দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক॥ এই মাত্র খবরে জানা গেছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধ অপরাধ এবং মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে প্রথম কোন আসামী হিসেবে আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০ টা ১ মিনিটে ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। কাদের মোল্লার লাশ পরিবার সদস্যদের বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে কারাকর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
আপডেট: রাত ৪:৩০
রাত ৩টা ১০ মিনিটে কাদের মোল্লার লাশ গ্রামের বাড়ির ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ভাসানচর ইউনিয়নের আমিরাবাদ এসে পৌঁছালে তা গ্রহণ করেন তার ছোট ভাই মাইনুদ্দিন মোল্লা। পরে কড়া নিরাপত্তায় বাড়ির উঠানে অনুষ্ঠিত হয় নামাজে জানাজা। সবশেষে শেষ ইচ্ছা অনুসারে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয় কাদের মোল্লাকে। রাত ৪টা ১০ মিনিটে দাফন শেষে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের গাড়ি বহর।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে, কাদের মোল্লাকে মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধের জন্য আনীত ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটিতে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার স্বাধীনতাবিরোধী বাহিনী আল বদরের সদস্য মোল্লাকে ৩৪৪ জন নিরীহ ব্যক্তি হত্যা ও অন্যান্য অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এতে কেবল আসামী পক্ষের সুযোগ থাকায় এবং রাষ্ট্রের আপিলের সুযোগ না থাকায় রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করতে পারেনি। কিন্তু পরবর্তীতে দেশ ব্যপি তুমুল আন্দোলনের মুখে পরে সরকার আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল এক্ট পরিবর্তন করে সেখানে রাষ্ট্র পক্ষের আপিল করার অধিকার সংযুক্ত করে এবং এর ফলে রাষ্ট্র পক্ষ সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে।
অবশেষে দীর্ঘ শুনানি শেষে ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সালে সর্বোচ্চ আদালত মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় যাবজ্জীবন করাদণ্ডের পরিবর্তে মৃত্যুদণ্ডাদেশের নির্দেশ দেন।
কাদের মোল্লা পূর্ণ নাম আব্দুল কাদের মোল্লা যিনি ১৯৪৮ সালে ফরিদপুরের আমিরাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম সোনা মিয়াঁ মোল্লা। ১৯৭১ সালে জামায়াত নেতারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে কারণ তারা বিশ্বাস করত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশকে ভাগ করে আলাদা করলে এটি ইসলামের বিরুদ্ধে যাবে। সুতরাং ইসলামি ছাত্র সংঘের সদস্য হিসেবে কাদের মোল্লা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আধাসামরিক বাহিনী আলবদরে যোগ দেন। সে সময়ে পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে সাথে হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের এবং সর্বোপরি মানবতাবীরোধী অপরাধের সাথে নিজেকে জড়ান কাদের মোল্লা। কিন্তু বাংলাদেশ যুদ্ধে জয় লাভ করে স্বাধীনতা অর্জন করে ও নতুন সরকার রাজনীতি থেকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে তৎকালীন দেশের প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হলে সে সময়ে জিয়াউর রহমান সরকার জামাতের রাজনীতি আবার বাংলাদেশে পুনর্বাসিত করলে কাদের মোল্লা আবার জামাতের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন।
এবার চলুন জেনে নিই কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনিত যুদ্ধ অপরাধ সমূহ কি কি ছিলঃ
- ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল তার নির্দেশে মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
- ২৭ মার্চ কাদের মোল্লা ও তার সহযোগীরা মিরপুরে কবি মেহেরুননিসা, তার মা এবং দুই ভাইকে তাদের নিজ বাসায় হত্যা করেন।
- ২৯ মার্চ আরামবাগ থেকে সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবকে অপহরণ করে নিয়ে যান এবং পাম্পহাউস জল্লাদখানায় জবাই করে হত্যা করেন।
- ১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর কাদের মোল্লা রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে কেরানীগঞ্জের ভাওয়াল খানবাড়ি এবং ঘাটারচরে শতাধিক গ্রামবাসীকে হত্যা করেন। রায়ে বলা হয়, প্রসিকিউশন এই অভিযোগ প্রমান করতে পারেননি।
- ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে মিরপুরের আলোকদী গ্রামে অভিযান চালিয়ে ৩৪৪ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করেন।
- ২৬ মার্চ কাদের মোল্লা ও তার সহযোগীরা মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনে হযরত আলী লস্করের বাসায় গিয়ে লস্করের স্ত্রী, দুই মেয়ে, দুই বছরের এক ছেলেকে হত্যা করেন এবং তাতে লস্করের ১১ বছরের এক মেয়ে ধর্ষণের শিকার হন। যেখানে কাদের মোল্লা নেতৃত্ব দেন।
কাদের মোল্লা বিষয়ক অপরাধ সূত্রঃ উইকিপিডিয়া