দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া এবং একাই নির্বাচন করা এমন এক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গোটা দেশ নিমজ্জিত। আওয়ামীলীগ ও বিএনপি উভয় দলই এক অজানা আশঙ্কা ‘যুযু’র ভয়ে ভীত হয়ে দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন এক অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে।
দেশের শীর্ষ দুটি দলের এই ‘যুযু’ নামক বস্তুর ভয়ে সাধারণ মানুষ আজ দিশেহারা। কবে এই সমস্যা থেকে জনগণ নিষ্কৃতি পাবে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। কারণ বিরোধী দল ছাড়া আওয়ামীলীগ সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার দোহাই দিয়ে যে নির্বাচন করতে যাচ্ছে, সে নির্বাচনের পর দেশ কোন পরিস্থিতিতে নিপতিত হবে তা নিয়েও জনগণ এখন শঙ্কিত। জনগণের একটা প্রত্যাশা ছিল, দেশের বড় দুটি দলের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একটা সুষ্ঠু সমাধান হবে। উভয় দল মিলে নির্বাচন করবে এবং দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটছে তার উল্টো। একদলীয় নির্বাচনের ফলে রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ হওয়ার কোন পথ দেখা যাচ্ছে না।
আওয়ামীলীগের ধারণা ছিল, নিরপেক্ষ ব্যক্তির অধীনে নির্বাচন দিলে তাদের পরাজয় ঘটবে। আর তাদের পরাজয় ঘটলে যুদ্ধাপরাধীরা ছাড়া পেয়ে যাবে। যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন হয়তো আরও জ্বলে উঠবে। সেক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ ও তাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা থেকে শুরু করে নানা সমস্যায় পড়তে হবে। তাদের মধ্যে এমন ভয়ের যাকে আমরা বলছি- ‘যুযু’র ভয়। সেই ‘যুযু’র ভয়েই আওয়ামীলীগ নির্দলীয় সরকারের পদ্ধতি থেকে সরে এসেছেন। অথচ তারা আন্দোলনের এমন পরিস্থিতি হওয়ার আগে একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তির অধীনে নির্বাচন দিলে হয়তো তারা জিতেও আসতে পারতেন। কারণ সামপ্রতিক সময়ে যুদ্ধাপরধী ইস্যুতে বিএনপির অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। কিন্তু ওই ‘যুযু’র ভয় তাদের তাড়া করে ফিরছে।
অপর দিকে বিএনপিও পাচ্ছে সেই ‘যুযু’র ভয়। বিএনপি ভাবছে আওয়ামীলীগের অধীনে নির্বাচন করলে কারচুপির মাধ্যমে তাদের হারিয়ে দিয়ে আওয়ামীলীগ ক্ষমতা গ্রহণ করবে। তখন একুল-ওকুল দুইই যাবে। অথচ এখন যুদ্ধাপরাধী ইস্যু থাক বা না থাক দেশের অন্তত ৮০ ভাগ মানুষ চায় নিরপেক্ষ ব্যক্তির অধীনের নির্বাচন হোক। আর তাই আওয়ামীলীগের অধীনেও নির্বাচনে গেলে বিএনপির জয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এখন আধুনিক যুগ। এখন দেশে এতগুলো টিভি চ্যানেল। সবদলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হলে দেশি-বিদেশী এতো পরিমাণ পর্যবেক্ষক থাকতো সেখানে কারচুপি করাটা বড়ই কঠিনসাধ্য হতো। সেক্ষেত্রে নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনাকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু এখানেও সেই একই কাহিনী- ‘যুযু’র ভয়। যদি কারচুপি করে ক্ষমতা নিয়ে নেওয়া হয়, সে ভয়।
অপর দিকে বিরোধী দল ইচ্ছে করলে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে পারে। কারণ দেশের বেশিরভাগ জনগণ নিরপেক্ষ ব্যক্তির অধীনে নির্বাচন করতে চায়। বিরোধী দল যদি সহিংসতা পরিহার করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ডাক দেয় তাহলে এদেশের সাধারণ জনগণ তাদের পাশে দাঁড়াতো। গতকাল বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেখা গেছে, দূরপাল্লার বাস চলাচলের কথা। বাস চলছে -অথচ যাত্রী নেই। কারণ জনগণও বিরোধী দলের সঙ্গে থাকতে চান। কিন্তু হিংসাত্মক কর্মসূচি পরিহার করতে হবে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি হলে সত্যিকারভাবে এদেশের লক্ষ-কোটি জনগণ রাস্তায় নেমে আসতো।
উভয় দলের এমন এক পরিস্থিতি এদেশকে আজ নিয়ে গেছে সহিংসতার সর্বশীখরে। যার কোন মাপকাঠি নেই। আসলে ৫ জানুয়ারি এবং তার পরবর্তী সময়ে দেশ কোন দিকে ধাবিত হবে তা নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষ বড়ই চিন্তিত। এক অজানা আশঙ্কায় মানুষের চোখের ঘুম হারাম হতে বসেছে। ত্রিশ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে, প্রায় ৩ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীন সার্বভৌম যে রাষ্ট্র ১৯৭১ সালে আমরা পেয়েছিলাম, সেই রাষ্ট্রের স্বাধীন নাগরিক হয়ে আজ আমরা যাযাবরের মতো, ভয়ে ভীত হয়ে চলাফেরা করছি। বড়ই করুণ আমাদের দেশের জনগণের পরিণতি! এখন সময় এসেছে এদেশের মানুষকে আবার মাঠে নামার। সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড সব কিছু পরিহার করে শান্তির পথে রাজনৈতিক দলগুলোকে ফিরিয়ে আনা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সরকারি দলের একগুয়েমি এবং বিরোধী দলের হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড দুটিকেই আমরা তিরষ্কার করি। সকলের শুভবুদ্ধির উদয় হোক এ কামনা করি।