দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ তিল আমাদের পরিচিত একটি পুষ্টিকর বীজ, যা ছোট হলেও এর গুণাগুণ অত্যন্ত বিস্ময়কর। কালো তিল, সাদা তিল বা লাল তিল- সব ধরনের তিলেই রয়েছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন, খনিজ, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

বহু শতাব্দী ধরে তিল ভেষজ চিকিৎসা, রান্না ও পুষ্টির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিয়মিত তিল খেলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক তিল স্বাস্থ্যের জন্য কী কী উপকার করে।
তিলের কথা উঠে আসলেই বলতে হয় তিলের স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের কথা। এতে রয়েছে মনোআনস্যাচুরেটেড ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, যা হৃদ্স্বাস্থ্যে অত্যন্ত উপকারী। এসব ফ্যাট রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে সাহায্য করে এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ায়। ফলে রক্তনালীর সুরক্ষা বৃদ্ধি পায় এবং হৃদ্রোগ, স্ট্রোক ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে। বিশেষ করে কালো তিলে থাকে ‘সেসামিন’ ও ‘সেসামোলিন’ নামক যৌগ, যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং হৃদ্যন্ত্রকে সুস্থ রাখে।
হাড় ও দাঁতের জন্যও উপকারী
তিল হাড় ও দাঁতের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। এতে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস ও জিঙ্ক রয়েছে, যা হাড়কে মজবুত করতে ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে নারীদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়ে। নিয়মিত তিল খেলে হাড়ক্ষয় ও হাড়ের দুর্বলতা কমানো সম্ভব। শিশুদের বৃদ্ধি এবং দাঁতের মজবুতি বাড়াতেও তিল কার্যকর।
প্রোটিন ও ফাইবার
তিলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন ও ফাইবার। এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরতি রাখতে সাহায্য করে, ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফাইবার হজমশক্তি বাড়ায়, কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। যাদের হজমের সমস্যা, তাদের জন্য তিল হতে পারে একটি প্রাকৃতিক সমাধান।
ত্বক ও চুলের যত্নে তিল
তিলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো ত্বক ও চুলের যত্নে এর ব্যবহার। তিল তেল ভিটামিন–ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা ত্বককে আর্দ্র রাখে, বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে এবং সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেয়। চুলে তিল তেল ব্যবহারে খুশকি কমে, চুল মজবুত হয় এবং চুল পড়া কমে।
এ ছাড়াও তিলে থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, যা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে কার্যকর। ম্যাগনেশিয়াম শরীরকে রিলাক্স করে, চাপ কমায় এবং ঘুমের মান উন্নত করে। তিলে থাকা বি–ভিটামিন স্নায়ুর কার্যক্রম উন্নত করে এবং শরীরকে শক্তি জোগায়।
ছোট্ট এই বীজটি পুষ্টিগুণে ভরপুর। দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় সামান্য পরিমাণ তিল বা তিল তেল যোগ করলেই শরীর পায় অসংখ্য উপকার। তবে অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়- স্বাস্থ্যের জন্য পরিমাণ বুঝে নিয়মিত খেলে তিল হতে পারে এক মূল্যবান পুষ্টির উৎস।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org