ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সামপ্রতিক সময়ে নিখোঁজ ঘটনা যেনো নিত্য দিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এই নিখোঁজ ঘটনা যে শুধু রাজধানী ঢাকাতে তা নয়, এই নিখোঁজ ঘটনা এখন মফস্বল শহরগুলোতেও ঘটছে। ইতিপূর্বে আমরা সংবাদ পেয়েছিলাম রাজশাহী ও নাটোরের ঘটনা। আজ পেয়েছি বগুড়ার ঘটনা। দুমাস ধরে নিখোঁজ রয়েছে বগুড়ার ৯ ব্যক্তি।
খবরে জানা যায়, বগুড়ার শিবগঞ্জের কয়েকটি গ্রাম থেকে স্বল্প খরচে মালয়েশিয়া যাওয়ার নামে ৯ ব্যক্তি বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর গত দু’মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। দালাল চক্রের চার সদস্য তাদের চোরাপথে জাহাজে পাঠাবে বলে নিয়ে যায়। তারা কোথায় আছে, জীবিত না মৃত এ ব্যাপারে পরিবারের সদস্যরা কিছুই জানেন না। কেও বলছেন, তাদের পাচার করা হয়েছে। আবার কেও বলছেন, সাগরে ডুবে মারা গেছে। দালালরা এলাকায় ফিরলেও তারা তাদের সন্ধান দিতে পারছে না। একপর্যায়ে তারা আত্মগোপন করলেও নিখোঁজদের পরিবারকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। স্বজনদের মধ্যে আহাজারি চললেও অভিযোগ না করায় স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা তাদের উদ্ধারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন- শিবগঞ্জের কিচক ইউনিয়নের চল্লিশছত্র গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে আহসান হাবিব (২৫), রবিউল ইসলামের ছেলে সাদ্দাম হোসেন (২০), ফজলুর ছেলে জামাল উদ্দিন (২১) ও আছির উদ্দিনের ছেলে শাহ জামাল আকালু (২৮), উত্তর বেলাই গ্রামের রাজা মিয়ার ছেলে রাজু মিয়া (২২) ও চলগাড়ি গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে ফজলুল বারী (২৮), হাবিবুর রহমানের ছেলে ফাইজার আলী (৩৪), বাগজানা দরগাপাড়ার ফজল মিয়া (২৫) এবং জাহিদুল ইসলাম (৩৫)।
জানা গেছে, ওই ৯ ব্যক্তিকে মাসে ২০ হাজার টাকা বেতনে মালয়েশিয়া পাঠাতে একই এলাকার রমজান আলীর ছেলে মিস্টার, আকবার আলীর ছেলে দেলবর, শাহ্ আলম ও মোহাম্মদ আলী প্রস্তাব দেয়। বিনিময়ে জনপ্রতি ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। অনেক কষ্টে তারা টাকা পরিশোধ করেন। এদের চট্টগ্রামের সমুদ্রবন্দর দিয়ে চোরাপথে জাহাজে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা ছিল। দালালরা গত ২৫ এপ্রিল রাতে তাদের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। তিনদিন পর মালয়েশিয়া পৌঁছার পর যোগাযোগ করার কথা ছিল। কিন্তু দুই মাস পেরিয়ে গেলেও স্বজনরা তাদের কোন সন্ধান পাননি। ৬-৭ দিন পর দালাল চক্রের সদস্য মিস্টার ও দেলবর এলাকায় ফিরে আসে। তারা জানায়, ওদের চট্টগ্রামে রেখে এসেছে। সেখান থেকে শিগগিরই মালয়েশিয়া যাবে। চাপ দেয়া হলে একপর্যায়ে দালাল দেলবর, মিস্টার ও শাহ্ আলম আত্মগোপন করে। সেখান থেকে স্বজনদের ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। পুলিশ প্রশাসনকে বললে আহসান, জামাল ও অন্যদের লাশ আসবে বলে হুমকি দেয়। পরে মোহাম্মদ আলী হূদরোগে মারা যায়। আহসান হাবিবের বাবা আফজাল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, একই গ্রামের মিস্টার তার ছেলেকে বিদেশে মোটা অংকের বেতনে চাকরি দেয়ার কথা বলে একদিন রাতে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। তিনদিন পরে মোবাইল ফোনে কথা বলার কথা। মিস্টার বিষয়টি কাওকে বলতে নিষেধ করেছিল। আকালুর স্ত্রীও একই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, তার স্বামীকে জাহাজে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে মিস্টার। একদিন রাতে তাকে না জানিয়ে তিনি মিস্টারের সঙ্গে বাড়ি ছাড়েন। গত দু’মাস হল স্বামীর সন্ধান পাচ্ছেন না। এদিকে প্রায় দু’মাস অতিবাহিত হলেও ৯ ব্যক্তির খোঁজ না পাওয়ায় স্বজনরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাদের ধারণা, দালাল চক্রের সদস্য মিস্টার, দেলবর ও অন্যরা তাদের পাচার করেছে বা চোরাপথে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে। এলাকায় তোড়জোড় শুরু হলে দালাল মোহাম্মদ আলী হূদরোগে মারা যায়। নিখোঁজ পরিবারের সদস্যরা হুমকির ভয়ে বিষয়টি আজ পর্যন্ত পুলিশকে জানায়নি। গ্রামের প্রভাবশালী মাতবররাও দালালদের পক্ষ নিয়েছে। ২-৩ দিন আগে নিখোঁজ ফজলুল বারীর বাবা মকবুল হোসেন শিবগঞ্জ থানায় জিডি করেছেন। এ ব্যাপারে কিচক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন মোবাইল ফোনে জানান, তিনি এলাকার ৪-৫ জন যুবককে দালাল মিস্টার ও দেলবরের মাধ্যমে বিদেশে যাওয়ার কথা শুনেছেন। কিন্তু গত দু’মাস ধরে তাদের কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। পরিবার থেকে অভিযোগ না করায় তিনি কোন ব্যবস্থা নিতে পারেননি। শিবগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুর রহমান জানান, লোকমুখে এ খবর পাওয়ার পর গ্রামে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা আগ্রহ না দেখানোর কারণে কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না।
৯ ব্যক্তির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা যেহেতু জানাজানি হয়েছে, সেহেতু সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উচিত সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।