দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শীতের কারণে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়, যে কারণে ত্বক হয়ে পড়ে রুক্ষ, নিষ্প্রাণ এবং খসখসে। অনেকের ক্ষেত্রে শীতকালে ত্বক ফেটে যাওয়া, চুলকানি, লালচে দাগ ও অতিরিক্ত টানটান ভাব দেখা যায়।

তাই বছরের অন্য সময়ের তুলনায় শীতে ত্বকের বাড়তি যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সঠিক পরিচর্যা এবং জীবনযাপনের সামান্য পরিবর্তন শীতের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করতে পারে।
ত্বক পরিষ্কার এবং ময়েশ্চারাইজিং হলো শীতের স্কিনকেয়ারের মূল ধাপ। শীতকালে অতিরিক্ত ফোমিং বা শক্ত সাবান ব্যবহার না করাই ভালো। এগুলো ত্বকের প্রাকৃতিক তেল শুষে নেয়, ফলে ত্বক আরও বেশি শুষ্ক হয়। এর পরিবর্তে অয়েল-বেসড বা ক্রিমি ক্লিনজার ব্যবহার করা উচিত। মুখ ধোয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার লাগালে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখা সহজ হয়। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, হাইয়ালুরনিক অ্যাসিড, সেরামাইড এবং গ্লিসারিনযুক্ত ময়েশ্চারাইজার শীতের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
সানস্ক্রিন ব্যবহারকে কখনোই অবহেলা করা যাবে না। অনেকেই মনে করেন শীতে সূর্যের তাপ কম থাকায় সানস্ক্রিনের প্রয়োজন নেই, যা ভুল ধারণা। শীতকালেও অতিবেগুনি রশ্মি ত্বককে ক্ষতিগ্রস্ত করে, ফলে ত্বকের বয়স দ্রুত বাড়তে পারে। তাই রোদলা বা মেঘলা- যে কোনো আবহাওয়াতেই SPF 30 বা তার বেশি সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি।
পর্যাপ্ত পানি পান ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শীতে তৃষ্ণা কম লাগে বলে অনেকেই পানি পান কমিয়ে দেন। এতে দেহে পানি শূন্যতা তৈরি হয় এবং ত্বক হয়ে পড়ে আরো শুষ্ক। প্রতিদিন কমপক্ষে ৬–৮ গ্লাস পানি পান করলে ত্বক থাকে সতেজ ও উজ্জ্বল। পাশাপাশি ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল-মূল খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
গরম পানিতে বেশি সময় গোসল করা থেকে বিরত থাকা উচিত। অনেকে শীতে দীর্ঘ সময় গরম পানিতে গোসল করতে পছন্দ করেন, তবে এটি ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট করে। তাই গরম পানির বদলে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা ভালো এবং গোসলের পর সঙ্গে সঙ্গে বডি লোশন ব্যবহার করলে ত্বক নরম থাকে।
এ ছাড়াও ঠোঁট ফেটে যাওয়া ঠেকাতে লিপ বাম, হাত-পায়ের শুষ্কতা রোধে নিয়মিত হ্যান্ড ক্রিম এবং ফুট ক্রিম ব্যবহার করা উচিত। রাতে ঘুমানোর আগে অলিভ অয়েল, নারকেল তেল কিংবা বাদাম তেল হালকা করে মালিশ করলে ত্বক দীর্ঘক্ষণ আর্দ্র থাকে।
শীতকালে সুস্থ ত্বক বজায় রাখতে প্রয়োজন নিয়মিত যত্ন, পর্যাপ্ত ঘুম এবং সুষম খাদ্যাভ্যাস। এই ৩টি বিষয় মেনে চললে ত্বক থাকবে কোমল, উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যকর- শীতের প্রতিকূলতা কোনোভাবেই ক্ষতি করতে পারবে না।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org