দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গর্ভবতী অবস্থায় হবু মা ও সন্তানের যত্নে প্রয়োজনীয় কিছু উপাদান প্রতিদিনের খাবারে থাকাটা জরুরি। কোন কোন ধরনের খাবারে সেইসব উপাদান থাকে, তা আজ জেনে নিন।
সাধারণ সন্তানধারণের পর থেকে জন্ম দেওয়া পর্যন্ত মহিলাদের শরীর বিভিন্ন সময় নানা রকম পরিবর্তনের মধ্যেদিয়ে যায়। তাই নিজের সঙ্গে ভ্রূণের দেখাশোনা করাটাও জরুরি। তাই এই সময় শুধু খাবারের পরিমাণই নয়, পুষ্টিগুণের উপরেও জোর দিতে বলেছেন চিকিৎসক, পুষ্টিবিদরা। প্রোটিন, ভিটামিন, বিভিন্ন খনিজ ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট রয়েছে এমন খাবার খেতে বলা হয়। পুষ্টিবিদ ও প্রভাবী লভনিত বাত্রা বলেছেন, “গর্ভস্থ ভ্রূণ ও হবু মা দু’জনের শারীরিক গঠন এবং উন্নতিতে বিভিন্ন উপাদানেরও প্রয়োজন রয়েছে। খাবারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পুষ্টিগুণ শরীরে না পৌঁছালে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু ওষুধও খেতে হয়।”
ফলিক অ্যাসিড
এই সময় ভ্রূণের মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকান্ডের গঠনের জন্য অত্যন্ত জরুরি একটি উপাদান হলো ফোলিক অ্যাসিড। তাই সন্তানধারণের একেবারে প্রথম পর্যায় থেকে এই চিকিৎসকরা ফলিক অ্যাসিডযুক্ত খাবার ও ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই বেশি করে পালং শাক, বিট, ব্রকোলি ও লেবুজাতীয় ফল খেতে গুরুত্ব দেন পুষ্টিবিদরা।
ক্যালশিয়াম
গর্ভবতী মহিলাদের হাড়ের জোর বাড়িয়ে তুলতে ও ভ্রূণের হাড় ও পেশির গঠনে সাহায্য করে ক্যালশিয়াম। তাছা়ড়াও ভ্রূণের হৃদ্স্পন্দন স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই ক্যলশিয়াম। দুধ, সবুজ শাক-সব্জি, কমলালেবু ও বাদামে যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে ক্যালশিয়াম। তাই নিয়মিতভাবে ডায়েটে রাখতে হবে এই সব খাবারগুলো।
আয়রণ
সন্তানধারণ থেকে ভ্রূণের বেড়ে ওঠার প্রতিটি পর্যায়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ হলো আয়রণ। গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে এই উপাদানের ঘাটতি থাকলে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তখন উন্নতও হয় না। তাছাড়াও, ভ্রূণের ওজন বৃদ্ধি না পাওয়ার কারণও হতে পারে হবু মায়ের শরীরে আয়রণের অভাব। বেদানা, পালং শাক, কাজুবাদাম ও কুমড়োর বীজ নিয়মিত খেলে শরীরে আয়রণের ঘাটতি থাকবে না।
ভিটামিন ডি
গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের প্রতিরোধ ব্যবস্থা মজবুত করতে ও শরীর থেকে ক্যালশিয়াম শোষণ করতে ভিটামিন ডি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডিম, মাশরুম ও দুধেও ভিটামিন ডি’র পরিমাণ থাকে। ওষুধের পাশাপাশি গর্ভবতী মহিলাদের ডায়েটে এই খাবারগুলো রাখাটা জরুরি।
প্রোটিন
গর্ভাবস্থায় ভ্রূণ থেকে পূর্ণ অবয়ব হয়ে ওঠার প্রতিটি পর্যায়ে প্রোটিনের প্রয়োজন রয়েছে। তাছাড়াও গর্ভবতী অবস্থায় মহিলাদের স্তন ও জরায়ুর টিস্যু আকারে বেড়ে উঠতে পারে এই উপাদানের কারণে। মাছ, মাংস, ডিম, ডাল ও দুগ্ধজাত যে কোনও খাবারেই পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org