দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ চিকিৎকরা সাধারণভাবে বলে থাকেন যে দাঁতের জোর কিংবা মাড়ির জোর আলগা হয়ে গেলে অথবা সেখানকার পেশিতে আঘাত লাগলে মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে। এই সমস্যার সমাধান কী? মাড়ির যত্নই বা নিবেন কীভাবে?

এই রোগটির পোশাকি নাম হলো ‘জিনজিভাইটিস’, সহজ ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়, মাড়ি থেকে রক্তপাত। অনেকেই এই সমস্যাতে ভোগেন। চিকিৎসকরা এই রোগকে ‘লাইফস্টাইল ডিজ়িজ়’-এর আওতায় নিয়ে এসেছেন সাম্প্রতিক সময়।
সামান্য খোঁচা লাগলে বা অকারণেই মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে অনেকের। তবে কেনো হয় এই রোগ- সেটি জানেন না অনেকেই। কেবল একটা আবছা ধারণা রয়েছে যে, দাঁতের জোর বা মাড়ির জোর আলগা হয়ে গেলে কিংবা সেখানকার পেশিতে আঘাত লাগলে এমনটি হতে পারে! তবে আপনি জানেন, আর কোন কোন কারণে রক্তপাত হতে পারে মাড়ি থেকে?
এই বিষয়ে চিকিৎসকেরা বলেছেন, প্লাক নামক এক ধরনের জীবাণুর প্রভাবে এই সমস্যাটি হতে পারে। মাড়ির টিস্যুগুলোর স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা নষ্ট করে থাকে ধূপমান। কাজেই ধূমপায়ীদের এই সমস্যা হয় বেশি। অন্তঃসত্ত্বা মেয়েরা অনেক সময় হরমোনের ওঠানামার কারণেও এই রোগের স্বীকার হন। ভিটামিন সি এবং পানির অভাব মাড়ির সমস্যা তৈরি করে থাকে। অনেকেই বংশগতভাবে এই রোগের শিকারও হন।
এই রোগটি আটকাবেন কীভাবে?
দাঁতের যত্ন নেওয়া
এই রোগ থেকে বাঁচতে হলে প্রথমেই দাঁতের যত্ন নেওয়াটা জরুরি। যেমন- মুখ ঠিক করে পরিষ্কার করতে হবে, মাড়ির চারপাশে নোংরা জমে রক্ত পড়ার সমস্যা সৃষ্টি হয় অনেক সময়। দিনে অন্তত দু’বার দাঁত মাজা, একবার ফ্লস করা ও যে কোনও খাবার খাওয়ার পর কুলকুচি করা আবশ্যক। না হলে ব্যাক্টেরিয়া জমে জমে মাড়িতে নানা রকম জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
হাইড্রোজেন পেরোক্সাই়ড
দাঁত দিয়ে এমনিভাবে রক্ত পড়লে যে কোনও হাইড্রোজেন পেরোক্সাইডের সলিউশন দিয়ে মুখ কুলি করতে হবে। কুলি করার পর অবশ্যই সেটা না গিলে- ফেলে দিতে হবে।
ধূমপান
দাঁত দিয়ে রক্ত পড়ার একটি বড় কারণই হলো নিকোটিন। বিশেষ করে যারা ধূমপান করেন তারা ধূমপান বন্ধ করে দেখুন কোনও রকম ফারাক হয় কি-না।
ডায়েটে ভিটামিন
যে সব ফলে ভিটামিন সি রয়েছে যেমন- গাজর, কমলালেবু, মোসাম্বির মতো ফল-সব্জি, সেগুলো বেশি করে খান। দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন সি অত্যন্ত প্রয়োজন। আবার রক্তজমাটের জন্য ভিটামিন কে খুবই জরুরি। তবে ভিটামিন কে’র ওষুধ খেলে দাঁত দিয়ে রক্ত পড়া কমে যেতে পারে। সবুজ শাকসব্জি পরিমাণে বেশি করে খেতে হবে।
লবণ পানি
লবণ পানি কুলি করা সবচেয়ে উপকারী টোটকা। বেসিনের পাশে একটি বোতলে লবণ পানি রেখে দিন। প্রত্যেক বার মুখ ধোয়ার পর এক বার করে কুলকুচি করে নিন। ৩-৪ দিনেই রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org