দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী হত্যাকাণ্ডের বিচার দীর্ঘ আড়াই বছর পর আজ মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে।
ভারতের কোচবিহারে দেশটির সীমান্তরক্ষা বাহিনী-বিএসএফের উদ্যোগে গঠিত একটি বিশেষ আদালতে এই বিচার কার্যক্রম শুরু হবে। এদিকে ঘাতক বিএসএফ সদস্যদের ফাঁসি হবে-এই আশায় বুক বেঁধে শিগগিরই ভারতে যাচ্ছেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরু ও তার স্বজনরা।
জানা গেছে, মামলায় সাক্ষ্য দিতে এবং শুনানিতে অংশ নিতে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম, মামা আব্দুল হানিফ, কুড়িগ্রাম জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন, বিজিবির ৪৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল জিয়াউল হক খালেদ ভারতে যাচ্ছেন। আগামী ১৮ আগস্ট তাদের ভারতে যাবার কথা রয়েছে।
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে ভারত থেকে বাবার সাথে বাংলাদেশে আসার সময় বিএসএফের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হন কিশোরী ফেলানী। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তার লাশ কাঁটাতারে ঝুলে ছিল দীর্ঘ ৫ ঘন্টা। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে বিএসএফ দায়ী সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বাধ্য হয়। ফেলানীর পরিবারের সদস্যসহ দেশবাসী এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।
মামলায় সাক্ষ্য দিতে ভারত যাবার প্রাক্কালে দীর্ঘ আড়াই বছর পর মেয়ে হত্যার বিচার শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘লোকজন সবাই দেখছে; আমিও দেখছি-ওরা মেয়েডারে কিভাবে গুলি কইরা মারছে। যা ঘটনা হইছে, আমি সাক্ষী দেওয়ার জন্য যাব। যারা মেয়েডারে মারছে, তাদের যানি ফাঁসি হয়, আর আমি যানি সুষ্ঠু বিচার পাই।’
ফেলানীর হত্যাকারীদের কঠিন শাস্তি দাবি করে দু’দেশের সরকারকে তার পরিবারের দায়িত্ব নেয়ার দাবি জানিয়ে মা জাহানারা বেগম বলেন, ‘বাচ্চাটারে নিয়া খুব আশা করছিলাম। ওরে ভালভাবে বিয়া দিব। বিএসএফ তা করতে দেয় নাই। মেয়ের মরা মুখটাও দেখতে পাই নাই। এহন বিচার হইলে অনেক শান্তি পামু।’
ফেলানীর লাশ প্রথম বাংলাদেশে নিয়ে আসা মামা আব্দুল হানিফ বলেন, ‘ঘটনা শোনার পর সর্বপ্রথম আমি ছুটে যাই। মেয়েডারে কাঁটাতারে যেভাবে ঝুলতে দেখছি, চোখের সামনে এহনও ভাসে। আমি ভারতের আদালতে সব ঘটনা খুইল্যা কমু।’
অনলাইন সংবাদ সূত্র বলেছে, বাংলাদেশের হয়ে রাষ্ট্রপক্ষকে সহায়তার জন্য শুনানিতে অংশ নিবেন কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার ব্যাপারে জোরালো ভূমিকা রাখার সংকল্প নিয়ে তিনি বলেন, প্রায় ৪৩ বছর পর এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের বিচারে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হলে দু’ দেশের সীমান্তরক্ষীরা আর গুলির চিন্তা করবে না। দোষীদের শাস্তি হলে দু’ দেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় তা মাইলফলক হয়ে থাকবে।
এ্যাডভোকেট লিংকন আরো বলেন, ‘ফেলানীর হত্যার বিচারের ব্যাপারে ভারত দায় এড়াতে পারে না। কারণ ফেলানীর কাছে অস্ত্র ছিল না, মাদক ছিল না, বিএসএফের জীবনহানিরও কারণ ছিলো না। কাজেই বিএসএফ সদস্যরা মেয়েটিকে ধরে আইনে সোপর্দ করতে পারতো। তাকে হত্যা করাটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হলে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ভারতের কলংকমোচন হবে।’
দেশবাসীও এখন চেয়ে আছে জঘণ্যতম এই হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখার জন্য।