান তিনি।