দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মূলত মানুষের সৌন্দর্যের প্রধান আকর্ষণ হলো মুখের ত্বক। সুস্থ, উজ্জ্বল ও মসৃণ ত্বক কেবল ব্যক্তিত্বকে বাড়িয়ে তোলে না, বরং আত্মবিশ্বাসও জাগায়।

তবে বর্তমান যুগে দূষণ, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ ও অনিয়মিত জীবনযাপনের কারণে ত্বক খুব সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। তাই মুখের ত্বকের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। বিশেষত সঠিক নিয়ম মেনে চললে ঘরে বসেই ত্বককে সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর রাখা সম্ভব। নিচে মুখের ত্বকের যত্নে করণীয় বিষয়গুলো আলোচনা করা হলো।
নিয়মিত পরিষ্কার রাখা। প্রতিদিন বাইরে থেকে এসেই মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। ধুলো, ময়লা ও ঘামের কারণে ত্বকের রোমকূপ বন্ধ হয়ে যায়, ফলে ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস ও নানা সমস্যা দেখা দেয়। ত্বকের ধরন অনুযায়ী মাইল্ড ফেসওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে। সকালে ও রাতে অন্তত দু’বার মুখ ধোয়ার অভ্যাস করা উচিত।
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা প্রয়োজন। শুষ্ক হোক বা তৈলাক্ত, সব ধরনের ত্বকের জন্যই ময়েশ্চারাইজার জরুরি। এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং শুষ্কতা রোধ করে। শীতকালে ত্বক বেশি শুষ্ক হয়, তাই তখন বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার।
সূর্যের আলো থেকে ত্বক সুরক্ষা দিতে হবে। আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করে, দাগ, বলিরেখা ও বয়সের ছাপ বাড়ায়। তাই বাইরে বের হলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। প্রতিদিন ২০-৩০ এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন মুখে লাগালে ত্বক অনেকাংশে সুরক্ষিত থাকে।
সুষম খাদ্য গ্রহণ ত্বকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন এ, সি ও ই ত্বককে উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম, মাছ ও পর্যাপ্ত পানি ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখে। অতিরিক্ত তেল-ঝাল, ভাজা-পোড়া ও ফাস্টফুড এড়িয়ে চললে ব্রণ ও ত্বকের অন্যান্য সমস্যা কমে যায়।
পর্যাপ্ত ঘুম ত্বকের সৌন্দর্যের জন্য অপরিহার্য। রাতে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম না হলে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে এবং ত্বক নিস্তেজ হয়ে যায়। মানসিক চাপও ত্বকের ক্ষতি করে। তাই নিয়মিত ঘুম ও মানসিক প্রশান্তি ত্বকের যত্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ঘরোয়া কিছু যত্নও কার্যকর হতে পারে। যেমন—টক দই, মধু, লেবুর রস বা শসার পেস্ট মুখে লাগালে প্রাকৃতিকভাবে ত্বক উজ্জ্বল হয় এবং সতেজ থাকে। এসব উপাদান ত্বককে পুষ্টি জোগায় ও মসৃণ করে। তবে যাদের অ্যালার্জি আছে, তারা এসব ব্যবহারের আগে সতর্ক হতে হবে।
নিয়মিত এক্সফোলিয়েশন বা স্ক্রাবিং করা দরকার। সপ্তাহে অন্তত একবার স্ক্রাব করলে মৃত কোষ দূর হয় এবং ত্বক নতুনভাবে শ্বাস নিতে পারে। এতে ত্বক সতেজ ও উজ্জ্বল দেখায়।
মুখের ত্বকের যত্ন কোনো একদিনের কাজ নয়, এটি একটি নিয়মিত অভ্যাস। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক প্রশান্তি ও সঠিক প্রসাধন ব্যবহার করলে খুব সহজেই ত্বককে সুন্দর রাখা যায়। তাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রাখার পাশাপাশি নিয়মিত ত্বকের যত্ন নেওয়াই মুখের উজ্জ্বলতা ও সৌন্দর্য ধরে রাখাই হলো মূল চাবিকাঠি।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org