দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে রাসায়নিকের গুদাম ও পোশাক কারখানায় আগুনের ঘটনায় অন্তত ১৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও ১৩ জন। এই দুর্ঘটনা আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে দেশের শিল্প ও আবাসিক এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার মারাত্মক ঘাটতির বিষয়টি।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অনেকে, যাদের অনেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আগুন লাগার পর স্থানীয় বাসিন্দারা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে চারদিকে ছুটোছুটি পড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে রাসায়নিকের কারণে পুরোপুরিভাবে আগুন নিভতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, গুদামটিতে বিভিন্ন দাহ্য রাসায়নিক, থিনার, পেইন্ট ও প্লাস্টিকজাত দ্রব্য মজুদ ছিল। এসব দাহ্য পদার্থের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং মুহূর্তেই আশেপাশের ভবনগুলো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। অনেকেই বের হতে না পেরে ভেতরেই দগ্ধ হয়ে মারা যান। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম না থাকায় ও ভেতরে বের হওয়ার সঠিক রাস্তা না থাকায় হতাহতের সংখ্যা বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশে এ ধরনের দুর্ঘটনা নতুন নয়। এর আগে চকবাজার, নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গীসহ নানা জায়গায় রাসায়নিক কারখানা বা গুদামে আগুন লেগে শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। প্রতিবারই সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুদিন পরই সবকিছু ভুলে যাওয়া হয়, পুনরায় ঘটে আরেকটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। এই চক্রই যেন অনন্তকাল ধরে চলছে।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল সমস্যা হলো অব্যবস্থাপনা, নজরদারির অভাব ও আইনের দুর্বল প্রয়োগ। অনেক ব্যবসায়ী আবাসিক ভবনের নিচে বা ভেতরে অবৈধভাবে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণ করে থাকেন, যা বিপজ্জনক। স্থানীয় প্রশাসন অনেক সময় এসব অবৈধ গুদামের অস্তিত্ব জানলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেয় না। যে কারণে অল্প সময়ের মধ্যে সামান্য অসতর্কতাই ভয়াবহ প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এই ধরনের দুর্ঘটনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর কান্না-হাহাকারে দেশ শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। আগুনে পুড়ে যাওয়া শ্রমিকদের অধিকাংশই নিম্নআয়ের মানুষ, যাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তারা। তাদের মৃত্যু মানে একেকটি পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাওয়া।
এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন জাগে- আর কতো মৃত্যু দেখবে এই জাতি? কতবারই বা ‘তদন্ত কমিটি’ আর ‘প্রতিশ্রুতি’র কথা শুনতে হবে? এখনই সময় বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার। অবৈধ রাসায়নিক গুদাম বন্ধ করা, কঠোর নিরাপত্তা নীতিমালা প্রণয়ন ও তার কঠোর বাস্তবায়ন ছাড়া এই মৃত্যুর মিছিল থামানো সম্ভব নয়।
প্রতিটি মানুষের জীবনই অমূল্য এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাই সরকারের উচিত এই ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে ভবিষ্যতে কেউ অবহেলা করে এমন ঝুঁকি নিতে না পারে। অন্যথায় মিরপুরের মতো আরও অনেক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা এই জাতিকে কাঁদাবে, আর আমরা বারবার প্রশ্ন করবো-“আর কতো মৃত্যু দেখবে এই জাতি?”
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org