দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আলু আমাদের দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সহজলভ্য একটি সবজি। ভাতের সাথে ভাজি, ভর্তা, তরকারি কিংবা ফাস্টফুড- সব জায়গাতেই আলুর ব্যবহার চোখে পড়ে।

আলুতে রয়েছে শর্করা, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ফাইবারসহ কিছু উপকারী উপাদান। তবে প্রশ্ন হচ্ছে- আলু বেশি খেলে কি ক্যালোরির সমস্যা দেখা দেয়?
আলুর প্রধান উপাদান হলো শর্করা (কার্বোহাইড্রেট)। প্রতি ১০০ গ্রাম সেদ্ধ আলুতে প্রায় ৮০-৮৫ ক্যালোরি থাকে। তুলনামূলকভাবে ভাত কিংবা রুটির ক্যালোরির কাছাকাছি হলেও আলুতে প্রোটিন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান তুলনামূলক কম। তাই আলু মূলত শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। কিন্তু অতিরিক্ত খেলে ক্যালোরির ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
অতিরিক্ত আলু খাওয়ার কারণে ক্যালোরির সমস্যা কয়েকভাবে দেখা দেয়:
ওজন বৃদ্ধি
আলুতে থাকা শর্করা দেহে দ্রুত গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়। অতিরিক্ত আলু খেলে অতিরিক্ত গ্লুকোজ শরীরে চর্বি আকারে জমা হয়, যা ওজন বাড়ায়। বিশেষ করে যারা ভাজা আলু (চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই) নিয়মিত খান, তারা ক্যালোরি ও চর্বি দুটোই অতিরিক্ত গ্রহণ করেন।
রক্তে শর্করার ওঠানামা
আলুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) তুলনামূলক বেশি। এর মানে হলো আলু দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। নিয়মিত বেশি আলু খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রেও রক্তে শর্করার ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
ফাইবারের অভাবজনিত সমস্যা
আলুতে কিছু ফাইবার থাকলেও এটি পর্যাপ্ত নয়। বেশি আলু খাওয়ার ফলে যদি অন্যান্য শাকসবজি ও ডাল জাতীয় খাবার কম খাওয়া হয়, তবে ফাইবারের ঘাটতি তৈরি হতে পারে, যা হজম সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ায়।
ফাস্টফুডে আলুর ব্যবহার
আজকের প্রজন্মের কাছে আলু মানেই প্রায়শই চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বা বার্গারের অংশ। এসব খাবার তেলে ভাজা হয় এবং এতে আলুর সঙ্গে চর্বি ও লবণের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে ক্যালোরি দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হয়ে শরীরে প্রবেশ করে, যা দীর্ঘমেয়াদে স্থূলতা ও হৃদরোগের কারণ হতে পারে।
তবে এ কথাও সত্য যে, পরিমিত পরিমাণে আলু খাওয়া স্বাস্থ্যকর। সেদ্ধ কিংবা ভাপানো আলু শক্তি যোগায়, ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম সরবরাহ করে এবং শরীরকে পরিপূর্ণ রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে শারীরিক শ্রমে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য আলু তাৎক্ষণিক শক্তির ভালো উৎস। সমস্যা হয় তখনই, যখন আলু অতিরিক্ত খাওয়া হয় বা ভাজার মাধ্যমে ক্যালোরি বাড়ানো হয়।
আলু একেবারেই ক্ষতিকর নয়; বরং এটি একটি সাশ্রয়ী এবং শক্তিদায়ক খাবার। তবে আলু বেশি খেলে ক্যালোরির সমস্যা দেখা দেয়, যা স্থূলতা, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই আলু খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমিতি মেনে চলা জরুরি। বিশেষ করে ভাজা আলু এড়িয়ে সেদ্ধ কিংবা ভাপানো আলু খেলে উপকার বেশি, ক্ষতিও হবে কম।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org