দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ নিহত পুলিশ দম্পতির একমাত্র পুত্র ঐহী রহমান এখন শুধুই বাবা-মাকে খুঁজে ফিরছে। নিজ বোনের কারণে আজ তাকে বাবা-মা হারিয়ে এতিম হতে হয়েছে।
বড়ই নিঃস্ব ও অসহায় হয়ে পড়েছে এই শিশু ঐহী। রাতে ঘুমাতে গিয়ে বাবা-মাকে খুঁজে পায় না ঐহী। ছোট্ট শিশু ঐহীর বয়স মাত্র ৮ বছরও পেরোয়নি। চোখেমুখে মায়াবী ছাপ। দেখলে আদর করবে না- এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। মিষ্টিমুখের ঐহী এখন পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় শিশুদের একজন। আগের মতো চঞ্চল ও হাসি নেই তার মুখে। কারণ ঐহীর একমাত্র বোন বাবা-মার হত্যাকাণ্ডে জড়িত ঐশী কারাগারে।
চঞ্চল প্রকৃতির ঐহী ছিল মা-বাবার বড় আদরের সন্তান। দুরন্ত শিশুটি ফ্ল্যাটের আশপাশের বাচ্চাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব, খেলাধুলায় মুগ্ধ থাকত। কিন্তু নিষ্ঠুর নিয়তি তার সবকিছু কেড়ে নিল। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ঘাতক বোন ঐশীর সঙ্গে বেরিয়ে যায় ঐহী। মা-বাবার শেষ আদরটুকুও পেল না ঐহী। মা-বাবার চলে যাওয়া আর ঘাতক বোনের নিষ্ঠুরতায় ঐহীর আকাশ চিরদিনের জন্য ঢেকে গেছে কালো মেঘে। সব হারিয়ে চাচার আশ্রয়ে এখন বড়ই অসহায় শিশুটি। শত মানুষের মধ্যে ঐহী তার মা-বাবাকে বার বার খোঁজে। হয়তো সে জানে না, আর কোনদিন ফিরে আসবে না বাবা মাহফুজুর রহমান, মা স্বপ্না রহমান। কিন্তু কে দেবে তাকে সেই শান্ত্বনা। এমন পরিস্থিতিতে নেই সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও। বাবা-মার অবর্তমানে চলার পথে আত্মীয় স্বজনরা তাকে সাহায্য করবে- এটা সত্য। ফুলের মতো নিষ্পাপ অবুঝ এ শিশুটি জানে না আসলে সে কী হারাল। বাবা-মার আদর-স্নেহ আর কোনদিন তার ভাগ্যে জুটবে না। ঐহীর বাকি জীবন নিয়েও চিন্তিত তার আত্মীয়-স্বজনরা। তারা বলেছেন, চঞ্চল ঐহী ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে। বোনের কার্যকলাপ ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর থেকে সে নির্বাক। মানুষের মুখের দিকে শুধুই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ঐহী। মুখে এতোটুকু কথা নড়ছে না।
ঘটনার পরদিন সকালে বোন ঐশীকে বাবা-মার কথা জিজ্ঞাস করলে সে জানায়, মা-বাবার সঙ্গে রাগ করে রাজশাহী চলে গেছে। আর বাবা মাকে আনতে গিয়েছেন। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে ঐহীকে নিয়ে বোন ঐশী খালার বাড়ি যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে রাতে তৃষ্ণা নামে এক বান্ধবীর বাসায় চলে যায়। সেখান থেকে সকালে ঐহীকে একটি রিকশায় করে বাসায় পাঠিয়ে দেয় ঐশী। ঐহীর মামা রায়হান জানান, মায়াবী শিশুটির মুখের দিকে তাকিয়ে অনেকের চোখেই পানি ঝরছে। আত্মীয়স্বজনসহ বিভিন্ন লোকজন তাকে জড়িয়ে ধরে আদর করছে। কিন্তু সারাক্ষণই যেন বাবা-মাকে খুঁজে ফিরছে ঐহী। সে সবার কাছে জানতে চাচ্ছে আসলে কী ঘটেছে। কিন্তু তার প্রশ্নের জবাব দিতে পারছে না কেওই। ঐহীর শূন্যতা পূরণের জন্য তার খালার কাছে তাকে রাখা হতে পারে বলে কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে। ঐহীর চাচা মশিউর রহমান রুবেল জানান, ঐহী তার আত্মীয়-স্বজনের কাছে রয়েছে এবং সে ভালো আছে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ আগস্ট সন্ধ্যায় রাজধানীর ২ নম্বর চামেলীবাগের বাসা থেকে ঐহীর বাবা এসবির পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও মা আয়েশা রহমান স্বপ্নার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আর নির্মম হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা তারই বড় বোন ঐশী।
পৃথিবীতে অনেক ধরনের নির্মমতা ঘটে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে এবারে যা ঘটলো তা শুধু দেশবাসী নয় সমগ্র বিশ্ববাসীকেই হতবাক করেছে। নিজ জন্মদাতা পিতা-মাতাকে হত্যা করে পুলিশ দম্পতির মেয়ে ঐশী যে জঘণ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তার রেশ কতদিন, কতমাস, কতবছর পৃথিবীর মানুষ বয়ে বেড়াবে তার কোন কূল-কিনারা নেই। ঐহীর মতো যেনো আর কেও এতো কম বয়সে বাবা-মা হারা না হন সেটাই এখন সবার প্রত্যাশা।