দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ছোট মাছ যেমন- মলা, কাচকি, পুঁটি, টেংরা, তিনকাটা, খরে ইত্যাদি মাছ বাংলাদেশের খাদ্যসংস্কৃতিতে বিশেষ স্থান অধিকার করে। কেবল স্বাদেই নয়- পুষ্টিগত দিক থেকেও ছোট মাছ অত্যন্ত দামি।

এই প্রতিবেদনে ছোট মাছ খাওয়ার কারণ, এ থেকে যে পুষ্টিগুণ পাওয়া যায় এবং জনস্বাস্থ্যে তার সম্ভাব্য ভূমিকা সংক্ষেপে আলোচনা করা হচ্ছে।
ছোট মাছ প্রোটিনের এক উৎকৃষ্ট উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোট মাছেই উচ্চমানের সম্পূর্ণ প্রোটিন থাকে যা শরীরের টিস্যু গঠনে, এনজাইম এবং হরমোন নির্মাণে অপরিহার্য। বিকল্প হিসেবে মাংস বা ডিমের দামের তুলনায় অনেক সময় ছোট মাছই স্বল্পমূল্যে বেশি প্রোটিন সরবরাহ করে, ফলে আয়োজনগতভাবে সুবিধাজনক।
ছোট মাছগুলিতে অতিপ্রয়োজনীয় অমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (বিশেষত ইকোসাপেন্টেনোইক অ্যাসিড — EPA ও ডোকোসাহেক্সানোইক অ্যাসিড — DHA) থাকে। এই ফ্যাটি অ্যাসিড হার্ট-অ্যান্ড-ভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি কমায়, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং শিশু ও গর্ভবতী নারীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। ছোট মাছ সম্পূর্ণ কেটে বা হাড়সহ খাইলেই ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের প্রাপ্যতা বাড়ে — যা হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ।
ছোট মাছ ভিটামিন ও খনিজে সমৃদ্ধ। ভিটামিন-D এর উপস্থিতি ক্যালসিয়ামের শোষণ বাড়ায়; ভিটামিন-B12 মেরুদণ্ড ও নার্ভ সিস্টেমের স্বাভাবিক কার্যাবলিতে সহায়ক; এছাড়া আয়রন, জিংক, সেলেনিয়াম ইত্যাদি সূক্ষ্ম খনিজের উৎস। গ্রামীণ এলাকায় যেখানে পুষ্টিহীনতা ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট অভাব সাধারণ, সেখানে ছোট মাছের নিয়মিত ব্যবহার শিশুদের বৃদ্ধির সমস্যা ও অ্যানিমিয়ার ঝুঁকি হ্রাসে কার্যকর।
ছোট মাছের পরিবেশগত ও সামাজিক-অর্থনৈতিক সুবিধা রয়েছে। তারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়, কম খরচে চাষ করা যায় এবং স্থানীয় মৎসজীবীদের আয় সুরক্ষা দেয়। তুলনায় বড় বাণিজ্যিক মাছের চাহিদা এবং খরচ বেশি; ছোট মাছের প্রচলন খাদ্যনিরাপত্তায় সহায়ক হতে পারে।
তবে কিছু সাবধানতা প্রয়োজ: খাঁজ-অবশিষ্ট দানাদার হাড় ছোট বাচ্চাদের জন্য শ্বাসরোধের ঝুঁকি বাড়াতে পারে—সঠিকভাবে কাটা/কুঁচি করে দেওয়া উচিত। এছাড়া নদী বা জলাশয় থেকে ধরা মাছ যদি দূষিত পানিতে থাকে তবে ভারী ধাতু বা দূষক থাকতে পারে — তাই নিরাপদ উৎস নিশ্চিত করা জরুরি।
ছোট মাছ সুস্থ, সাশ্রয়ী ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য। প্রোটিন, অমেগা-৩, ভিটামিন এবং খনিজের সংমিশ্রণে এটি পরিবারিক ও জনস্বাস্থ্যস্তরে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। স্বাস্থ্যনীতি ও স্থানীয় প্রচারণার মাধ্যমে ছোট মাছের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ালে পুষ্টি নিরাপত্তা এবং দারিদ্র্য হ্রাসেও তা কার্যকর অবদান রাখবে।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org