দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এরশাদকে নিয়ে ক’দিন ধরেই পত্র-পত্রিকা একেবারেই নিরব ছিল। সবাই বলছিলেন এরশাদকি আসলেও হাসপাতালেই আছেন নাকি অন্য কোথাও? এমন এক সমালোচনার মুহূর্তে খবর এলো এরশাদ সিএমএইচেই রয়েছেন। তবে তিনি গলফ খেলে, টিভি দেখে সময় কাটাচ্ছেন।
গত কয়েকদিন ধরেই এরশাদের কোন খবর মিলছিলো না। কারণ নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর নির্বাচন থেকে সরে আসার ঘোষণায় শুধু আওয়ামীলীগ নয়, সমগ্র বিশ্বজুড়ে শুরু হয় নতুন এক মেরুকরণ। দশম জাতীয় সংসদে এরশাদ না থাকার ঘোষণায় সবার দৃষ্টি নিবন্ধিত হয় নির্বাচনের দিকে। সরকারও বেশ বেকায়দায় পড়েন এরশাদকে নিয়ে। কারণ সর্বদলীয় মন্ত্রী পরিষদের সদস্য হিসেবে এরশাদের অর্থাৎ জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণও রয়েছে। এমন এক পরিস্থিতিতে এরশাদকে র্যাব হাসপাতালে নিয়ে যায়। প্রথমে গ্রেফতারের কথা বলা হলেও পরে বলা হয়, এরশাদ অসুস্থ তাকে সিএমএইচ এ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এরপর ঘটে গেছে অনেক ঘটনা। পানি গড়িয়েছে বহুদুর। গত এক সপ্তাহ এরশাদের কোন খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। কারণ বাইরের কোন হাসপাতালে থাকলে খবর পাওয়া সহজ ছিল। কিন্তু সিএমএইচ এ এমনিতেই সিকিউরিটির কারণে সাংবাদিকদের প্রবেশে বিধিনিষেধ রয়েছে। সে কারণে খবরা খবর বাইরের সূত্র ছাড়া সংগ্রহ করা সম্ভব নয়।
এমন এক পরিস্থিতিতে আজ আবার এরশাদ খবরে চলে এসেছেন। সংবাদ মাধ্যম সূত্র বলেছে, এরশাদ সিএমএইচে রয়েছেন। তিনি গলফ্ খেলে, টিভি দেখে সময় কাটাচ্ছেন। কারণ গলফ্ এরশাদের খুব প্রিয় একটি খেলা। তবে এমনও বলা হয়েছে, গলফ্ খেলা এরশাদের চিকিৎসারই অংশ। বিদায়ী বছরের শেষ দিকে যিনি প্রচণ্ড এক ঝড় তুলেছিলেন রাজনৈতিক অঙ্গনে। শুরু করেছিলেন নানা নাটকীয়তা। গ্রেফতার নাকি অসুস্থ এ নিয়ে এখনও রয়েছে ধূম্রজাল।
সংবাদ মাধ্যম বলেছে, সিএমএইচের ভিভিআইপি ওয়ার্ডে আছেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। ৩ তলায় অবস্থিত এই ভিভিআইপি ওয়ার্ডের নাম মেঘনা। এরশাদ ২০ দিনেরও বেশি সময় ধরে রয়েছেন এ ওয়ার্ডেই। তিনি নাকি খুব ভোরে উঠে হাঁটাহাটিও করেন সিএমএইচের মধ্যেই। মাঝে-মধ্যে নাকি যান গলফ খেলতে! পুরোদিনের বন্দিদশা কাটিয়ে উঠতে প্রায়ই নাকি রাতে কড়া নিরাপত্তায় হাঁটতেও বের হন সিএমএইচের নিয়ন্ত্রিত এলাকাতে।
সংবাদ মাধ্যম সূত্র আরও বলেছে, সিএমএইচে এরশাদের দেখভালে যুক্তদের করা রোডম্যাপের নাম দেয়া হয়েছে পার্ট ওয়ান। এই নিরাপত্তা রুটিং-এর আওতায় চলে এরশাদের চলাফেরা। সেই নিয়ম অনুযায়ী তার নিরাপত্তাকর্মীদেরও দায়িত্ব বণ্টন করা হয়। এসব তালিকায় রয়েছে মেসওয়েটার, এনসি(ই), ওয়ার্ডবয়, মেডিকেল এসিসট্যান্ট, কুক ওয়ার্ডবয়, সুইপার ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। অধিনায়ক সার্জিক্যাল উইংয়ের তত্ত্বাবধানে এরশাদের যাবতীয় চিকিৎসা কার্যক্রমও পরিচালিত হয়। ডিউটি আওয়ার শেষে দায়িত্বরতরা চিকিৎসা-সংক্রান্ত তথ্যাদি রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধও করেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সিএমএইচে চিকিৎসাধীন কেও কেও এরশাদকে সকালে হাঁটতে দেখেছেন। এ সময় সঙ্গে থাকেন এরশাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিযুক্ত কর্মকর্তা ও ডিউটিরত চিকিৎসক। ফিরেই হাতে পত্রিকা নিয়ে চোখ বুলান। ভিভিআইপি এই ওয়ার্ডে প্রতিদিনই পৌঁছে দেয়া হয় দৈনিক ইত্তেফাক, প্রথম আলো ও জনকণ্ঠ। পত্রিকা হাতে নিয়েই নাশতা সারেন। নিকটাত্মীয় ছাড়া কারও দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ নেই। তাই টেলিভিশন আর তিনটি পত্রিকা পড়া ছাড়া তেমন কিছুই করার নেই তাঁর।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত মুঠোফোন ব্যবহারের সুযোগ নেই। কখনও কোন জরুরি প্রয়োজনে অন্য কারও ফোন ব্যবহার করে থাকেন। সার্বক্ষণিক একটি রুটিন ওয়ার্কের মধ্যেই থাকেন।
উল্লেখ্য, ১২ ডিসেম্বর জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরের রাতেই এরশাদকে আটক করে র্যাব ১-এর একটি দল নিয়ে যায় সিএসএইচে। পরদিন এক বিবৃতিতে এরশাদ সংবাদ মাধ্যমকে জানান, তিনি অসুস্থ নন। গ্রেফতারের জন্যই তাকে আটকে রাখা হয়েছে। সেই বার্তায় তিনি দলের নেতাদের ধৈর্য ধরার এবং ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দেন। রওশন এরশাদ, ছেলে এরিখ ও প্রধান মন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী স্বপরিবারে সিএমএইচে যান এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে।
Bengali 
English