ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ড নিয়ে শুধুই জল্পনা-কল্পনা চলছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই জোড়া খুনের ঘটনার কোন সমাধানে আসতে পারেনি পুলিশ। এমনকি কোন আসামীকেও আজ পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি।
তবে শেষ পর্যন্ত র্যাব এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার নেওয়ারপর আবার খবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ভিসেরা পরীক্ষার জন্য পাঠায়। এই ভিসেরা পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া যাবে ১৫ মে।
জানা যায়, মৃতদেহ থেকে সংগৃহীত আলামত বর্তমানে মহাখালী রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পরীক্ষা চলছে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের আগে সাগর-রুনীকে নেশাজাতীয় কিছু খাওয়ানো হয়েছিল কি-না তা বেরিয়ে আসবে বলে আশা করছে মামলার বর্তমান তদন্ত সংস্থা র্যাব। তবে ফরেনসিক বিশেজ্ঞরা মনে করছেন, হত্যাকাণ্ডের এত দিন পর লাশ অর্ধগলিত অবস্থায় কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে, তাতে ভিসেরা পরীক্ষায় প্রকৃত তথ্য না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল জানান, অন্য পাঁচটি ঘটনার মতো সাগর-রুনীর ভিসেরা পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে মাসের পর মাস লাগবে না। যেহেতু এটি একটি চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের ঘটনা, তাই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সিআইডি এই ভিসেরা পরীক্ষা করছে। তিনি বলেন, সাগর-রুনীর মৃতদেহ থেকে সংগৃহীত আলামত ২৯ এপ্রিল সিআইডির নিয়ন্ত্রণাধীন মহাখালী রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছে তদন্ত কর্মকর্তারা। সেখানে এরই মধ্যে ভিসেরা পরীক্ষার কাজ চলছে। ১৫ মে ভিসেরা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া যাবে বলে জানানো হয়েছে।
কমান্ডার সোহায়েল সাংবাদিকদের বলেন, ভিসেরা পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে খুনের আগে সাগর কিংবা রুনীকে অথবা উভয়কে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়েছিল কি-না খুনিরা। যদি তাই হয়, তাহলে স্পষ্ট হয়ে যাবে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ছিল। এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি আরও জানান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিনিয়র এএসপি জাফর উল্লাহ বিভিন্ন কৌশলে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে তদন্ত করে যাচ্ছেন। আগেকার তদন্ত সংস্থা ডিবির তদন্তের কাগজপত্রগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখছেন। তাছাড়া চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদারকি কর্মকর্তা র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান, ইনভেস্টিগেশন শাখার পরিচালক অতিরিক্ত ডিআইজি রওশন আরা বেগম, প্রশিক্ষণ শাখার পরিচালক অতিরিক্ত ডিআইজি ফজলুর রহমান প্রতিনিয়ত মামলার তদন্ত কার্যক্রম তদারকি করছেন। একই সঙ্গে তারা তদন্ত কর্মকর্তাকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।
উল্লেখ্য যে, আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে ২৬ এপ্রিল ভিসেরা পরীক্ষা করতে হত্যাকাণ্ডের ৭৫ দিন পর আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনীর লাশ আজিমপুর কবরস্থান থেকে উত্তোলন করে র্যাব। ঢাকা মেডিকেলে পুনরায় ময়নাতদন্তে মৃতদেহ দুটি থেকে চুল, দাঁত, পাকস্থলীর কিছু অংশ, কিডনি ও লিভারের কিছু অংশ ভিসেরা নমুনা হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়। ওই দিন ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. কাজী গোলাম মোখলেছুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, মৃতদেহ দুটির শরীর অনেকটা পচে গেছে। অর্গানগুলো ঠিক মতো বোঝা যাচ্ছিল না। সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, র্যাব যে বিষয়টি জানার জন্য ভিসেরা টেস্ট করছে, তা এতদিন পর থাকার কথা নয়। কারণ নেশাজাতীয় দ্রব্য সাধারণত তরল পদার্থ হওয়ায় বেশি দিন তা পাকস্থলীতে থাকার কথা নয়।
উল্লেখ্য, আলোচিত এ মামলার তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ দীর্ঘদিন পরে তাদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করলে উচ্চ আদালত ১৮ এপ্রিল র্যাবকে এ মামলার তদন্ত করার নির্দেশ দেন। প্রসঙ্গত চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজেদের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরোয়ার ও তার স্ত্রী এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনী।
এদিকে এই মামলার ভার র্যাব নতুন নেওয়াতে সাগর-রুনীর পরিবার আবার নতুন করে বিচার পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। তারা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আমরা আমাদের নিকটজনকে হারিয়েছি, হয়তো তাদের আর কোনদিন ফিরে পাবো না। কিন্তু যারা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে তাদের বিচার হলে আমরা অন্তত শান্তি পাবো।