এম. এইচ. সোহেল ॥ মানবিকতা হলো মানুষের অন্তর্নিহিত গুণাবলির প্রকাশ, যা দয়া, সহমর্মিতা, সাহায্য এবং ন্যায়পরায়ণতার মাধ্যমে সমাজে প্রতিফলিত হয়।

সমাজের উন্নতি এবং স্থিতিশীলতার জন্য মানবিকতার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়া, প্রযুক্তিনির্ভর জীবনযাপন, ব্যক্তিস্বার্থের বিস্তার এবং সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশেও মানবিকতা ধীরে ধীরে সংকুচিত হচ্ছে কি না- তা আজ গবেষক ও চিন্তাশীল মানুষের বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মানবিকতা হারানোর প্রমাণ
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংবাদপত্র, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মানবিকতা কিছুটা হলেও ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়ছে।
সামাজিক অপরাধ ও সহিংসতা
ছোটখাটো বিষয়ে সংঘর্ষ, নারী ও শিশু নির্যাতন, গণপিটুনি ইত্যাদি ঘটনা বেড়ে যাওয়া মানবিকতার ঘাটতির স্পষ্ট প্রমাণ।
অসহায় মানুষের প্রতি উদাসীনতা
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে না নেওয়া, রাস্তার ভিক্ষুক কিংবা দুস্থ মানুষের প্রতি অনীহা, বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে না দাঁড়ানো মানবিক সংকটকে স্পষ্ট করে।
ডিজিটাল যুগের প্রভাব
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব, বিদ্বেষমূলক মন্তব্য, কিংবা কারো দুর্দশাকে বিনোদন হিসেবে ব্যবহার করা- এগুলো মানবিকতার ক্ষয় নির্দেশ করে।
মানবিকতা দূরে সরে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি মূল কারণ রয়েছে:
অর্থনৈতিক বৈষম্য
ধনী-গরিবের বিভাজন সমাজে অসন্তোষ তৈরি করছে, যা সহানুভূতি ও সহযোগিতার মানসিকতাকে কমিয়ে দেয়।
শিক্ষায় নৈতিকতার অভাব
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় চাকরিমুখী জ্ঞান বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে, কিন্তু মানবিক মূল্যবোধ ও চারিত্রিক গুণাবলি যথাযথভাবে চর্চা হচ্ছে না।
প্রযুক্তিনির্ভরতা
মানুষ বাস্তবিক সম্পর্কের বদলে ভার্চুয়াল জগতে বেশি ডুবে যাচ্ছে, ফলে সামাজিক বন্ধন দুর্বল হচ্ছে। ক্রমেই তারা প্রযুক্তিনির্ভরতার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।
সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা
সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ছে দিনকে দিন। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ন্যায়বিচারের ঘাটতি মানুষের মধ্যে হতাশা ও আত্মকেন্দ্রিকতা বাড়াচ্ছে।
এখনো মানবিকতার অস্তিত্ব
তবে মানবিকতা পুরোপুরি হারিয়ে যাচ্ছে- এমনটা বলা যাবে না। বাংলাদেশে অনেক উদাহরণ রয়েছে যেখানে মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখা যায়।
# প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও তরুণদের এগিয়ে আসা।
# মহামারি করোনাকালে অসংখ্য মানুষ স্বেচ্ছায় খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান।
# গ্রামাঞ্চলে এখনও প্রতিবেশীর সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার ঐতিহ্য।
সমাধানের পথ কী?
মানবিকতা টিকিয়ে রাখতে হলে কয়েকটি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি:
নৈতিক শিক্ষার প্রসার
স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পাঠ্যক্রমে মানবিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি
গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা উচিত।
আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ
অপরাধ দমনে কঠোর ব্যবস্থা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা মানবিকতা পুনঃস্থাপনে সহায়ক হবে।
স্বেচ্ছাসেবামূলক উদ্যোগ
তরুণ প্রজন্মকে স্বেচ্ছাসেবায় উৎসাহিত করতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, সামাজিক পরিবর্তনের কারণে মানবিকতা কিছুটা হলেও পিছিয়ে পড়ছে, তবে এখনও পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায়নি। বরং সচেতন প্রচেষ্টা, নৈতিক শিক্ষার প্রসার ও সামাজিক বন্ধন জোরদারের মাধ্যমে মানবিকতাকে পুনর্জাগরিত করা সম্ভব। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মানবিকতা রক্ষার দায়িত্ব কেবল সরকারের নয়, বরং প্রতিটি নাগরিকেরও সমানভাবে। সমাজে মানবিকতার আলো ছড়িয়ে দিলে কেবল ব্যক্তিই নয়, গোটা জাতিই লাভবান হবেন।
# লেখক: সম্পাদক- দি ঢাকা টাইমস্ এবং সম্পাদক ও প্রকাশক- মাসিক উন্নয়ন অর্থনীতি।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org