দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ঢাকা চিড়িয়াখানায় গেলে উটপাখি দেখা যাবে। কিন্তু এই উটপাখি কত বড় বা কেমন ডিম পাড়ে তা কিন্তু আমরা জানি না। উপপাখির ডিম নিয়েই রচিত হয়েছে আজকের চিত্র-বিচিত্র।
পৃথিবীর মানচিত্র কেমন তা কিন্তু আমরা জানি। কিন্তু যুগে যুগে এই মানচিত্র নিয়ে হয়েছে বহু বিতর্ক। এক এক জন এক এক ভাবে উপস্থাপন করেছেন যার যার ধ্যান ধারণা। কিন্তু এবারের পৃথিবীর মানচিত্র নিয়ে বিতর্কে এসেছে উটপাখির ডিম।
এবারের বিতর্কে রয়েছে উটপাখির একটি ডিম। হয়তো বিষয়টি শুনতে আপনাদের অবাক লাগলেও পারে কিন্তু বিষয়টি সত্যি। উটপাখির এই ডিমটা একেবারে সাদামাটা নয়। উটপাখির এই ডিমের মধ্যে আঁকা রয়েছে পৃথিবীর মানচিত্র। আর গবেষকদের কে ঠেকায়! গবেষকরা ধরেই নিয়েছেন, এটাই হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন মানচিত্র। এটি মানচিত্র আবার একটি ভূ-গোলকও। একজন অস্ট্রিয়ান সংগ্রাহক খুঁজে পেয়েছেন এটি। এই মানচিত্রটি তৈরি হয়েছিল ৮ হাজার বছর আগে ১৫০৪ সালে। এমনকি ওই মানচিত্রে পৃথিবীর নতুন নতুন আবিষ্কৃত অঞ্চলসহ বিভিন্ন দেশ ও এলাকার উল্লেখ রয়েছে।
ভূ-গোলকটি বানানো হয়েছে ২ টুকরো উটপাখির ডিমের খোলস জোড়া লাগিয়ে। এমনকি ল্যাটিন অক্ষরে এতে জাপান, আরব বা মধ্যপ্রাচ্য ও ব্রাজিলের বিভিন্ন এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। আবার উত্তর আমেরিকাকে দেখানো হয়েছে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিছু দ্বীপের সমষ্টি হিসেবে। অন্যদিকে দক্ষিণ আমেরিকার মাত্র ৩টি স্থানকে দেখানো হয়েছে ভূ-গোলকটিতে।
আর আশ্চর্যের বিষয় হলো এলাকাগুলোর উপর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ঐরপ ঝঁহঃ উৎধপড়হবং নামে একটি বাক্যও লেখা রয়েছে। এর অর্থ দাঁড়ায়, এখানে ড্রাগন আছে।
ওয়াশিংটন ম্যাপ সোসাইটির জার্নাল ‘পোর্টোলান’-এর সম্পাদক থমাস স্যান্ডার বলেন, ‘এরকম অনেক কৌতূহল জাগানো বিষয় রয়েছে ভূ-গোলকটিতে। প্রাচীন এই ভূ-গোলকটিতে সাগরদানব বা সি-মনস্টারের ছবিও রয়েছে। এসব ছবি দিয়ে বোঝানো আবার হয়েছে সাগরের ওই এলাকাগুলো বিপজ্জনক। এই ভূ-গোলকটি নিয়ে গবেষণা করছেন স্টেফান মিসিন। তার ধারণা, সাগরদানবের ছবি দিয়ে আসলে সমুদ্রের ওই সব বিপজ্জনক স্থানগুলোকে নির্দেশ করা হত যেখানে বিশাল বিশাল বাণিজ্যিক ও যাত্রীবাহী জাহাজ প্রায়ই ডুবে যেতো- সে কারণে। আর তাই ভূ-গোলকের অনেক জায়গায় ডুবন্ত জাহাজে নাবিকদের ছবিও আঁকা রয়েছে।
গবেষকদের ধারণা, ভূ-গোলকটি বিখ্যাত চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ওয়ার্কশপ থেকে কোনোভাবে হারিয়ে গিয়েছিল। কারণ ভূ-গোলকের উপর প্রস্তুতকারীর নাম নেই। অনেকের ধারণা, ভিঞ্চির সময়কারই কেও সাগর ঘুরে আসা নাবিকদের কাছ থেকে দেশ-দেশান্তরের ব্যাপারে ধারণা নিয়ে ইতালির কোনো অভিজাত ব্যক্তিকে উপহার দেয়ার জন্যই হয়তো ভূ-গোলকটি বানিয়ে নিয়েছিলেন। তাছাড়া ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, তখনকার অভিজাত ব্যক্তিরা নিজের বাড়ির বাগানে উটপাখি লালন-পালন করতেন। উটপাখি পালনের বিষয়টা ছিল তাদের জন্য একদিকে সম্মানের অন্যদিকে গর্বের।
গবেষকরা মনে করছেন, এই ভূ-গোলকটি হস্তান্তর হতে থাকে এক পরিবার থেকে আরেক পরিবারে। অবশেষে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় চরম অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আরো অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিসের সাথে এটিও হয়তো বিক্রি হয়ে যায়।
গতবছর একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি লন্ডনের এক মানচিত্র মেলা থেকে ভূ-গোলকটি কেনেন। এরপর এটি মিসিনের হাতে আসে। অবশ্য মিসিন কিভাবে কোথায় এটি পেয়েছেন তা কাওকে বলেননি।
অবশ্য এটিকে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ওয়ার্কশপের সাথে সম্পর্কহীন বলে দাবি করেছেন কেও কেও। আবার কেওবা বলছেন, এই ভূ-গোলকটি নিশ্চয়ই মিসিনের কাছেই ছিল।
তবে এই ভূ-গোলকটি মিসিনের হোক আর যারই হোক না কেনো- প্রাচীন দুনিয়ার অনেক অজানা তথ্য জানা গেছে এই উটপাখির ডিম মানচিত্র থেকে। সৌজন্যে: দৈনিক যুগান্তর।