দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেকই সুজি খেতে খুবই ভালোবাসেন। তাই তারা প্রতিদিন সুজির পায়েস, হালুয়া কিংবা উপমা বানিয়ে খান। এই খাবারের প্রতি সাধারণ মানুষের এতো ভালোবাসা দেখেই চমকে ওঠেন একাধিক সোশ্যাল মিডিয়ার বিশেষজ্ঞ। তাদের কথা হলো, সুজির মতো একটি খাবার প্রতিদিন খাওয়া উচিত নয়। তাতে শরীরের ক্ষতিও হতে পারে।
তবে কোনও সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞের কথায় আমরা চোখ বন্ধ করে কিন্তু বিশ্বাস করতে পারি না। তাই সুজি খাওয়া ভালো নাকি খারাপ, এই প্রশ্ন নিয়ে আমরা হাজির হয়েছিলাম কলকাতা শহরের বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ মীনাক্ষী মজুমদারের কাছে। তিনি বিষয়টা সম্পর্কে বিশদে জানিয়েছেন।
সুজি খাওয়া উপকারী নাকি ক্ষতিকর?
এই প্রশ্নের উত্তরে মীনাক্ষী মজুমদার বলেছেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই যে, সুজি অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। এতে রয়েছে থিয়ামিন, ফোলেট, রাইবোফ্ল্যাভিন, আয়রণ, ম্যাগনেশিয়াম ও কিছুটা প্রোটিন। তাই সুজি খেলে সুস্থ থাকবে শরীর। একাধিক ভিটামিন এবং খনিজের ঘাটতি মিটিয়ে ফেলা যাবে। সেইসঙ্গে এই খাবার খেলে হার্ট ভালো থাকে। কমে আসে কোলেস্টেরল। তাই কেও চাইলে নিয়মিত এই খাবারটি খেতে পারেন। তাতেও উপকার পাবেন।’
সুগারে সমস্যা
তবে সকলের খেয়াল রাখা দরকার, সুজির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কিছুটা বেশি। তাই এই খাবার প্রতিদিন খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের সমস্যাও হতে পারে। তাদের রক্তে গ্লুকোজের লেভেল কিন্তু বেড়ে যেতে পারে। বিশেষত: চিনি মিশিয়ে সুজির পদ বানিয়ে নিলে ক্ষতি হবে আরও অনেক বেশি। তাই এই রোগে ভুক্তভোগীরা সুজির হতে অবশ্যই দূরে থাকার চেষ্টা করুন। তবে যাদের ডায়াবেটিস পুরোপুরি কন্ট্রোলে রয়েছে, তারা মাসে এক-আধবার এই খাবারটি খেতেই পারেন। তাতে হয়তো খুব একটা ক্ষতি হবে না।
কোলেস্টেরল নিয়ে সাবধান
যাদের হাই কোলেস্টেরল রয়েছে তারা সুজি খেতে পারেন। তাতে কোনও রকম মানা নেই। তবে মুশকিল হলো, এই খাবারকে সুস্বাদু করার জন্য অনেকেই এতে প্রচুর পরিমাণে চিনি, ফ্যাট সমৃদ্ধ দুধ ও ঘি মিশিয়ে থাকেন। এই ভুলটা করেন বলেই কোলেস্টেরল লেভেল বাড়ার আশঙ্কাও প্রবল থাকে। যেজন্য পিছু ধাওয়া করতে পারে একাধিক জটিল অসুখ। তাই চেষ্টা করুন চিনি, ফ্যাট সমৃদ্ধ দুধ ও ঘি এড়িয়ে সুজি খাওয়ার জন্য।
পেটের সমস্যা এড়িয়ে যেতে
আমাদের মধ্যে অনেকের গ্লুটেন অ্যালার্জি থাকে। এই সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের গ্লুটেন রয়েছে, এমন কোনও খাবার খেলেই গ্যাস, অ্যাসিডিটি, বমি ও পেট খারাপের মতো সমস্যায় পড়তে পারেন। তাই এদেরকে সুজি খেতেও বারণ করা হয়। এমনকী এই সমস্যা নিয়ে গমের তৈরি কোনও খাবার খাওয়াও উচিত হবে না।
কী পরিমাণ সুজি খাবেন?
যে কোনও সুস্থ মানুষই দিনে ৫০ গ্রামের মতো সুজি অনায়াসেই খেতে পারেন। এইক্ষেত্রে সুজির পায়েস, হালুয়া করে খাওয়া যেতে পারে। তবে বেশি উপকার পেতে চাইলে সবজি সহযোগে সুজি বানিয়ে খেতে পারেন। এতে ভিটামিন, খনিজ বেশি পরিমাণে পাবেন। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org