দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ব্যাপক ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে জামায়াতের ৪৮ ঘণ্টার হরতালের প্রথম দিন পার হয়েছে। প্রথম দিনে ৩ জন নিহত ও পুলিশ গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
রাজধানীসহ সারাদেশে হরতালের প্রথম দিনে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে গুলি, বোমা ও ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশসহ আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। পিকেটারদের হামলায় ফেনী ও নোয়াখালীতে ৩ জন মারা গেছেন। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় জামায়াত-শিবিরের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেন এক পুলিশ সদস্য। তার বুক দিয়ে গুলি ঢুকে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে গেছে।
‘জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন, গণহত্যা, গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে এবং জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লাসহ জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মুক্তি এবং কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে পুনর্বহালের দাবিতে’ টানা ৪৮ ঘণ্টার এ হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। আগামীকাল শুক্রবার ভোর ৬টায় এ হরতালের সময়সীমা শেষ হবে।
হরতালের কারণে রাজধানী ও চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম ছিল বন্ধ। অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা খোলা ছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকলেও বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে কোনো ক্লাস হয়নি। বিপণি বিতান ও দোকানপাট ছিল সম্পূর্ণ বন্ধ। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে রাজধানীর পল্টন ও তার আশপাশ এলাকায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এই সময় শিবির ক্যাডাররা ৩টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
গতকাল রাজধানীর সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী টার্মিনাল কোনো বাস ছেড়ে যায়নি এবং ঢাকায় আসেনি। ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল ছিল স্বাভাবিক। নগর পরিবহনের স্বল্পসংখ্যক যাত্রীবাহী বাস, মিনিবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে। আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হয়েছে আইন-শৃংখলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য। গণভবন, সচিবালয় ও হাইকোর্টসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর এলাকায় ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয় পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন ও এসপিবিএন সদস্যরা। একাধিক স্থানে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে অবস্থান করতে দেখা যায়। সহিংসতা ঠেকাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল ভ্রাম্যমাণ আদালত রাজধানীতে ২ জনের জেল দিয়েছে। দক্ষিণ বনশ্রী এলাকায় পিকেটিং করার সময় সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হাতেনাতে দুই জামায়াত কর্মীকে আটক করে পুলিশ। তারা হলেন শফিউল্লাহ (৪৫) ও কামাল হোসেন (৩৫)। খিলগাঁও থানা পুলিশ জানায়, তাদের গ্রেফতারের পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শামীম বানু শান্তি তাদের কারাদণ্ড দেন। শফিউল্লাহকে ১ বছরের কারাদণ্ড ও কামাল হোসেনকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
প্রথম দিন বুধবার হরতালের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা মিছিল করেছে। রাজধানীর ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজারে র্যাব ও পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে থেকে কিছুক্ষণ পরপরই হরতালবিরোধী মিছিল করতে দেখা যায়। মিছিলগুলোতে আওয়ামী লীগের সমর্থনে এবং যুদ্ধাপরাধী ও হরতালের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা গেছে। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর, মিরপুর ১২, মিরপুর ১, মিরপুর ১৪ এবং আগারগাঁও, শাহবাগ, বাংলামোটর, মালিবাগ ও মৌচাক এলাকায় হরতালবিরোধী মিছিল বের করা হয়।
সারাদেশে হরতাল: ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, ঝটিকা মিছিল, সড়ক অবরোধ ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে সারাদেশে হরতালের প্রথম দিন অতিবাহিত হয়েছে।
আজ দ্বিতীয় দিনের হরতাল মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হচ্ছে। সকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বড় কোন নাশকতার কোন খবর পাওয়া যায়নি। রাজধানীর মার্কেটগুলো বন্ধ রয়েছে। অফিস-আদালত খোলা। রাজধানীতে মিনিবাস, সিএনজিসহ প্রচুর রিক্সা চলতে দেখা গেছে। ট্রেন, লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে দূরপাল্লার কোন বাস ছাড়েনি।