দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এই রোগ আটকাতে পরিচ্ছন্নতার কোনোই বিকল্প নেই। তাছাড়াও কী কী নিয়ম মেনে চলা জরুরি সেটিই আজ জেনে নিন।
শিশুদের ছোটখাটো শরীরখারাপ লাগে মাঝে-মধ্যেই। যারমধ্যে অন্যতম হলো পেট খারাপ কিংবা ডায়রিয়া। বিশেষ করে গরমে এই ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে। তবে ডায়রিয়া অনেক ক্ষেত্রে দ্রুত সেরে যায় ও তেমন চিন্তারও বিষয় হয় না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা ভয়ের কারণও হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই জেনে নিন কেনো হয় ডায়রিয়া? তা ঠেকানোর উপায় কী?
ডায়রিয়া আসলে কী?
দিনে তিন কিংবা তার বেশি বার তরল মলত্যাগ করলে তাকে ডায়রিয়া বলে থাকেন চিকিৎসকরা। এর সঙ্গে থাকতে পারে পেটে ব্যথা ও বমির মতো উপসর্গও। তবে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, সদ্যোজাত শিশু যারা মায়ের দুধ খায়, তারা দিনে দুই বারের বেশি, কিছুটা তরল মলত্যাগ করতে পারে। সেইসঙ্গে, তাদের ক্ষেত্রে কখনও কখনও মলের রং কিছুটা সবুজও হতে পারে। তবে শিশু যদি স্বাভাবিকভাবে খেলাধুলো করে ও প্রস্রাবে অস্বাভাবিকতা না থাকে, তাহলে চিন্তার কোনও কারণই নেই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ডায়রিয়ার কারণসমূহ
বিভিন্ন বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রে বয়স অনুযায়ী ডায়রিয়ার কারণ পৃথকও হতে পারে বলে জানিয়েছেন শিশুরোগ চিকিৎসকরা। সাধারণত ভাইরাস ও ব্যাক্টিরিয়ার সংক্রমণের জেরে শিশুদের ডায়রিয়া হতে পারে। ভাইরাসের ক্ষেত্রে রোটাভাইরাস, অ্যাডিনোভাইরাস, নরওয়াক ও এন্টেরোভাইরাসের কথা বলেছেন চিকিৎসকরা। তবে বর্তমানে রোটাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেওয়া হয় শিশুদেরকে। যে ভ্যাকসিনগুলো শিশুদের অবশ্যই দিতে হবে বলে সরকারীভাবে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। ভ্যাকসিন নেওয়ার কারণে এখন শিশুদের মধ্যে রোটাভাইরাস ঘটিত ডায়রিয়ার প্রকোপও কমেছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
অনেক সময় ই কোলাই, সালমোনেলা, কলেরার ব্যাক্টিরিয়ার জন্যও শিশুদের ডায়রিয়া হতে পারে। সেইসঙ্গে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অপূর্ব ঘোষ জানিয়েছেন, কারও কারও ক্ষেত্রে জন্মগত কিছু কারণ যেমন- দুধ, গমজাতীয় খাবারে অ্যালার্জি কিংবা ইনটলারেন্স থেকেও হয়ে থাকে ডায়রিয়া। তিনি আরও জানিয়েছেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা, ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজ়িজ়, ক্ষুদ্রান্ত্রে সমস্যা, খাদ্য শোষণের সমস্যার মতো কিছু উপসর্গ থাকতে পারে এই রোগে।
লক্ষণ
বারং বার তরল মলত্যাগ ছাড়াও মলের সঙ্গে রক্ত পড়া, পেট ব্যথা, বমি হতে পারে ডায়রিয়া হলে। তবে ডায়রিয়ার সবচেয়ে গুরুতর লক্ষণ হলো পানিশূন্যতা কিংবা ডিহাইড্রেশন।
পানিশূন্যতা বোঝা যাবে কীভাবে
ডা. অপূর্ব ঘোষ জানিয়েছেন, “পানিশূন্যতার লক্ষণ হলো- ঠিক মতো প্রস্রাব না হওয়া, শিশুর মধ্যে আলস্য ভাব হওয়া, চোখের চারপাশে বসে যাওয়া, জিভ-ঠোঁট-গালের ভিতরের চামড়া শুকিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা। তাছাড়াও, পানিশূন্যতায় পেটের চামড়া দু’আঙুলের মধ্যে টেনে চেপে ছেড়ে দিলে স্বাভাবিক অবস্থায় যেতে সময় লাগে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী। দেড় বছরের কমবয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে ব্রহ্মতালুর নরম অংশ কিছুটা ভিতরের দিকেও ঢুকে যেতে পারে। পানিশূন্যতার মাত্রা বেশি হলে পানি খেতেও অনীহা দেখা যায়। এমনকি, শুকিয়ে যেতে পারে চোখের পানিও।”
চিকিৎসা
ডায়রিয়া হলে প্রাথমিক ভাবে, চিকিৎসায় ওআরএস (খাবার স্যালাইন বা ওর স্যালাইন) ছাড়া অন্য কিছুর প্রয়োজন পড়ে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। যে পরিমাণ পানি শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, তার ঘাটতি পূরণের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) অনুমোদিত ফর্মুলা মেনে তৈরি ওআরএস দিতে করতে হবে। তা না পাওয়া গেলে এক গ্লাস পানিতে এক চামচ চিনি এবং এক চিমটে লবণ মিশিয়ে সেই মিশ্রণও রোগীকে দেওয়া যেতে পারে। তবে মলের সঙ্গে রক্ত বের হলে, বেশি জ্বর থাকলে, প্রস্রাব নাহলে, বাচ্চা ঝিমিয়ে পড়লে ও বারবার বমির জন্য ওআরএস না দেওয়া গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে বা হাসপাতালে ভর্তি করার কথা চিন্তা করতে হবে।
সেইসঙ্গে নজর দিতে হবে নিরাপদ পানীয় জলের দিকেও নজর দিতে হবে। পানির শুদ্ধতা নিয়ে সন্দেহ থাকলে পানি ফুটিয়ে ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাঢহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org