দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ জীবনে বড় হতে হলে ভালো মানুষ হওয়াটা বেশি প্রয়োজন। আর সেই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে শৈশব থেকে। বলা বাহুল্য যে, সেই প্রস্তুতির প্রধান কান্ডারিই হলেন মা-বাবা।

ছোট থেকেই মা-বাবা সন্তানকে যেভাবে গড়ে তুলবেন, সেই রকমই মানুষ হবে সন্তান। প্রত্যেক মা-বাবাই চান, তাদের সন্তান যেনো মানুষের মতো মানুষ হয়।
সন্তানকে ছোট থেকে নানা ইতিবাচক আচরণ শেখানোর যথাসাধ্য চেষ্টাও করেন তারা। বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন যে, এইসব শিক্ষারও রয়েছে প্রাথমিক কিছু পর্যায়। যেগুলো শিশুর ৭ বছর বয়স হওয়ার পূর্বেই শিখিয়ে দেওয়া উচিত। এতে নতুন মানুষদের সঙ্গে মিশতে কিংবা সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করতেও সুবিধে হবে।
৭ বছর বয়স হওয়ার পূর্বেই কিছু মৌলিক আচরণ শিশুদের শেখাতে হবে
‘দয়া করে’ (Please) ও ‘ধন্যবাদ’ (Thank you)-এর জাদু। ছোটবেলা থেকেই কথোপকথনের মধ্যে তাদের প্লিজ় এবং থ্যাঙ্ক ইউ বলার অভ্যাস শুরু করাতে হবে। এটি অত্যন্ত প্রাথমিক ও গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা। সমাজের যে কোনও স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময় যেনো তারা এই দুটি শব্দের ব্যবহার করে, সেই দিকে নজর রাখাটা দরকার। মা-বাবাকে মুখে এই দু’টি শব্দের ঘনঘন ব্যবহার করতে শুনলে পরিবারের খুদে সদস্যটি তা দ্রুত রপ্ত করে ফেলবে। ছোট হতেই শিশুদের ভদ্র আচরণ তাদের জনপ্রিয়তা বাড়াতেও সাহায্য করে।
ভালো শ্রোতা হওয়ার দক্ষতা শেখাতে হবে
অনেক সময় কথোপকথনের মাঝখানে হঠাৎ করে কথা বলে ওঠা সামাজিকভাবে অভদ্রতার পরিচয়। ছোটদের মধ্যে এই ধরনের প্রবণতা থাকে। তাই তাকে শুনতে শেখান। এই ক্ষেত্রেও বাড়ির গুরুজনদের ভূমিকা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি বড়রা সকলের কথা মন দিয়ে শোনেন, কথার মাঝখানে কথা বলে না ওঠেন, তাহলে ছোটরাও তাদের দেখে এই আচরণ শিখে নেবে। তারা তখন অন্যের কথাকে মূল্য দিতে শিখবে।
শ্রদ্ধা সহকারে কথা বলুন
ছোট হতে ভদ্র আচরণ শেখা অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। অপ্রয়োজনে যখন তখন চিৎকার চেঁচামেচি করা, কাওকে আঘাত দিয়ে কথা বলা, খারাপ ভাষার ব্যবহার ছোটরা বড়দের দেখে শেখে। তাই নিজেদেরকেই আগে সংশোধন করুন। মা-বাবার নম্র এবং ভদ্র আচরণ, বিরক্তি সত্ত্বেও সম্মান দিয়ে কথা বলা, কথার মাঝে ‘মাফ করবেন’ (Excuse me) কিংবা ‘আমি দুঃখিত’ (I’m sorry) র মতো বাক্যাংশের ব্যবহারের অভ্যাস শিশুর ব্যক্তিত্বে ইতিবাচক প্রভাবও ফেলতে পারে।
পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস গড়ে তোলা
ছোট থেকেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। প্রতিদিন গোসল করা, চুল আঁচড়ানো, নিয়মিত দাঁত মাজা, ব্যবহারের পর বাথরুম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, খেলনাগুলো গুছিয়ে রাখা, সিঙ্কে নিজের খাবার প্লেট রেখে আসা, স্কুল ব্যাগ গোছানো, বাইরে থেকে ঘরে এসে হাত-পা সাবান দিয়ে ধোয়া, খাবার পূর্বে হাত ধোওয়া, দাঁত দিয়ে নখ না কাটার মতো অভ্যাসগুলোও শৈশব হতেই শেখানো উচিত।
ব্যক্তিগত স্থান ও সীমানাকে সম্মান করা
প্রত্যেকটি মানুষের একটা ব্যক্তিগত সীমানা রয়েছে। শিশুদের ছোট থেকেই সেটি বুঝিয়ে দেওয়া দরকার। অন্যের জিনিসে হাত না দেওয়া, কারও ব্যাপারে অযথা আগ্রহ না দেখানো, ইত্যাদি বিষয়গুলো তাকে গল্পের ছলেই জানিয়ে দিতে হবে।
সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার বিষয়টি
বর্তমানে বেশিরভাগ মা-বাবারই একটি করে সন্তান থাকে। তাই সকলের সঙ্গে ভাগাভাগি সম্পর্কে তাদের কোনও ধারণা থাকে না। এই ধারণা তৈরি করার দায়িত্ব কিন্তু বড়দের। খেলনা, খাবার ইত্যাদি বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সদস্যের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া, অপরকে সাহায্য করার শিক্ষা ছোট থেকেই দিতে শুরু করতে হবে। তাহলে আপনার সন্তান কখনও স্বার্থপর হওয়ার মতো মনোভাব পোষণ করবে না। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org